You dont have javascript enabled! Please enable it! মাে. নূরুল ইমাম তুর্কী - সংগ্রামের নোটবুক
মাে. নূরুল ইমাম তুর্কী
মাে. নূরুল ইমাম তুর্কীর জন্ম ১৯৪৭ বা ১৯৪৮ সালে, রাজবাড়ী জেলার সদর থানার সূর্যনগর ইউনিয়নের বাগমারা গ্রামে। তার বাবার নাম খন্দকার আব্দুস সাত্তার, মায়ের নাম মেহেরুন্নেছা। দুই ভাই ও দুই বােনের মধ্যে তিনি ছিলেন তৃতীয়। তার পারিবারিক নাম খন্দকার আবু জাফর মাে. নূরুল ইমাম তুর্কী। নূরুল ইমাম তুর্কী ১৯৬২ সালে ফরিদপুর জিলা স্কুল থেকে দ্বিতীয় বিভাগে ম্যাট্রিক পাস করেন। ১৯৬৪ সালে রাজেন্দ্র কলেজ থেকে তিনি দ্বিতীয় বিভাগে আই, এসসি. পাসের পর ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন। ১৯৭০ সালে তিনি এম, বি. বি, এস, পাস করেন। মেডিকেলের ছাত্র থাকা অবস্থায় তুর্কী ১৯৭০ সালের ভয়াবহ জলােচ্ছাস ও ঘূর্ণিঝড় কবলিত দক্ষিণাঞ্চলে মেডিকেল টিমের সদস্য হিসাবে ত্রাণ কাজে অংশ নেন।
নূরুল ইমাম তুর্কী ১৯৭১ সালের ৩ মার্চ পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মেডিকেল কোরে যােগ দেন। তার নিয়ােগ হয় কুমিল্লা সেনানিবাসে অবস্থিত ৪০ ফিল্ড অ্যাম্বুলেন্সে। ১৯৭১ সালের ২৯ মার্চ পাকিস্তানি সেনাবাহিনী কুমিল্লা ময়নামতি ক্যান্টনমেন্টের বাঙালি অফিসার, সেনা ও বেসামরিক কর্মচারীসহ প্রায় ৩০০ ব্যক্তিকে আটক করে। এই ৩০০ জনের প্রায় সবাইকে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী হত্যা করে। তাদের লাশের কোনাে সন্ধান পাওয়া যায়নি।
শহীদ ডা, লে, খন্দকার নূরুল ইমাম তুর্কী অবিবাহিত ছিলেন। তাঁর নামে কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টে একটি রাস্তার নামকরণ করা হয়েছে। মাে. ফজলুর রহমান। মাে. ফজলুর রহমানের জন্ম ১৯৩৮ সালের ২৮ জুন, নরসিংদী জেলার কাজিরকান্দি গ্রামে। তার বাবার নাম তােরাব আলী। সাত ভাইবােনের মধ্যে ফজলুর রহমান ছিলেন তৃতীয়। ফজলুর রহমানের লেখাপড়া শুরু হয় গ্রামের স্কুলে। সলিমগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক পাস করার পর তিনি ঢাকার আহসানউল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে(বর্তমান বুয়েট) ভর্তি হন। ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করার পর ১৯৫৮ সালে তিনি গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীনে গৃহ সংস্থান পরিদফতরে যােগ দেন। তার তত্ত্বাবধানে ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে অনেক কলােনি নির্মিত হয়। ১৯৭১ সালে তিনি সৈয়দপুরে সাবডিভিশনাল ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে কর্মরত ছিলেন। সৈয়দপুর ক্যান্টনমেন্ট সম্প্রসারণ ও মেরামতের কাজও তিনি তত্ত্বাবধান করেন। তিনি সৈয়দপুর অফিসার্স ক্লাবের সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেছেন। তিনি এস্রাজ ও গিটার বাজাতে পারতেন।
সৈয়দপুর ছিল একটি অবাঙালি অধ্যুষিত এলাকা। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের আগে থেকেই সেখানে বাঙালিদের ওপর হামলা নির্যাতন শুরু হয়েছিল। ১৯৭১ সালের ২৩ মার্চ পাকবাহিনী তাকে বাসা থেকে ধরে নিয়ে যায়। তাকে একটি মাটির কুয়ার সামনে দাঁড় করানাে হয়। কুয়ার ভেতর তিনি অসংখ্য খণ্ড-বিখণ্ড লাশ দেখতে পান। কিন্তু কোনাে এক কারণে পাকসেনারা সেদিন তাকে ছেড়ে দেয়।
৩১ মার্চ গভীর রাতে পাকবাহিনী সৈয়দপুরে হানা দেয়। গােলাগুলির হাত থেকে রক্ষা পেতে ফজলুর রহমান তার স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে বাসার সামনে ট্রেঞ্চে আশ্রয় নেন। পরদিন দুপুরে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হলে তার ঘরে ফিরে আসেন। কিন্তু ওইদিন বিকালেই একজন ক্যাপ্টেনের নেতৃত্বে পাকিস্তানি সেনারা গুলি করতে করতে তাদের বাসায় হানা দেয়। তারা বন্দুকের মুখে মাে. ফজলুর রহমান, তার ছােট ভাই এম. বি. বি. এস. প্রথম বর্ষের ছাত্র রফিকুল ইসলাম, তার ভাগ্নে এস. এস. সি. পরীক্ষার্থী আনােয়ার হােসেন ও বাসার মালী রুহুল আমিনকে ধরে নিয়ে যায়। তাদের ধরে নিয়ে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর ফজলুর রহমানের স্ত্রী সুরাইয়া বেগম অনেক গুলির শব্দ শুনতে পান। সম্ভবত ওই গুলিতেই ফজলুর রহমানসহ অন্যদের হত্যা করা হয়। পরদিন ২ এপ্রিল পাকসেনারা সুরাইয়া বেগম ও তার দুই সন্তানকে সৈয়দপুর টেকনিক্যাল স্কুলে নিয়ে যায়। তিনি সেখানে অসংখ্যা বাঙালি নারী ও শিশু দেখতে পান। এই নারীদের পরিবারের পুরুক্ষ সদস্যদের মেরে ফেলা হয়েছে। সেখান থেকে তাদের সবাইকে বের করে দেওয়া হলে সুরাইয়া তার সন্তানদের নিয়ে তাদের পরিচিত শাহ আলমের বাসায় আশ্রয় নেন। অবাঙালিদের আক্রমণ থেকে বাঁচাতে শাহ আলম তাঁদের মাটির নিচের গর্তে লুকিয়ে রাখেন। এরপর বহু কষ্টে তিনি ঢাকায় চলে আসেন।

সূত্র : শহীদ বুদ্ধিজীবী কোষ –  আলী মাে. আবু নাঈম, ফাহিমা কানিজ লাভা