You dont have javascript enabled! Please enable it!
নূরুল আমিন খান
অবিভক্ত ভারতের আসামের তিনসুকিয়ায় ১৯৩৫ সালের ২২ নভেম্বর নূরুল আমিন খানের জন্ম। তাঁর বাবার নাম মােহাম্মদ সােলেমান খান, বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা উপজেলার শিকারপুরে । নূরুল আমিন খান কুমিল্লার ইউসুফ স্কুল ও ঢাকার নবাবপুর গভর্নমেন্ট হাই স্কুলে পড়াশােনা করেন। এরপর ঢাকা কলেজ থেকে আই. এসসি. পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি সাহিত্যে অনার্সে ভর্তি হন। ১৯৬০ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম. এ. পাস করেন। নূরুল স্কুলের ছাত্রাবস্থায় ভাষা আন্দোলনে অংশ নিয়ে স্বেচ্ছায় কারাবরণ করেন ও ঢাকা সেন্ট্রাল জেলে আটক ছিলেন। অনার্স পাস করেই নূরুল আমিন খান ফরিদপুর রাজেন্দ্র কলেজে শিক্ষকতা শুরু করেন। ১৯৬০ সালে এম. এ. পাসের পর চট্টগ্রাম কমার্স কলেজে যােগ দেন। ১৯৬১ সালে সি, এস, এস, পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে পাকিস্তান সিভিল সর্ভিসে যােগ দেন। তিনি লাহাের ট্রেনিং শেষ করার পর তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের সাতক্ষীরায় এস, ডি, ও. (মহকুমা প্রশাসক) নিযুক্ত হন। ১৯৬৫ সালে তিনি ময়মনসিংহে এ. ডি. সি. (জেনারেল) নিযুক্ত হন। ১৯৬৬ সালে নূরুল শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে বদলি হন।
১৯৬৮ সালের সেপ্টেম্বরে গভর্নমেন্ট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট’ বিষয়ে উচ্চতর প্রশিক্ষণের জন্যে নূরল ইংল্যান্ডের অক্সফোর্ডে যান। ১৯৬৯ সালে তাকে প্রথমে অর্থ মন্ত্রণালয়ে উপসচিব এবং পরে ওই বছরই বরিশালের ডেপুটি কমিশনার পদে নিয়ােগ দেওয়া হয়। ১৯৭০ সালের ডিসেম্বরে সাধারণ নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগকে সহযােগিতা করতে পারেন এই আশঙ্কায় পাকিস্তান সরকার তাকে ঢাকায় কৃষি মন্ত্রণালয়ে উপসচিব পদে বদলি করে। ১৯৭১ সালের ২৩ এপ্রিল নূরুল আমিন খান ও তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যকে সামরিক ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। কয়েকদিন আটক রাখার পর তার ব্যক্তিগত তিনটি বন্দুক, একটি রিভলভার ও কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র রেখে সবাইকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এর কিছুদিন পর ২০ মে নূরুল আমিন খান যখন অফিসে গিয়েছেন, তখন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর এক মেজর তাকে ফোন করে ব্যক্তিগত রিভলভার ফিরিয়ে আনতে সেনা ক্যাম্পে যেতে বলেন। এই যাওয়াই ছিল নূরুল আমিন খানের শেষ যাওয়া। তারপর থেকে তাঁর আর খোঁজ পাওয়া যায়নি। ধারণা করা হয়, পাকিস্তানি সেনারা ২০ মে রাতেই তাকে হত্যা করে।
ওই সময়ের পরিস্থিতি সম্পর্কে জানা যায় তাঁর স্ত্রী হুমায়রা আমিনের রচনায়। তিনি লিখেছেন : আমাদের বাসা ধানমন্ডির ১৯ নং রােডে। সার্বক্ষণিক নজর রাখা হতাে বাসার ওপর। এই সময় আমিন সাহেব গভীরভাবে চিন্তা করছিলেন কোনােক্রমে ভারতে যাওয়া যায় কি না। কিন্তু আমাকে, ছােট দুটি বাচ্চাকে নিয়ে যাওয়া প্রায় অসম্ভব ছিল। তারপর আমার আম্মা, বড় ভাই ও বােনেরা তখন পর্যন্ত আটক ছিল।  ২০ মে যথারীতি ৮টার দিকে উনি অফিসে গেলেন। ১২টার দিকে ফোন করে বললেন, মেজর (গােলাম মােহাম্মদ) তাঁকে তাদের ক্যাম্পে যেতে বলেছে রিভলভার ফিরিয়ে |আনতে ‘আরও বললেন, দুপুরে বাসায় ফিরে এসে খাবেন। আমি ২টা থেকে তাঁর জন্য অপেক্ষা করতে থাকলাম। অপেক্ষা করতে করতে যখন ৪টা বেজে গেল, তখন আমার সন্দেহ জাগতে লাগল। আমি তাড়াতাড়ি সেই মেজরকে ফোন করলাম। দেখি ফোনটা ডেড। তখন আমার সন্দেহ আরও গাঢ় হলাে। আমাদের। বাসার মােড়েই ছিল পিস কমিটির চেয়ারম্যানের বাসা। তিনি আমাদের দেশি ও পূর্বপরিচিত তাকে খবর পাঠাই। তিনি বলে পাঠালেন চিন্তার কোনাে কারণ নেই। সে রাতটা যে আমার কীভাবে কেটেছিল, তা এখন প্রকাশ করতে সত্যি। আমি একেবারেই অক্ষম। পরের দিন খোঁজ পাবার অনেক চেষ্টা করলাম। তৎকালীন চিফ সেক্রেটারি সাহেবের সাথেও দেখা করলাম। তারাও আমাকে আশ্বাস দিলেন যে খোজ নেওয়ার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করা হচ্ছে । কিন্তু সব চেষ্টাই ব্যর্থতায় পর্যবসিত হলাে। (স্মৃতি : ১৯৭১, প্রথম খণ্ড)

সূত্র : শহীদ বুদ্ধিজীবী কোষ –  আলী মাে. আবু নাঈম, ফাহিমা কানিজ লাভা

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!