মােহাম্মদ সলিমউল্লাহ
মােহাম্মদ সলিমউল্লাহ ছিলেন সংস্কৃতিকর্মী ও সমাজসেবী। তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথেও যুক্ত ছিলেন। সলিমউল্লাহ বাস করতেন ঢাকার মােহাম্মদপুরের তাজমহল রােডে। ১৯৬৯ সালের গণআন্দোলনে এবং পরবর্তী সময়ে বাঙালির মুক্তিসংগ্রামের পক্ষে তার তৎপরতা অবাঙালিদের ক্ষুব্ধ করে তােলে। আর এ কারণেই ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ তার বাসায় অবাঙালিরা হামলা চালায় এবং তাঁকে হত্যা করে। শহীদ সলিমউল্লাহর ছেলে বিখ্যাত সঙ্গীতশিল্পী সাদী মহম্মদের স্মৃতিচারণ থেকে জানা যায়, ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ দুপুরে একদল অবাঙালি তাদের বাড়ি আক্রমণ করে। তারা থাকতেন ওই বাড়ির চারতলায়। তাদের বাসা লক্ষ্য করে গুলি চালানাে হয়, নিচতলায় আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। আত্মরক্ষার জন্য সবাই যে যেদিকে পারে পালাতে শুরু করেন। বাবার সাথে সাদী মহম্মদ পাশের এক বাড়ির বাথরুমে আশ্রয় নেন। সেখানেই একজন অবাঙালি তাকে পেছন থেকে ছুরি মারে।
সাদী তার বাবাকে জড়িয়ে ধরে বাচাতে চাইলেন, কিন্তু অবাঙালিদের আক্রমণের কথা ভেবে সলিমউল্লাহ তাকে বললেন, “আমি তাে মরেই যাচ্ছি। তুই বাঁচ। শীঘ্রি পালা।” বাবাকে ওই অবস্থায় রেখেই সাদী মহম্মদ পালিয়ে প্রাণে বেঁচেছেন। জানা গেছে, শহীদ সলিমউল্লাহকে আরও অনেকের সাথে মােহাম্মদপুর কবরস্থানে মাটিচাপা দেওয়া হয়। শহীদ মােহাম্মদ সলিমউল্লাহর স্ত্রীর নাম জেবুন্নেসা। তাদের সংসারে ছয় ছেলে ও চার মেয়ে ছিল। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তারা কোনাে ধরনের রাষ্ট্রীয় সহযােগিতা পাননি, আবেদন করেও পাননি। জেবুন্নেসা সেলাই করে সংসার চালিয়েছেন, ছেলেমেয়েদের মানুষ করেছেন। বাংলাদেশ সরকার শহীদ সলিমউল্লাহর ছবি সংবলিত একটি ডাকটিকিট প্রকাশ করে এবং ঢাকার মােহাম্মদপুরে তার নামে একটি সড়কের নামকরণ করে- ‘শহীদ সলিমউল্লাহ সড়ক।
সূত্র : শহীদ বুদ্ধিজীবী কোষ – আলী মাে. আবু নাঈম, ফাহিমা কানিজ লাভা