You dont have javascript enabled! Please enable it! কালাচাদ রায় - সংগ্রামের নোটবুক
কালাচাদ রায়
১৯৪১ সালের ১০ এপ্রিল কুমিল্লা জেলার কামেল্লা গ্রামে কালাচাদ রায়ের জন্ম। তার বাবার নাম সুধীর কুমার রায়। তিনি রসায়নশাস্ত্রে এম. এসসি. ছিলেন। কালাচাদ রায় রংপুর কারমাইকেল কলেজে শিক্ষকতা শুরু করেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি রংপুর কারমাইকেল কলেজে রসায়ন শাস্ত্রের অধ্যাপক ছিলেন। ১৯৭১ সালের ৩০ এপ্রিল মধ্যরাতে কারমাইকেল কলেজ ক্যাম্পাসে অতর্কিতে হানা দেয় পাকবাহিনীর কনভয়। গাড়ি থেকে নেমে মুখ ঢাকা কয়েকজন অবাঙালি চিনিয়ে দিল হিন্দু ধর্মাবলম্বী শিক্ষকদের কে কোন বাসায় থাকেন। এই দালাল চক্রের নেতৃত্বে ছিল কারমাইকেল কলেজের ইসলামী ছাত্রসংঘের তত্ত্বালীন নেতা এ. টি. এম, আজহারুল ইসলাম। ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত থেকে জানা গেছে, ১৯৭১ সালের ৩০ এপ্রিল রাতে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে জনমত গড়ে তুলতে ও মুক্তিযােদ্ধাদের সংগঠিত করতে রংপুর কারমাইকেল কলেজের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক কালাচাদ রায়ের বাসায় একটি বৈঠক বসে। আগে থেকেই এঁদের উপর নজরদারি করছিল ইসলামী ছাত্র সংঘে’র (বর্তমান ইসলামী ছাত্রশিবির) রংপুর শাখার সভাপতি এ. টি. এম. আজহারুল ইসলাম। আজহারুলের কাছ থেকে বৈঠকের খবর পেয়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী রাত ৯টার দিকে অধ্যাপক কালাচাদ রায়ের বাসা ঘিরে ফেলে। বুটের লাথিতে দরজা খুলে ভেতরে ঢােকে পাকবাহিনী।
কিছুক্ষণের মধ্যেই এক এক করে ধরে নিয়ে আসা হয় অধ্যাপক সুনীলবরণ চক্রবর্তী, অধ্যাপক রামকৃষ্ণ অধিকারী, অধ্যাপক চিত্তরঞ্জন রায় এবং অধ্যাপক কালাচাদ রায়কে। তাদেরকে রাইফেলের বাট দিয়ে নির্মমভাবে পেটাতে থাকে পাকবাহিনী এ দৃশ্য সহ্য করতে না পেরে ছুটে আসেন কালাচাদ রায়ের স্ত্রী নৃত্যশিল্পী মঞ্জুশ্রী রায় ঘাতকের দল তাকেও রেহাই দেয়নি। এছাড়া ধরে আনা হয় রসায়নের অধ্যাপক আবদুর রহমান এবং উর্দু সাহিত্যের অধ্যাপক শাহ মাে. সােলায়মানকে। রাইফেলের বাট দিয়ে পেটাতে পেটাতে, বুট দিয়ে লাথি মারতে মারতে সবাইকে টেনে-হিচড়ে তােলা হয় গাড়িতে। আড়াল থেকে ঘটনাটি দেখতে পায় ওই বাসার কেয়ারটেকার, যিনি পরবর্তীতে ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দিয়ে ঘটনাটি বর্ণনা করেছেন। কলেজ ক্যাম্পাস থেকে বেরিয়ে মিলিটারি কনভয় রংপুর-বগুড়া মহাসড়কের দমদমা ব্রিজের কাছে গিয়ে থামে। রাস্তার পাশে একটি বাঁশের ঝাড়ে নিয়ে যাওয়া হয় শিক্ষকদের পিছমােড়া করে হাত বাঁধা সবাইকে দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয়। সারিবদ্ধভাবে। কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই গর্জে ওঠে হানাদারদের রাইফেল। মুহূর্তের মধ্যে লুটিয়ে পড়েন সবাই। পরবর্তীতে পাকবাহিনী দমদমা ব্রিজে আরও অনেক গণহত্যা চালায়। সেখানে একটি বধ্যভূমি আছে। কালাচাদ রায়সহ অন্য শহীদ শিক্ষকদের স্মরণে কারমাইকেল কলেজে স্বাধীনতার ৪১ বছর পর স্মৃতিফলক নির্মাণ করা হয়েছে।
সূত্র : শহীদ বুদ্ধিজীবী কোষ –  আলী মাে. আবু নাঈম, ফাহিমা কানিজ লাভা