ফজলুল হক চৌধুরী
ফজলুল হক চৌধুরীর জন্ম ১৯২১ সালের ২ এপ্রিল, ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলায়। তার বাবার নাম খাজে খান। বাহাদুর মহররম আলী চৌধুরী। ঢাকায় উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত। পড়াশােনার পর কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি হন এবং সেখান থেকে ১৯৪১ সালে অর্থনীতিতে অনার্স নিয়ে দ্বিতীয় শ্রেণিতে বি. এ. পাস করেন। ফজলুল হক চৌধুরী দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালে ১৯৪৪ সালে কিছুদিনের জন্যে চাকরি করেন। পড়াশােনা শেষ করে ১৯৪৫ সালে সিভিল সাপ্লাই বিভাগে চাকরি নেন। দেশ ভাগের পর পূর্ব পাকিস্তানে একই বিভাগে যােগ দেন। পরে এ বিভাগের ডিরেক্টর কনজুমার্স গুডস পদে উন্নীত হয়েছিলেন। তিনি পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকারের অধীন ডিরেক্টর অব সল্ট পদেও কিছুদিন চাকরি করেন। ১৯৫৭ সালে তাকে বদলি করে অস্ট্রেলিয়ায় পাকিস্তান হাইকমিশনে কমার্শিয়াল সেক্রেটারি পদে নিয়ােগ দেওয়া হয়। এরপর সিঙ্গাপুরে ট্রেড কমিশনার নিযুক্ত হন। ১৯৬৮ সাল থেকে তিনি যুক্তরাজ্যের পাকিস্তান দূতাবাসে (লন্ডন) কমার্শিয়াল কাউন্সিলর পদে দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৬৯ সালে ফজলুল হক চৌধুরীকে দেশে ডেকে পাঠিয়ে পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের (পি. আই. এ.) পূর্বাঞ্চলের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে নিয়ােগ দেওয়া হয়। তাকে পাকিস্তানের করাচিতে অবস্থিত প্রধান কার্যালয়ে দায়িত্ব পালন করতে বলা হয়। যদিও চাকরিবিধি অনুসারে তার ঢাকাতেই থাকার কথা। সেখানে অবস্থানকালে ফজলুল হক চৌধুরী পূর্ব পাকিস্তানের স্বার্থ সংরক্ষণে সােচ্চার ও প্রতিবাদী ভূমিকা পালন করেন। এ কারণে তিনি পাকিস্তানি শাসকদের বিরাগভাজন হয়েছিলেন। ১৯৭১ সালের মার্চের প্রথম দিকে স্ত্রীর অসুস্থতার জন্য ফজলুল হক চৌধুরী ছুটি নিয়ে ঢাকায় আসেন। স্ত্রীর গুরুতর অসুস্থতা ও অসহযােগ আন্দোলনের কারণে তিনি আর করাচি ফিরে যাননি। অসহযােগ আন্দোলনের সময় তিনি শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে প্রত্যক্ষ যােগাযােগ রাখতেন।
তার স্ত্রী আমিনা চৌধুরীর স্মৃতিচারণ থেকে জানা যায়, ১৯৭১ সালের ৮ এপ্রিল। তারিখে রাতে আনুমানিক ১০টার দিকে তিনি যখন এশার নামাজ পড়ছিলেন, তখন দুই জিপভর্তি পাকিস্তানি সেনা একটি মাইক্রোবাসসহ ফজলুল হক চৌধুরীর ঢাকার বাসায় আসে। সেনাদের নেতৃত্বে ছিল এক ক্যাপ্টেন। সেনা কর্মকর্তা তার স্ত্রী আমিনা চৌধুরীকে জানায় যে ফজলুল হক চৌধুরীকে হেডকোয়াটারে যেতে হবে জিজ্ঞাসাবাদের জন্যে। আমিনা চৌধুরী জিজ্ঞেস করেন, তাঁকে কখন বাসায় পৌছে দেওয়া হবে? ওই সেনা কর্মকর্তা জানায়, সেটা পরে জানানাে হবে। নামাজ শেষ হওয়ার পর তাকে সেনারা নিয়ে যায়। পরে আর তাকে ফিরিয়ে দিয়ে যায়নি। (স্মৃতি : ১৯৭১, দ্বিতীয় খণ্ড)। ধরে নিয়ে যাওয়ার সময় ফজলুল হক চৌধুরীর পরনে ছিল বুশ শার্ট ও ট্রাউজার। তাকে পাকিস্তান সেনাবাহিনী ধরে নিয়ে যাওয়ার পর পরিবারের সদস্যরা তাকে মুক্ত করার জন্য বিভিন্ন স্থানে যােগাযােগ করেন। কিন্তু তাকে কোথায় নেওয়া হয়েছে, সে খোঁজ তাঁরা পাননি। স্বাধীনতার পরও তারা বিভিন্ন স্থানে খোঁজ করেছেন। কিন্তু কোথাও তার খোঁজ পাওয়া যায়নি। এ কারণে তার শহীদ হওয়ার সঠিক তারিখ জানা যায়নি। ফজলুল হক চৌধুরী এক ছেলে ও এক মেয়ের বাবা ছিলেন।
সূত্র : শহীদ বুদ্ধিজীবী কোষ – আলী মাে. আবু নাঈম, ফাহিমা কানিজ লাভা