You dont have javascript enabled! Please enable it! মাে. আবদুল জাব্বার - সংগ্রামের নোটবুক
মাে. আবদুল জাব্বার
মাে. আবদুল জব্বারের জন্ম আনুমানিক ১৯৩০ সালে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা উপজেলার কাশীপুর গ্রামের সরদার বাড়িতে। তার বাবার নাম আহমেদ আলী দরকার, মায়ের নাম আঞ্জুমান আরা বেগম। দুই ভাইবােনের মধ্যে তিনিই ছিলেন আবদুল জাব্বার নারায়ণগঞ্জ হাই স্কুল থেকে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিক এবং ঢাকা কলেজ থেকে প্রথম বিভাগে আই. এসসি, পাস করেন। এরপর ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে তিনি এম, বি. বি. এস, পাস করেন। ১৯৫৮ সালে তিনি মহকুমা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা হিসাবে যােগ দেন এবং ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত জামালপুরে কাজ করেন। এছাড়া ১৯৬৫ থেকে ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত তিনি ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের মশক নিধন কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করেন। জাব্বার ১৯৬৮ সালে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে সহযােগী অধ্যাপক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। কিছুদিন চুয়াডাঙ্গা হাসপাতালে দায়িত্ব পালন করার পর ১৯৬৯ সালে তাঁকে দিনাজপুর সদর হাসপাতালে সহকারী সিভিল সার্জন হিসাবে বদলি করা হয়। ছাত্রজীবনে চৌকস সাঁতারু এবং ক্রীড়া সংগঠক হিসাবে তার সুনাম ছিল। কাশীপুর কালচারাল ক্লাবের স্থপতিদের একজন ছিলেন আবদুল জাব্বার। তিনি এই ক্লাবের সদস্যদের নিয়ে গরিব মেধাবী ছাত্রদের খুঁজে বের করতেন, তাদের সহযােগিতা করতেন। এছাড়া গরিব মানুষের জন্য তিনি ফ্রি চিকিৎসা ক্যাম্পের আয়ােজন করতেন। জাব্বার ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। 
১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ তৎকালীন ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলসের দিনাজপুরের কুঠিবাড়িস্থ সেক্টরের কয়েকজন বাঙালি সেনা পাকিস্তানি হানাদারদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘােষণা করেন। ডা. জাব্বার এলাকাবাসীকে বিদ্রোহী সেনাদের পাশে গিয়ে দাড়ানাের আহ্বান জানান। আশেপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আহত মানুষ হাসপাতালে ভর্তি হতে থাকে। প্রায় দেড়শ রােগী তখন হাসপাতালে। একমাত্র ডাক্তার হিসাবে তার ওপর ভীষণ চাপ পড়ে। কিন্তু তিনি সে দায়িত্ব নিষ্ঠার সাথে পালন করেছেন।  পাকিস্তানি সেনাবাহিনী দিনাজপুরের দিকে এগিয়ে আসতে থাকলে ডা, জাব্বার তার পরিবারের সদস্যদের স্থানীয় কাঞ্চন নদীর ওপারের একটি গ্রামে নিরাপদ আশ্রয়ে পাঠিয়ে দেন। নিজে থেকে যান হাসপাতালে, আহতদের পাশে। ১৯৭১ সালের ১৩ এপ্রিল পাকহানাদার বাহিনী দিনাজপুর শহরে হানা দেয়। এর কয়েকদিন পর, ২৯ এপ্রিল, হাসপাতালের নিজের চেম্বারে ডা. আবদুল জাব্বারকে শ্বাসরােধ করে হত্যা করা হয়। পরিবারের সদস্যরা এ খবর জানতে পারেননি। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর পরিবারের সদস্যরা তার খোঁজ শুরু করেন । অনুসন্ধানের এক পর্যায়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা তকালীন এম. পি. এ. অ্যাডভােকেট এম. আবদুর রহিমের বাসভবনের সামনের মাটি খুঁড়ে ডা, জাব্বারের দেহাবশেষ উদ্ধার করা হয়। এখানে একজন বিদ্যুৎ প্রকৌশলী ও হাসপাতালের একজন কর্মচারীর লাশও পাওয়া যায়। পরে ডা. জাব্বারের লাশ দিনাজপুর শহরের উপকণ্ঠে চেহেলগাজী মাজারের পাশের কবরস্থানে দাফন করা হয়।  শহীদ ডা. মাে. আবদুল জাব্বারের স্ত্রীর নাম হালিমা খাতুন। তাদের সংসারে তিন মেয়ে ও পাঁচ ছেলে ছিল।

সূত্র : শহীদ বুদ্ধিজীবী কোষ –  আলী মাে. আবু নাঈম, ফাহিমা কানিজ লাভা