You dont have javascript enabled! Please enable it!
মাে. আব্দুল হাফিজ
মাে. আব্দুল হাফিজ ১৯৪১ সালের ৩০ জুন সিলেট জেলার গােলাপগঞ্জ উপজেলার ভাদেশ্বর (পশ্চিম ভাগ) গ্রামে জন্ম নেন। তাঁর বাবার নাম মাে. আব্দুল বারি, মায়ের নাম ফাতেমা খাতুন। আব্দুল বারি ছিলেন একজন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। হাফিজ ভাদেশ্বর উচ্চ বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেন এবং ১৯৫৭ সালে ওই বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন। তিনি এম, সি, কলেজ থেকে ১৯৬০ সালে আই, এ. পাস করেন। হাফিজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬২ সালে বি, এ. এবং ১৯৬৫ সালে এল. এল. বি. ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৬৬ সালে তিনি সিলেট চলে আসেন এবং সিলেট জজকোর্টের আইনজীবী হিসাবে অন্তর্ভুক্ত হন। তাঁর আইন ব্যবসার সময়সীমা ছিল চার বছর। কিন্তু এই চার বছর সময়ের মধ্যেই তিনি একজন দক্ষ আইনজীবী হিসাবে পরিচিতি লাভ করেন। ১৯৭০ সালের ৮ মার্চ তিনি আব্দুল মজিদ চৌধুরীর মেয়ে নুরুন্নাহার চৌধুরী শাহানাকে বিয়ে করেন। এই বিয়ের ঘটনায় হাফিজের মনােভাব কিছুটা হলেও বােঝা যাবে। এক প্রবাসী পাত্রের সাথে শাহানার বিয়ে হওয়ার কথা। কিন্তু বিয়ের দিন বরপক্ষ বিয়ের অনুষ্ঠানে প্রায় ১০ ঘণ্টা দেরি করে আসায় কনেপক্ষের আত্মীয়-স্বজন এ বিয়েতে আপত্তি তােলে। ফলে বিয়ে ভেঙে যায়। কন্যাদায় নিয়ে আব্দুল মজিদ যখন মহা বিপদের মুখে, ঠিক তখন তার সামনে গিয়ে হাফিজ বললেন, “আমি আপনার মেয়েকে বিয়ে করতে রাজী। আপনারা বিয়ের ব্যবস্থা করুন।” পরে ১৯৭০ সালের ৮ মার্চ আনুষ্ঠানিকভাবে হাফিজ ও শাহানার বিয়ে হয়।
হাফিজ ছাত্রজীবনে সরাসরি রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন না। তবে তিনি। তিত্বকালীন ছাত্র ইউনিয়নের সাথে যােগাযােগ রাখতেন। বাঙালির স্বাধিকার ও স্বাধীনতা সংগ্রামের সাথে তিনি মনেপ্রাণে যুক্ত ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে হাফিজ মুক্তিযুদ্ধে যােগ দেওয়ার পরিকল্পনা করেন। তখন তার স্ত্রী প্রায় ১০ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। ১৯৭১ সালের ২৬ এপ্রিল, স্ত্রীকে নিরাপদে রাখার জন্য সাচান গ্রামে রেখে হাফিজ বিকেলে শ্বশুরবাড়ি দাহাল গ্রামে চলে আসেন। ওইদিন রাতে পাকবাহিনীর কয়েকজন সদস্য তার শ্বশুরবাড়ি আসে এবং হাফিজকে নানা বিষয়ে জিজ্ঞাসা করে চলে যায়।  পরের দিন ২৭ এপ্রিল সকালে পুনরায় পাকসেনারা আসে। তারা হাফিজের কাছে জানতে চায় যে মেজর ফাত্তাহ চৌধুরী কোথায়? মেজর ফাত্তাহ চৌধুরী তার স্ত্রীর চাচা। হাফিজ উত্তরে বললেন, “আমি জানি না।” এই উত্তর শুনে পাকসেনারা তাকে ঘর থেকে বের করে বাড়ির পিছনের উঠানে নিয়ে যায় এবং গুলি করে হত্যা করে। হাফিজকে তার শ্বশুরবাড়ির পারিবারিক গােরস্তানে কবর দেওয়া হয়।
হাফিজের মৃত্যুর ১৭ দিন পর তাঁর একমাত্র মেয়ে নিশানা হাফিজের জন্ম হয়।

সূত্র : শহীদ বুদ্ধিজীবী কোষ –  আলী মাে. আবু নাঈম, ফাহিমা কানিজ লাভা

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!