You dont have javascript enabled! Please enable it! দুর্গাদাস সাহা - সংগ্রামের নোটবুক
দুর্গাদাস সাহা
দুর্গাদাস সাহার জন্ম ১৯৪২ সালের ১৭ ডিসেম্বর, কুষ্টিয়া জেলার বাড়াদি গ্রামে। তার বাবার নাম হরিদাস সাহা, মায়ের নাম গৌরীবালা। চার ভাইয়ের মধ্যে দুর্গাদাস ছিলেন সবার ছােট। দুর্গাদাসের শিক্ষাজীবন শুরু হয় বাড়াদি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এরপর তিনি ইউনাইটেড কুষ্টিয়া হাই অ্যান্ড মিউনিসিপ্যাল স্কুলে ভর্তি হন। ১৯৫৯ সালে দুর্গাদাস মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। ফলে তার পড়াশােনা কিছুদিনের জন্য স্থগিত হয়ে যায়। ১৯৬২ সালে তিনি প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিক পাস করেন। এরপর কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ থেকে তিনি আই, এসসি, ও বি, এসসি, পাস করেন। ১৯৬৯ সালে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিজ্ঞানে এম. এসসি. ডিগ্রি পান।  শিক্ষাজীবন শেষে দুর্গাদাস কুষ্টিয়া মহিলা কলেজে অধ্যাপনা শুরু করেন। অল্পদিনের মধ্যেই তিনি শিক্ষক হিসাবে বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। দুর্গদাস ছিলেন মৃদুভাষী ও শান্ত স্বভাবের মানুষ। দীর্ঘদেহী দুর্গাদাস ছিলেন সুস্বাস্থ্যের অধিকারী। তিনি নিয়মিত শরীরচর্চা করতেন, কুষ্টিয়া জিমন্যাস্টিক ক্লাবের সদস্য ছিলেন। তিনি ছিলেন ইউনাইটেড ইয়ং ক্লাবে’র অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে যশাের ক্যান্টনমেন্ট থেকে এক কোম্পানি পাকসেনা এসে কুষ্টিয়া শহরে অবস্থান নেয়। ৩০ মার্চ ভােরবেলা বি. ডি. আর., পুলিশ, আনসার, মুজাহিদ ও গণবাহিনী যৌথভাবে ত্রিমুখী আক্রমণ চালিয়ে পাকসেনাদের সম্পূর্ণ পর্যুদস্ত করে।
৩১ মার্চ কুষ্টিয়া শহর মুক্তিবাহিনীর দখলে আসে। কিন্তু পাকবাহিনী এপ্রিলের মাঝামাঝি আবার কুষ্টিয়া শহরে হানা দেয়। তারা কুষ্টিয়া শহর আর আশেপাশের গ্রামগুলাে ধ্বংসস্তুপে পরিণত করে। আত্মরক্ষার জন্য দুর্গাদাস তার বৃদ্ধ বাবা-মা ও ভাইয়ের ছেলে অমলকে নিয়ে কয়েক মাইল দূরের হাজারহাটি গ্রামে পালিয়ে যান। পরিস্থিতি একটু শান্ত হলে দুর্গদাস বাড়াদিতে ফিরে আসেন। বাড়িতে ফিরে আসার পরদিন, ১৯৭১ সালের ২০ এপ্রিল প্রতিবেশী ফন্টু সাহার বাড়ি লুট ঠেকাতে গিয়ে দুর্গাদাস অবাঙালি রাজাকারদের হাতে ধরা পড়েন।রাজাকাররা দুর্গদাসকে প্রথমে পুলিশ লাইন্সে নিয়ে যায়। সেখানে তার ওপর। অমানুষিক অত্যাচার চালানাে হয়। ওই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী রেলওয়ে কর্মকর্তা। আবদুল গণি জানান, দুর্গাদাসকে সম্পূর্ণ উলঙ্গ করে ঝুলিয়ে পেটানাে হয়। তারপর রেললাইনের ধারে ঘােরলাইন নামক জায়গায় তাকে হত্যা করা হয়। তাঁর লাশ। পাওয়া যায়নি। শহীদ দুর্গদাস সাহা অবিবাহিত ছিলেন।
সূত্র : শহীদ বুদ্ধিজীবী কোষ –  আলী মাে. আবু নাঈম, ফাহিমা কানিজ লাভা