You dont have javascript enabled! Please enable it!
গােলাম সারােয়ার খান সাধন
গােলাম সারােয়ার খান সাধন ছিলেন সঙ্গীতশিল্পী। তাঁর জন্ম ও বেড়ে ওঠা পাবনায়। বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলনসহ প্রতিটি গণআন্দোলনে তিনি গান গেয়ে অংশ নিয়েছেন। ১৯৭০ সালের ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়-জলােচ্ছ্বাসের সময় ত্রাণ সংগ্রহের জন্য তিনি গলায় হারমােনিয়াম ঝুলিয়ে পাবনা শহরের রাস্তায় রাস্তায় গান গেয়েছেন। ১৯৭১ সালের অসহযােগ আন্দোলনের সময় শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক পরিকল্পিত সংগ্রামকালীন পতাকা হাতে নিয়ে নিজের লেখা গান গেয়েছেন : রক্ত সূর্য মাঝে সােনার বাংলা আঁকা। আমাদের দেশের চির সবুজ পতাকা। ১৯৭১ সালে সাধন ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের এম. এসসি, পূর্বভাগের ছাত্র। মার্চের শুরুতে তিনি পাবনায় চলে এসে মুক্তিবাহিনী গঠন ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেন। ২৫ মার্চের কালরাতের পর সাধন পরিবারের সবাইকে শহর থেকে গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। এরপর পাবনার পুলিশ ও তকালীন ই. পি, আর, সদস্যদের সহযােগিতায় বাঙ্কার বানিয়ে একদিন একরাত পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছেন। এ যুদ্ধে পাবনায় অবস্থিত সব পাকসেনাই নিহত হয়। পরবর্তীতে পাকসেনারা অধিক শক্তি নিয়ে পাবনা আক্রমণ করে। তখন সাধনসহ পাবনা মুক্তিযােদ্ধারা ভারতের দেরাদুনে চলে যান এবং সেখানে সামরিক প্রশিক্ষণ নেন। তিনি তাদের দলনেতা নির্বাচিত হন।
সামরিক প্রশিক্ষণ শেষে একদিন হঠাৎ স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে সাধনকে ডাকা হয় গান গাওয়ার জন্য। কিন্তু সাধন গান গাওয়ার পরিবর্তে বন্দুক হাতে যুদ্ধ করাকেই বেছে নিলেন। দেশে ঢুকে সাধন এবং তার বাহিনী ৫ মাসে বেশ কয়েকটি সফল অভিযান চালায়। ১৯৭১ সালের ৬ সেপ্টেম্বর এক নৈশ অভিযান শেষে ফেরার পথে নগরবাড়ির কাছে এক গ্রামে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন সাধন ও তার ক্লান্ত সঙ্গীরা। সেখানেই এক রাজাকার তাদের পাকবাহিনীর হাতে ধরিয়ে দেয়। তাদের সবাইকে নগরবাড়ি সেনাছাউনিতে নিয়ে গিয়ে বন্দি করা হয়। চারদিন ধরে তাদের ওপর অমানুষিক অত্যাচার চলে। অবশেষে ১০ সেপ্টেম্বর সাধন এবং তাঁর সঙ্গীদের বেয়নেট চার্জ করে হত্যা করা হয়। তাদের লাশ নদীতে ফেলে দেওয়া হয়। শহীদ সাধন এবং তাঁর সঙ্গীদের কারও লাশই পাওয়া যায়নি।
সূত্র : শহীদ বুদ্ধিজীবী কোষ –  আলী মাে. আবু নাঈম, ফাহিমা কানিজ লাভা
error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!