You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.06.13 | এন্থনি মাসকারেনহাস  - সংগ্রামের নোটবুক

১৩ জুন ১৯৭১ এন্থনি মাসকারেনহাস

ভারতের গোয়া থেকে অভিবাসিত পাকিস্তানী খৃস্টান সাংবাদিক এন্থনি মাসকারেনহাস এর বাঙালিদের প্রতি পশ্চিম পাকিস্তানিদের ভয়াবহ নির্যাতনের ওপর একটি প্রতিবেদন ১৯৭১ সালের ১৩ জুন, ব্রিটেনের ‘সানডে টাইমস’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। মাসকারেনহাস ছিলেন করাচির একজন সর্বজন শ্রদ্ধেয় সাংবাদিক।
তিনি সানডে টাইমস এ মাঝে মধ্যে লিখতেন। জীবনের নিরাপত্তা বিবেচনা করে তিনি এপ্রিল মাসে করা রিপোর্টটি অন্যভাবে করেছিলেন। পত্রিকা করতিপক্ষকে বলেছিলেন প্রকৃত সংবাদ তার পরিবার বর্গকে লনডনে স্থানান্তর করার পর যেন প্রকাশ করা হয়। যেদিন মাসকারেনহাসের পুরো পরিবার লন্ডনে চলে আসে, সেদিন সানডে টাইমসে প্রতিবেদনটি ছাপা হয়।
সানডে টাইমসের তৎকালীন সম্পাদক হ্যারল্ড তার সম্পর্কে লিখেছেন, ‘তিনি ছিলেন অত্যন্ত সাহসী। পাকিস্তানে তখন সেনা শাসন চলছে। তিনি জানতেন প্রতিবেদনটি প্রকাশ হলেই তাকে ও তার পরিবারকে দেশ ছাড়তে হতে পারে। এত বড় ঝুঁকি নেয়াটা তখন খুব সোজা ছিল না।’
ঢাকায় নারকীয় তাণ্ডব চালানোর পরই পাকবাহিনী বাহিনী ২৬ মার্চের পর গ্রামাঞ্চলের দিকে যুদ্ধ শুরু করে। ঢাকায় তখন বিদেশি সাংবাদিক নিষিদ্ধ ছিল। এপ্রিলে পাক বাহিনী কিছু সাংবাদিককে ঢাকায় এনে ‘স্বাধীনতাকামীদের’ পরাজিত করার বাহবা নেওয়ার পরিকল্পনা করে। মাসকারেনহাসসহ বেশ কয়েক জন সাংবাদিককে এপ্রিল মাসে ১০ দিনের এক সফরে পূর্ব পাকিস্তানে নিয়ে আসে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী।
অসুস্থ বোনকে দেখার নাম করে মাসকারেনহাস লন্ডন চলে গেলেন। লন্ডনে গিয়ে সানডে টাইমের অফিসে গিয়ে সোজা পত্রিকাটির সম্পাদকের সঙ্গে দেখা করলেন তিনি।
হ্যারল্ড তার পত্রিকায় প্রতিবেদনটি ছাপাতে রাজি হলেন। তবে তিনি স্ত্রী ও সন্তানদের পাকিস্তান থেকে নিয়ে আসার পরামর্শ দিলেন মাসকারেনহাসকে।
মাসকারেনহাস তার স্ত্রীকে সন্তানদের সঙ্গে নিয়ে লন্ডনে আসার জন্য একটি সাংকেতিক টেলিগ্রাম পাঠান। একটি মাত্র স্যুটকেস নিয়ে সন্তানদের সঙ্গে করে লন্ডনে চলে আসলেন তার স্ত্রী। যেদিন মাসকারেনহাসের পুরো পরিবার লন্ডনে চলে আসে, সেদিন সানডে টাইমসে প্রতিবেদনটি ছাপা হয়। বড় করে কালো রঙে শিরোনাম করা হয়, ‘জেনোসাইড’।
প্রতিবেদনটি ছিল অত্যন্ত শক্তিশালী। মাসকারেনহাস ছিলেন পাকিস্তানের সর্বমহলে বিশ্বাসযোগ্য একজন ব্যাক্তি এবং সেনাবাহিনীর মধ্যেও তার এতটাই গ্রহণযোগ্যতা ছিল যে, তিনি সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে প্রায়ই সময় কাটাতেন।