You dont have javascript enabled! Please enable it!
মুজিবউদ্দিন আহমেদ
মুজিবউদ্দিন আহমেদ ঢাকার লালবাগ থানার হাজারীবাগ এলাকায় ১৯১৬ সালের ১ জুলাই জন্ম নেন। তাঁর বাবার নাম আজিমউদ্দিন সরদার, মায়ের নাম বালেকা বানু। তারা ছিলেন তিন ভাইবােন।  মুজিবউদ্দিন ঢাকার পােসম সেন্ট্রাল স্কুল থেকে ১৯৩৪ সালে ম্যাট্রিক পাস করেন। এরপর কলকাতার বেঙ্গল মেডিকেল সার্ভিস স্কুল থেকে এল. এম, এফ. এবং এম, বি, বি, এস, পাস করেন। মুজিবউদ্দিন ভারতের পুনা ও লখনেী থেকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ওপর উচ্চতর ডিগ্রি নেন। তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মেডিকেল কোরে যােগ দেন।  ডা. মুজিবউদ্দিন ছিলেন নম্র স্বভাবের মানুষ। তিনি ছিলেন মিতব্যয়ী, খুবই সাধারণ জীবনযাপন করতেন। ঢাকার বি. জি. বি. হাসপাতাল (১ নম্বর গেটের কাছে) মুজিবউদ্দিনের তত্ত্ববধানে প্রতিষ্ঠিত হয়। শেখ মুজিব, কামরুজ্জামান, তােফায়েল আহমেদ, শাহজাহান সিরাজ প্রমুখ নেতার সাথে তাঁর ঘনিষ্ঠতা ছিল। এসব কারণে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় তাকে আসামি করা হয়। সে সময় পদমর্যাদায় তিনি ছিলেন লেফটেন্যান্ট কর্নেল। আগরতলা মামলার পর তার পদাবনতি ঘটিয়ে তাকে মেজর পদে নামানাে হয় এবং দেড় বছর তাকে সাসপেন্ড। করে রাখা হয়। ১৯৭১ সালের মার্চে ডা. লে. কর্নেল মুজিবউদ্দিন আহমেদের কর্মস্থল ছিল রাজশাহী ক্যান্টনমেন্ট। ২৩ মার্চ তাঁর বড় ছেলে ইঞ্জিনিয়ার শারফুদ্দিন আহমেদ স্বাধীন বাংলার একটি পতাকা বানান। তার আরেক ছেলে পতাকাটি বাসায় উড়িয়ে দেয়। এ ঘটনায় ক্যান্টনমেন্টের পাকিস্তানিরা তাদের ওপর অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে।  ডা, লে. কর্নেল মুজিবউদ্দিন গােপনে গােপনে কর্নেল হায়দার, মেজর গিয়াসুদ্দিন প্রমুখের সাথে একটি যুক্তফ্রন্ট গঠন করেছিলেন। কীভাবে বাঙালিদের রক্ষা করা যায়, স্বাধীনতার সংগ্রাম এগিয়ে নেওয়া যায় সেসব নিয়ে তারা যুক্তফ্রন্টের বৈঠকে আলােচনা করেন। ২৫ মার্চের কালরাতের গণহত্যার পর তারা রাজশাহীতে মুক্তিযুদ্ধ। শুরু করেন এবং ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত রাজশাহী শহর পাকসেনাদের হাত থেকে মুক্ত রাখতে সক্ষম হন।
পাকিস্তানি সেনারা শক্তি বাড়িয়ে এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি রাজশাহীতে হামলা চালায়। রাজশাহী দখলে রাখা যখন অসম্ভব হয়ে পড়ে, তখন মুক্তিযােদ্ধারা রাজশাহী ছেড়ে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারতে চলে যেতে থাকেন। মুক্তিযােদ্ধারা অন্য বাঙালিদেরও রাজশাহী থেকে সরিয়ে দিতে থাকেন। ১৯৭১ সালের ২৬ এপ্রিল ডা. লে কর্নেল মুজিব ২১ জন মুক্তিযােদ্ধাকে নিয়ে ভারতের উদ্দেশে রওনা দেন। পথে রাজশাহী ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের সামনে পাকিস্তানি সেনা ও রাজাকারদের মিলিত বাহিনীর সাথে তাদের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ হয়। এ যুদ্ধে ডা. মুজিব, তার বড় ছেলে শারফুদ্দিন আহমেদসহ ২০ জন শহীদ হন। তখন বৃষ্টি হচ্ছিল। হাবিলদার মােহসিন বৃষ্টির মধ্যে মৃতের ভান করে মাটিতে পড়ে ছিলেন বলে তিনি বেঁচে যান। শােনা যায়, ডা. লে. কর্নেল মুজিবউদ্দিন আহমেদের লাশটি স্থানীয় একজন বাবুর্চি রাজশাহী সার্কিট হাউজের মাটিতে কবর দেন। কিন্তু তার পরিবারের সদস্যরা সে কর শনাক্ত করতে পারেননি। শহীদ ডা. লে. কর্নেল মুজিবউদ্দিন আহমেদের স্ত্রীর নাম সামসুন নাহার। তাঁদের সংসারে ছয় ছেলে ও দুই মেয়ে ছিল।

সূত্র : শহীদ বুদ্ধিজীবী কোষ –  আলী মাে. আবু নাঈম, ফাহিমা কানিজ লাভা

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!