You dont have javascript enabled! Please enable it! বদিউল আলম চৌধুরী (লে. কর্নেল) - সংগ্রামের নোটবুক
বদিউল আলম চৌধুরী (লে. কর্নেল)
বদিউল আলম চৌধুরীর জন্ম দিনাজপুরের বীরগঞ্জের শিথলাই গ্রামে। দুই বােন ও এক ভাইয়ের মধ্যে তিনি ছিলেন দ্বিতীয়। তাঁর ডাকনাম বদু। শিক্ষাজীবন শেষে বদিউল পাকিস্তান বিমানবাহিনীর মেডিকেল কোরে যােগ দেন। পাকিস্তানি শাসকদের
বৈষম্যমূলক নীতির প্রতিবাদে তিনি কখনও পদোন্নতির পরীক্ষায় অংশ নেননি। অবশেষে তাঁকে বিমানবাহিনী থেকে সেনাবাহিনীতে বদলি করা হয়। এ সময় তাকে পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় সেনানিবাস কোয়েটা সামরিক হাসপাতালে কমান্ডিং অফিসার হিসাবে নিয়ােগ দেওয়া হয়। কিন্তু সেখান থেকেও ১৯৬৯ সালে। তাকে বদলি করে চট্টগ্রামে নিয়ে আসা হয়। বদিউল আলম চৌধুরী লেফটেন্যান্ট কর্নেল পদে উন্নীত হন।  ‘চট্টগ্রামে থাকা অবস্থায় সেনাবাহিনীর ‘বড়খানা’ উৎসবে তার প্রতিবাদের কারণেই উর্দু গান ও গজলের সাথে বাংলা গান গাওয়ার অনুমতি দিতে বাধ্য হন সেনা। কর্মকর্তারা। ১৯৭১ সালের মার্চ মাসে অসহযােগ আন্দোলনের সময় ডা, লে. কর্নেল বদিউল আলম চৌধুরী হৃদরােগে আক্রান্ত হন। তিনি পাকিস্তানে গিয়ে উন্নত চিকিৎসা নেওয়ার পরিবর্তে ঢাকায় চলে আসেন। ঢাকায় কিছুদিন চিকিৎসা নেওয়ার পর দেশের পরিস্থিতি বুঝতে পেরে ডাক্তারদের নিষেধ উপেক্ষা করেই তিনি সপরিবারে চট্টগ্রাম চলে যান। তিনি স্টেশন কমান্ডারসহ অন্য বাঙালি সেনা কর্মকর্তার সাথে গােপনে আলাপআলােচনা করতে থাকেন। এ ধরনের কয়েকটি বৈঠক তার বাসায় অনুষ্ঠিত হয়।
২৫ মার্চ রাত থেকেই চট্টগ্রাম পুলিশ লাইন্সসহ কয়েক জায়গায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী বাঙালিদের ওপর ঝাপিয়ে পড়ে। এর বিরুদ্ধে কয়েক জায়গায় প্রতিরােধ যুদ্ধও শুরু হয়ে যায়। ২৬ মার্চ ভােরে সেনাবাহিনীর বাঙালি কর্মকর্তা ও তাঁদের পরিবারের সদস্যদের গ্রেফতার করা হয়। তাঁদের সবাইকে সামরিক হাসপাতালের একটি অংশে বন্দি করে রাখা হয়। ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল ডা. লে. কর্নেল বদিউল আলম চৌধুরী, ডা. মেজর রেজাউর রহমান (শহীদ), মেজর কামাল উদ্দিন এবং ক্যাপ্টেন মাহমুদকে বন্দুকের মুখে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় তাদের পরনে ছিল লুঙ্গি আর গেঞ্জি। এরপর থেকে তাদের আর কোনাে খোঁজ পাওয়া যায়নি।  শহীদ ডা. বদিউল আলম চৌধুরীর স্ত্রীর নাম মাহমুদা বেগম। তাদের সংসারে দুই ছেলে ও দুই মেয়ে ছিল। তাঁর নামে চট্টগ্রাম সেনানিবাসে একটি সড়কের নামকরণ করা হয়েছে।

সূত্র : শহীদ বুদ্ধিজীবী কোষ –  আলী মাে. আবু নাঈম, ফাহিমা কানিজ লাভা