দীনেশচন্দ্র রায় মৌলিক
দীনেশচন্দ্র রায় মৌলিক ছিলেন ঢাকা জেলার ধামরাই উপজেলার বাসিন্দা। প্রথম জীবনে তিনি আইনজীবী হিসাবে কাজ করেন। কিন্তু একসময় তিনি আইন পেশা ছেড়ে স্থানীয় হার্ডিঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতায় যােগ দেন। এর কারণ ছিল আইন পেশায় অন্যায়ের সাথে আপস করতে হয়, মিথ্যা বলতে হয়। তাঁর স্ত্রী সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন। যে কারণে সংসারের সব কাজই তিনি নিজের হাতে করতেন। ন্যায়নীতি ও আদর্শ-পাণ্ডিত্যে তিনি ছিলেন গ্রামের হিন্দু-মুসলমান সবার কাছে শ্রদ্ধেয়। দেশ ভাগের সময় তার বহু আত্মীয়-পরিজন ভিটেমাটি ছেড়ে ভারতে চলে যায়। কিন্তু দীনেশচন্দ্র দেশ ছেড়ে যাননি। বহু গরিব সাধারণ মানুষকে তিনি বিনা অর্থে আইনি পরামর্শ দিয়েছেন। দেশকে তিনি মায়ের মতাে ভালােবাসতেন। আর জীব হত্যাকে মহাপাপ মনে করতেন। ১৯৭১ সালের ৯ এপ্রিল দুপুরে পাকিস্তানি হানাদাররা ধামরাই গ্রামে হানা দেয়। প্রাণভয়ে গ্রামের মানুষ পালিয়ে গেলেও প্রায় ২১ জন পাকবাহিনীর হাতে ধরা পড়েন। দীনেশচন্দ্র রায় মৌলিকও ধরা পড়েন। তাঁদের সবাইকে নির্মম নির্যাতন চালিয়ে বেঁধে নিয়ে যাওয়া হয় ধামরাই থানায়। দীনেশচন্দ্র রায়ের ছােট ছেলে অরুণ কুমার রায় বাবাকে ছাড়িয়ে আনতে থানায় যান। পাকবাহিনী তাকেও আটক করে। এরপর সবাইকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয় কালামপুর নদী সংলগ্ন একটি ছােট খালের পাড়ে। সেখানেই সারিবদ্ধভাবে সবাইকে দাড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়। নিহতদের প্রায় সবাই ছিলেন হিন্দু সম্প্রদায়ের লােক। ২১ জনের মধ্যে চারজন আহত অবস্থায় বেঁচে যান।
সূত্র : শহীদ বুদ্ধিজীবী কোষ – আলী মাে. আবু নাঈম, ফাহিমা কানিজ লাভা