You dont have javascript enabled! Please enable it! মাে. মুসলিমউদ্দীন মিয়া - সংগ্রামের নোটবুক
মাে. মুসলিমউদ্দীন মিয়া
মাে. মুসলিমউদ্দীন মিয়ার জন্ম টাঙ্গাইল জেলার গােপালপুর উপজেলার করিয়াটা গ্রামে, ১৯২৪ সালের আগস্ট মাসে। তাঁর বাবার নাম গহের আলী মিয়া।। মাে, মুসলিমউদ্দীন মিয়া ১৯৪৪ সালে ঝাওয়াইল মহারানী হেমন্তকুমারী হাই স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করে ভর্তি হন সিরাজগঞ্জ কলেজে। পরে তিনি কলকাতা যান ও ১৯৪৬ সালে রিপন কলেজ (বর্তমান সুরেন্দ্রনাথ কলেজ) থেকে আই. এ. পাস করেন। মুসলিমউদ্দীন প্রথমে কিছুদিন টাঙ্গাইল জেলার মধুপুর উপজেলার একটি স্কুলে শিক্ষক হিসাবে কাজ করেন। পরে ১৯৪৮ সালে তিনি ঝাওয়াইল রাজকুমারী সুরেন্দ্রবালা বালিকা বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসাবে যােগ দেন। মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তিনি এ বিদ্যালয়েই শিক্ষকতা করেছেন। ১৯৭১ সালে তিনি সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে দায়িত্ব পালন করছিলেন। তিনি সবার কাছে মুসলিম মাস্টার নামে পরিচিত ছিলেন। ১৯৪৮ সালে মুসলিমউদ্দীন যখন রাজকুমারী সুরেন্দ্রবালা বালিকা বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসাবে যােগ দেন, তখন সেটি একটি মাইনর স্কুল (নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়) ছিল। বিদ্যালয়ের ছাত্রী সংখ্যা বাড়ানাের জন্য তিনি বাড়ি বাড়ি ঘুরে ছাত্রী সংগ্রহ করেছেন। বিদ্যালয়টির উন্নতির জন্য তিনি এবং তার স্ত্রী দুজনেই বহুদিন বিনা বেতনে শিক্ষকতা করেছেন। পরবর্তীকালে বিদ্যালয়টি উচ্চ বিদ্যালয়ে উন্নীত করা হয়। মাে. মুসলিমউদ্দীন মিয়া শিক্ষকতার পাশাপাশি রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনেও সক্রিয় ছিলেন। তিনি কাওয়াইল ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ছিলেন। এছাড়া তিনি ঝাওয়াইল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও গােপালপুর থানা আওয়ামী লীগের কার্যকরী সংসদের সদস্য ছিলেন।
তাঁর অন্যান্য অবদানের মধ্যে আছে গ্রামে একটি ক্লাব, একটি মাদ্রাসা, একটি সমবায় সমিতি প্রতিষ্ঠা এবং একটি পাকা সেতু ও রাস্তা সংস্কার। ইউনিয়নের একটি কমিউনিটি সেন্টার প্রতিষ্ঠায় তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মুসলিমউদ্দীন ঝাওয়াইল ইউনিয়ন সংগ্রাম কমিটির সভাপতি ছিলেন। যুদ্ধ শুরু হলে তিনি মুক্তিযােদ্ধাদের নানাভাবে সাহায্য করেছেন, আশ্রয় দিয়েছিলেন। তিনি মুক্তিযােদ্ধাদের ভারতে ট্রেনিংয়ে পাঠানাের ব্যবস্থা করেছেন।  মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িত থাকা ও মুক্তিযােদ্ধাদের সহযােগিতা করার কারণে ১৯৭১ সালের ২৮ জুন পাক হানাদার বাহিনী মাে. মুসলিমউদ্দীন মিয়াকে গ্রেফতার করে। তার পরদিন ২৯ জুন তাকে হত্যা করা হয়। তার একমাত্র বসতবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়। মুসলিমউদ্দীন বিয়ে করেন ১৯৪৬ সালে। তিনি দুই মেয়ের বাবা ছিলেন।

সূত্র : শহীদ বুদ্ধিজীবী কোষ –  আলী মাে. আবু নাঈম, ফাহিমা কানিজ লাভা