মনােরঞ্জন জোয়ার্দার
মনােরঞ্জন জোয়ার্দারের জন্ম ১৯০৭ সালে, ঝিনাইদহ জেলার শৈলকূপায়। তার বাবার নাম ব্রজলাল জোয়ার্দার। মনােরঞ্জন ছিলেন বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান। মনােরঞ্জন জোড়াদহ মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন। এরপর এল, এম. এফ. পাসের পর নিজ এলাকায় চিকিৎসক হিসাবে কর্মজীবন শুরু করেন। সবার কাছে তিনি ‘রঞ্জন ডাক্তার নামে পরিচিত ছিলেন। মনােরঞ্জন কিশাের বয়স থেকেই স্বদেশী আন্দোলনের সাথে যুক্ত ছিলেন। জানা যায়, স্বদেশী আন্দোলনের সমর্থনে কবিতা লেখার জন্য তাকে জেলে যেতে হয়েছিল। নিজের লেখা কবিতাগুলাে সংকলিত করে একটি বই প্রকাশ করার। পরিকল্পনা করেছিলেন মনােরঞ্জন। কিন্তু সেটা আর করতে পারেননি। মনােরঞ্জন যাত্রাপালায় অভিনয় করতেন, ভালাে ফুটবল খেলতেন। তিনি শৈলকূপা কলেজের পরিচালনা পরিষদের সদস্য ছিলেন। ১৯৭১ সালের ২৮ অক্টোবর পাকবাহিনীর দোসর রাজাকার নওশের আলী ও তার দলবল মনােরঞ্জনকে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে যায়। রাজাকাররা তাঁর চোখ-মুখ হাত-পা বেঁধে শৈলকূপা বাজারের একটি গুদামঘরে সারাদিন আটকে রাখে। পরে গভীর রাতে তার কোমরের সাথে এক বস্তা ইট বেঁধে শৈলকূপা ব্রিজের ওপর থেকে মনােরঞ্জনকে জীবিত অবস্থায় কুমার নদে ফেলে দেয় রাজাকার বাহিনী। সেখানেই তার মৃত্যু হয়। শহীদ মনােরঞ্জন জোয়ার্দারের স্ত্রীর নাম পুষ্প রানী জোয়ার্দার। তাদের সংসারে ছয় মেয়ে ছিল। শৈলকূপা বাজারের পাশে কুমার নদের ব্রিজের দক্ষিণ-পশ্চিম পাশে মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্মরণে একটি স্মৃতিফলক স্থাপন করা হয়েছিল, যাতে মনােরঞ্জন জোয়ার্দারের নাম উল্লেখ ছিল। এই স্মৃতিফলকটির কোনাে যত্ন নেওয়া হয় না।
সূত্র : শহীদ বুদ্ধিজীবী কোষ – আলী মাে. আবু নাঈম, ফাহিমা কানিজ লাভা