You dont have javascript enabled! Please enable it!
মােহাম্মদ শফিকুল আনােয়ার
মােহাম্মদ শফিকুল আনােয়ার ১৯৩৯ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি, নােয়াখালী জেলার ছাগলনাইয়া থানার পূর্ব ছাগলনাইয়া গ্রামে জন্ম নেন। তাঁর বাবার নাম মুন্সী হেরাজুল হক মজুমদার। হেরাজুল হক ছিলেন তৎকালীন পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একজন ঊর্ধ্বতন প্রকৌশলী। শফিকুল পূর্ব ছাগলনাইয়া বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক এবং কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাস করেন। তিনি ১৯৫৭ সালে শিক্ষানবিশ যন্ত্রকৌশল (এপ্রেন্টিস্ মেকানিক) হিসাবে তল্কালীন পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্স বা পি, আই. এ.-তে যােগ দেন। পাকিস্তান বিমান বাহিনীর করাচির ‘স্কুল অব এ্যারােনটিকস’ থেকে তিনি বিমান রক্ষণাবেক্ষণ সম্পর্কে তিন বছরব্যাপী বেসিক কোর্স সম্পন্ন করেন। এরপর আরও এক বছর হাতে-কলমে পি, আই. এ.-র এয়ারলাইন্স ট্রেনিং সেন্টারে বিভিন্ন এয়ারক্রাফটের উপর টাইপ ও ট্রেড কোর্স সাফল্যের সাথে সমাপ্ত করেন। ১৯৬১ সালে তিনি পাকিস্তান সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অ্যাপ্রুভ ইন্সপেক্টর হিসাবে অনুমােদন পান। ১৯৬৩ সালে এয়ার ক্রাফট মেইনটেন্যান্স ইঞ্জিনিয়ারিং লাইসেন্স পরীক্ষায় সাফল্যের সাথে পাস করে করাচিতে এয়ার ফ্রেম ট্রেডের প্রকৌশলী হিসাবে বােয়িং শাখার দায়িত্ব পালন। শুরু করেন। ১৯৬৫ সালের শুরুর দিকে তিনি ঢাকায় বদলি হয়ে আসেন। ১৯৭১ সালের মার্চ পর্যন্ত তিনি এখানেই কর্মরত ছিলেন।
১৯৭১ সালের মার্চে অসহযােগ আন্দোলন শুরু হলে শফিকুল আনােয়ার তাতে যুক্ত হন। পি. আই. এ.-র বাঙালি কর্মচারীরা অসহযােগের পূর্ণ একাত্মতা ঘােষণা করে আন্দোলনে নামে। তাদের বিভিন্ন মিছিল-মিটিং ইত্যাদি কর্মকাণ্ডের পুরােভাগের একজন ছিলেন শফিকুল। এ সময় পাকিস্তান সরকার তাকে বার বার চাকরিতে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দেয়। কিন্তু তিনি আর চাকরিতে ফিরে যাননি। ২৫ মার্চের পর তিনি গ্রামে চলে যান। সেখানে তিনি গ্রামের যুবক-তরুণদের মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে উৎসাহ দিয়েছেন। শফিকুল আনােয়ারের ছেলে সাইফুল আনােয়ারের স্মৃতিচারণ থেকে জানা যায়, ১৯৭১ সানের ২৮ অক্টোবর মুক্তিযুদ্ধের খবরাখবর সংগ্রহের জন্য শফিকুল পাশের লেমুসা বাজারে গিয়েছিলেন। সেদিন ছিল হাটবার। বিকাল ৫টার দিকে হাটের ভিড়ের মধ্যে হামলা চালায় পাকিস্তানিদের দোসর রাজাকার বাহিনী। পাশের কালিদহ ক্যাম্প থেকে পাকসেনারা এসে এই হামলায় যােগ দেয়। এতে বেশ কয়েকজন নিহত হন। আহত হন অসংখ্য মানুষ। ফেনী ট্রাঙ্করােড ও খদ্দর। রােডের সংযােগস্থলে (বর্তমানে এখানে এশিয়ান হাইওয়ে) রাজাকাররা শফিকুল। আনােয়ারকে গুলি করে হত্যা করে। সেদিন রাতে কারফিউ জারি থাকায় কেউ আর তাঁর খোজে যেতে পারেনি। পরদিন শুক্রবার খুব ভােরে রাস্তার পাশে ধানক্ষেতে মাথার পিছন দিকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় শফিকুল আনােয়ারের রক্তাক্ত লাশটি পাওয়া যায়। ৩০ অক্টোবর তার নিজ গ্রাম পূর্ব ছাগলনাইয়াতে তাকে সমাহিত করা হয়। মােহাম্মদ শফিক আনােয়ার তিন ছেলে ও এক মেয়ের বাবা ছিলেন। ওই সময় তাদের বয়স ছিল যথাক্রমে সাড়ে ছয়, পাঁচ ও দুই বৎসর এবং মাত্র বারাে দিন।

সূত্র : শহীদ বুদ্ধিজীবী কোষ –  আলী মাে. আবু নাঈম, ফাহিমা কানিজ লাভা

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!