মনসুর হােসেন
মনসুর হােসেনের জন্ম পাবনায়। তার বাবা মােতাহার হােসেন। ছিলেন শিক্ষক। তার মায়ের নাম রােকেয়া বানু। তার ডাকনাম মঞ্জু। মনসুর হােসেন মঞ্জু পানি ও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বাের্ডের (ওয়াপদা) হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা ছিলেন। | ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের পর পাবনার তরুণরা বাঙালি পুলিশ-ই, পি, আর,-দের সাথে মিলে সাধারণ অস্ত্র নিয়েই পাকবাহিনীর প্রতিরােধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। সেই প্রতিরােধ যুদ্ধে মঞ্জু শামিল ছিলেন। পাবনার মুক্তিযােদ্ধারা ১০ এপ্রিল পর্যন্ত পাবনা মুক্ত রাখতে সক্ষম হন। কিন্তু পাবনা দখলের জন্য পাকবাহিনী বিমানযােগে বােমা হামলা শুরু করে এবং ভারী অস্ত্র নিয়ে পাবনায় হামলা চালায়। এ অবস্থায় পাবনার মুক্তিযােদ্ধারা আর প্রতিরােধ টিকিয়ে রাখতে সক্ষম হননি। চার ভাই মােকাররম হােসেন মুকুল, মােশাররফ হােসেন রঞ্জু, মােস্তাক হােসেন অঞ্জু ও মনসুর হােসেন মঞ্জু মুক্তিযুদ্ধে যােগ দেন। তাদের বড় ভাই মােজাম্মেল হােসেন তখন মুক্তিযুদ্ধের ৭ নম্বর সেক্টরের কমান্ডিং অফিসার হিসাবে যুদ্ধ করছেন। তাঁদের বাবা-মা প্রথমে পালিয়ে পাশের গ্রামে আশ্রয় নেন।
পরে তারা চলে আসেন বড় ছেলে মােজাম্মেল হকের ঢাকার মগবাজারের মধুবাগের বাসায়। মােজাম্মেলের দুটি বাড়ির একটি রাজাকার বাহিনী দখল করে নিয়ে সেখানে তাদের দপ্তর বানায়। ইতােমধ্যে মুকুলের মা অসুস্থ হয়ে পড়েন। এ খবর জানতে পেরে মুকুল, মঞ্জু ও রঞ্জু ১০ ডিসেম্বর রাতে ঢাকার মধুবাগের বাসায় আসেন বাবা-মায়ের সাথে দেখা করতে। পরদিন রাতেই তাদের চলে যাওয়ার কথা। কিন্তু পাক হানাদারদের সহযােগী বাহিনীর মাধ্যমে এ খবর জানাজানি হয়ে যায়। ১১ ডিসেম্বর বিকালে একদল পাকিস্তানি সেনা বাড়িটি ঘিরে ফেলে। মুকুল, মঞ্জু ও রঞ্জু প্রথমে যুদ্ধ। করার কথা ভাবলেও বাড়ির সদস্য ও আশেপাশের মানুষের নিরাপত্তার কথা ভেবে ধরা দেন পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে। তাদের সাথে পাকবাহিনী ধরে নিয়ে যায় তাঁদের। বােনের স্বামী ইউসুফ আলীকেও। এরপর থেকে তাদের আর কোনাে খোঁজ মেলেনি, তাদের মরদেহও পাওয়া যায়নি।
সূত্র : শহীদ বুদ্ধিজীবী কোষ – আলী মাে. আবু নাঈম, ফাহিমা কানিজ লাভা