You dont have javascript enabled! Please enable it! মিহির কুমার সেন - সংগ্রামের নোটবুক
মিহির কুমার সেন
মিহির কুমার সেনের জন্ম ১৯৩৬ সালে, নেত্রকোনা জেলা শহরের মােক্তারপাড়ায়। তাঁর বাবার নাম হেমচন্দ্র সেন, মায়ের নাম সাধনাময়ী সেনগুপ্ত । দুই ভাই ও চার বােনের মধ্যে তিনি ছিলেন তৃতীয়। মিহির কুমার নেত্রকোনার দত্ত উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন। এরপর তিনি কলকাতার বিদ্যাসাগর কলেজ থেকে আই. এসসি. পাস করে ময়মনসিংহের লিটন মেডিকেল স্কুলে এল, এম, এফ. কোর্সে ভর্তি হন। ১৯৬০ সালে তিনি এল, এম. এফ. ডিগ্রি পাস করেন। চাকরি জীবনের শুরুতে তিনি নেত্রকোনার ঠাকুরকোনা স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে অ্যাসিস্টেন্ট সার্জন হিসাবে কাজ করেন। এরপর তিনি মদনপুর স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র ও জামালপুরের দিঘপাইত স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে অ্যাসিস্টেন্ট সার্জন হিসাবে কাজ করেছেন।  মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ডা. মিহির কুমার সেন, তার বাবা হেমচন্দ্র সেন ও জ্যাঠা অখিল চন্দ্র সেনসহ সবাই শহর ছেড়ে গ্রামে গিয়ে আশ্রয় নেন। ১৯৭১ সালের ২৯ এপ্রিল মিহির তার শালা সিদ্ধার্থ ও শঙ্কর এবং পরিবারের কাজের লােক করুণা সরকারকে সাথে নিয়ে বাড়িঘরের অবস্থা দেখার জন্য নেত্রকোনা শহরে আসেন।
সিদ্ধার্থ ছিলেন ছাত্র ইউনিয়ন কর্মী এবং নেত্রকোনা সরকারি কলেজের বি, এ. ক্লাসের ছাত্র। শঙ্কর সবেমাত্র ম্যাট্রিক পাস করেছেন। শহরে ঢুকেই তারা পড়ে যান। পাকিস্তানি হানাদারদের সামনে। স্থানীয় একজন রাজাকারের ইশারায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী তাদের আটক করে। সেদিন আরও অনেককেই পাক হানাদাররা আটক করেছিল। আটক সমস্ত বন্দিকে নিয়ে যাওয়া হয় নেত্রকোনার পূর্বধলা সড়কের ত্রিমােহনী ব্রিজের ওপর। তাদের সবাইকে একই দড়িতে বেঁধে লাইন দিয়ে দাঁড় করানাে হয়। তারপর ব্রাশফায়ার করে সবাইকে হত্যা করা হয়। সেদিন হাতে, পায়ে ও বুকে গুলি খেয়েও শঙ্কর বেঁচে ছিলেন। পরে ঘাতকরা চলে গেলে আশেপাশের মানুষ শঙ্করকে। উদ্ধার করে এবং চিকিৎসার ব্যবস্থা করে। শঙ্কর প্রায় আট বছর বেঁচে ছিলেন।  ডা. মিহির কুমার সেনের শহীদ হওয়ার তিন মাস পর তার বাবা হেমচন্দ্র সেন ও জ্যাঠা অখিল চন্দ্র সেনকেও পাকিস্তানি হানাদারদের সহযােগী রাজাকার বাহিনী হত্যা করে।

সূত্র : শহীদ বুদ্ধিজীবী কোষ –  আলী মাে. আবু নাঈম, ফাহিমা কানিজ লাভা