বদরুল হক চৌধুরী
বদরুল হক চৌধুরীর জন্ম ফেনীর হরিপুর দেওয়ান বাড়িতে। ১২ বছর বয়সে তিনি বাবা-মাকে হারান। এরপর মামার বাড়িতে লালিত হন বদরুল। তাঁর শিক্ষাজীবন শুরু হয় কলকাতায়। পরে তিনি নীলফামারী স্কুলে ও ভারতের জামশেদপুরে টাটানগর টিনপ্লেট হাই স্কুলে শিক্ষকতা করেছেন। তার স্ত্রীও টিনপ্লেট হাই স্কুলে শিক্ষকতা করতেন। ১৯৬৫ সালে তার স্ত্রী উচ্চ রক্তচাপে প্যারালাইজড হয়ে পড়েন। ইতােমধ্যে তাদের সংসারে আট ছেলেমেয়ের জন্ম হয়। ১৯৬৬ সালে বদরুল হক চৌধুরী সপরিবারে চলে আসেন ময়মনসিংহে। শহরের পাশে কেওটখালী রেলওয়ে উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতায় নিযুক্ত হন। তিনি দীর্ঘ ২০ বছর এখানে শিক্ষকতা করেছেন। শিক্ষকতার পাশাপাশি তিনি হােমিওপ্যাথি চিকিৎসা করতেন। ১৯৭১ সালের ২২ এপ্রিল পাকবাহিনী ময়মনসিংহ শহরে হামলা চালায়। আত্মরক্ষার জন্য বদরুল হক চৌধুরী তার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে পাশের একটি খ্রিস্টান মিশনারিতে আশ্রয় নেন। ১ মে পাকবাহিনী তার দুই ছেলে জাহাঙ্গীর টাটা চৌধুরী এবং আনােয়ারুল আযীমকে ধরে নিয়ে যায়। ৩ মে আনােয়ারুল আযীমকে ছেড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু জাহাঙ্গীর টাটা চৌধুরী আর ফিরে আসেননি, পাক হানাদাররা তাকে হত্যা করে। কিছুদিন পর বদরুল হক চৌধুরী ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কাছে চড়পাড়ার মােড়ে একটি বাসা ভাড়া করেন। আটক ছেলের খোঁজ জানতে ৭ জুন তিনি গিয়েছিলেন ময়মনসিংহ সার্কিট হাউজে পাকসেনাদের ক্যাম্পে। এরপর তিনি আর ফিরে আসেননি। তার পরিবারের সদস্যরা বহু খোঁজাখুঁজির পর জানতে পারেন, ময়মনসিংহ রেলস্টেশনের কোয়ার্টারে তাকে হত্যা করা হয়েছে। পরে হাসপাতালের পাশের কবরস্থানে তাকে সমাহিত করা হয়। তার আরেক ছেলে সেকান্দার হায়াত চৌধুরীও মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হয়েছেন। শহীদ বদরুল হক চৌধুরী আট ছেলেমেয়ের বাবা ছিলেন।
সূত্র : শহীদ বুদ্ধিজীবী কোষ – আলী মাে. আবু নাঈম, ফাহিমা কানিজ লাভা