You dont have javascript enabled! Please enable it!
নূরুল আমিন
নারায়ণগঞ্জ গার্লস হাই স্কুলের শিক্ষক নূরুল আমিন ১৯৭১ সালের ২৩ এপ্রিল মাত্র ২৯ বছর বয়সে পাকিস্তানি সেনাদের গুলিতে শহীদ হন। তার জন্ম ১৯৪২ সালের। ১৫ জানুয়ারি। তার বাবার নাম মাে, গরিব হােসেন, মায়ের নাম নূরুন্নেছা। বাবা ছিলেন পুলিশ অফিসার। পাঁচ ভাই ও পাঁচ বােনের মধ্যে নূরুল ছিলেন পঞ্চম। নারায়ণগঞ্জ শহরের হাজিগঞ্জে ছিল তাদের নিবাস। নূরুল ১৯৫৯ সালে প্রাইভেট পরীক্ষার্থী হিসাবে ম্যাট্রিক পাস করেন। এর পরের বছরই তার বাবা মারা যান। ম্যাট্রিক পাসের সাত বছর পর ১৯৬৬ সালে তিনি নারায়ণগঞ্জ তােলারাম কলেজ থেকে আই. এসসি. পাস করেন। ওই বছরের ১১ অক্টোবর তিনি নারায়ণগঞ্জ গার্লস হাই স্কুলে শিক্ষক হিসাবে যােগ দেন। স্কুলের শিক্ষকতার পাশাপাশি তিনি প্রাইভেট পড়াতেন এবং নিজেও স্নাতক ডিগ্রি নেওয়ার জন্য পড়াশােনা করছিলেন। নূরুল আমিন ছিলেন মিশুক ও হাসিখুশি স্বভাবের। শিক্ষক হিসাবেও তিনি ছিলের অত্যন্ত কর্তব্যপরায়ণ। নূরুল আমিনের সবচেয়ে বড় গুণ ছিল গরিব মানুষের প্রতি দরদবােধ। স্কুলের বেতন ও প্রাইভেট পড়িয়ে নিজে যা আয় করতেন, তার একটা অংশ তিনি বিলিয়ে দিতেন গরিব অভাবগ্রস্ত পাড়াপ্রতিবেশী ও পরিচিতজনদের মধ্যে। কোনাে ছাত্র টাকার অভাবে পরীক্ষার ফি দিতে পারছে না শুনলেই তিনি সবার আগে ছুটে যেতেন। নিজের সামর্থ্যে না কুলালে নিজের ভাই-ভাবির কাছ থেকেও সাহায্য নিয়েছেন।
১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ পাকবাহিনী যখন নারায়ণগঞ্জে হানা দেয়, তখন তাদের গতিকে প্রতিহত করতে শহরের প্রবেশমুখে চাষাড়া, জামতলায় যেসব মুক্তিযােদ্ধা অস্ত্র হাতে লড়াই করেছিলেন, নূরুল আমিন তাদের দলে ছিলেন। পরে পাকিস্তানি সেনা কবলিত নারায়ণগঞ্জ শহরে নূরুল আমিন পরিচিতদের খোঁজ-খবর নেওয়া। থেকে শুরু করে বিভিন্ন জনের বিভিন্ন প্রয়ােজন পূরণের জন্য বিপদের ঝুঁকি নিয়ে বেপরােয়া ছুটে বেরিয়েছেন। বিশেষত পাকিস্তানিদের হাতে নিহতদের পরিবারগুলাের নিয়মিত খোঁজ নেওয়া এবং তাদের নানা প্রয়ােজন পূরণ করার কাজ নূরুল আমিন। নিষ্ঠার সাথে করেছেন। ১৯৭১ সালের ২৩ এপ্রিল। নূরুল আমিন গিয়েছিলেন তার বড় বােনের। জিনিসপত্র নিরাপদে গ্রামে পৌঁছে দেওয়ার জন্য। শহরের কদমতলী ঘাটে নেমে। তিনি যখন রিকশায় উঠেছেন, তখনই পাকসেনাদের একটি দল তার গতিরােধ করে। এরপর তার পরিবারের সদস্যরা জানতে পারেন, কোনাে এক রাজাকার নূরুল আমিনকে আওয়ামী লীগ কর্মী ও মুক্তিযােদ্ধা হিসাবে চিহ্নিত করে। সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে গুলি করে হত্যা করা হয়। পরে তাঁর পরিবারের সদস্যরা শহীদ নূরুল আমিনের লাশ রাতের অন্ধকারে মাসদাইর গােরস্তানে সমাহিত করে।
সূত্র : শহীদ বুদ্ধিজীবী কোষ –  আলী মাে. আবু নাঈম, ফাহিমা কানিজ লাভা
error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!