You dont have javascript enabled! Please enable it!
নিত্যানন্দ পাল
নিত্যানন্দ পাল ছিলেন টাঙ্গাইল জেলার সন্তোষ ইউনিয়নের কাগমারী গ্রামের ক্ষিতীশচন্দ্র পাল ও সুশীলা সুন্দরী পালের ছেলে। তার জন্ম ১৯৩৮ সালের ২৮ জানুয়ারি। তিনি ছিলেন পরিবারের বড় সন্তান। নিত্যানন্দ ১৯৫৩ সালে সন্তোষ জাহ্নবী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিক পাস করেন। বড় ছেলে হওয়ায় তাঁর কাধে পরিবারের দায়িত্ব এসে পড়ে এবং তার শিক্ষাজীবনে ছেদ পড়ে। কিছুদিন বিরতির পর ১৯৫৭ সালে তিনি করটিয়া সা’দত কলেজ থেকে আই. এ. ও ১৯৬১ সালে বি. এ. পাস করেন। বি. এ. পাস করার পর স্থানীয় মগড়া পালন উচ্চ বিদ্যালয়ে তিনি কিছুদিন শিক্ষকতা করেন। ১৯৬৩ সালে মওলানা মােহাম্মদ আলী কলেজে প্রধান করণিক হিসাবে যােগ দেন। ১৯৬৭ সালে তিনি প্রাইভেট পরীক্ষার্থী হিসাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে এম. এ. পরীক্ষা দেন। প্রথমবার ফলাফল আশানুরূপ না হওয়ায় তিনি দ্বিতীয়বার পরীক্ষা দিয়েছিলেন। নিত্যানন্দ ১৯৬৮ সালে কাগমারী মওলানা মােহাম্মদ আলী কলেজে বাংলার প্রভাষক হিসাবে যােগ দেন। পাশাপাশি কলেজের গ্রন্থাগারিকের দায়িত্বও তিনি পালন করতেন। সাহিত্যের প্রতি ছিল তাঁর গভীর অনুরাগ। নিত্যানন্দ নিয়মিত গল্প-কবিতা-প্রবন্ধ লিখতেন, যা বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। নিত্যানন্দ বামপন্থি রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। অমায়িক, মিষ্টভাষী নিত্যানন্দ পাল শিক্ষার্থীদের প্রিয় ছিলেন।
সবার সাথেই তার সৌহার্দের সম্পর্ক ছিল। তিনি সংবেদনশীল মনের পরিচ্ছন্ন মানুষ ছিলেন। তিনি সবসময় ধবধবে সাদা ধুতি এবং শাট পরতেন। মুখে একটা হাসি লেগেই থাকত। যুদ্ধ শুরু হলে, বিশেষত হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর পাকিস্তানি হানাদারদের বর্বরতার কথা বিবেচনা করে অনেকেই তাকে দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নিতে অনুরােধ করেছিল। কিন্তু তিনি তাতে কান দেননি। বরং তিনি দেশ স্বাধীন হওয়ার বিষয়ে খুবই আশাবাদী ছিলেন। এলাকাবাসীর সাথে আলাপচারিতায় অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে বলতেন, “দেশ একদিন স্বাধীন হবেই, তবে আমরা হয়তাে সেদিন থাকব না ।” নিত্যানন্দ পালের মূল বাড়িতে ঢােকার মুখে ছিল একটি টিনের বাংলাে ঘর। নিত্যানন্দ পাল এ ঘরেই থাকতেন। ১৯৭১ সালে ২০ জুলাই রাত ১১টায় রাজাকার। বাহিনীর একটি দল নিত্যানন্দ পালের বাড়িতে হানা দেয়। এদের কয়েকজনের মুখ কালাে কাপড়ে ঢাকা ছিল। তার ঘরের দরজায় ধাক্কা দিয়ে ডাকাডাকি শুরু করে।
নিত্যানন্দের স্ত্রী রাজাকারদের কাছে তার জীবন ভিক্ষা চাইলে রাজাকাররা সবাইকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। রাজাকার বাহিনী বন্দুকের মুখে নিত্যানন্দকে ধরে নিয়ে। যায়। এরপর আর নিত্যানন্দ পালের খোঁজ পাওয়া যায়নি। স্বাধীনতার পর জানা যায়, ধরে নিয়ে যাওয়ার দিনেই টাঙ্গাইল জেলা সদর পানির ট্যাংকের নিচের বধ্যভূমিতে তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। স্বাধীনতা সংগ্রামের সময়েই নিত্যানন্দ পাল একটি কবিতা লিখেছিলেন, নাম কবরের কান্না’। সম্ভবত তিনি কবিতাটি পরিমার্জিত করার সময় পাননি। ওই কবিতায় তিনি লিখেছিলেন :হতভাগ্য শহীদের রক্তাক্ত দেহটাকে মাটি চাপা দিয়ে। সেদিনের ঘাতকের দল সৃষ্টি করেছিলাে যে ইতিহাস; বন্য-উল্লাস অথবা জল্লাদ বৃত্তির সে ইতিহাসকে ঘিরে। শহীদ-সমাধি আজও শতাব্দীকে করে উপহাস। নিত্যানন্দ পালের বিয়ে হয়েছিল ১৩৭৪ সনে ২৯ বৈশাখ, সন্ধ্যা রানী পালের সাথে। তাঁদের সংসারে বনানী ও স্বপ্না নামের দুইটি মেয়ে ছিল। ১৯৭৩ সালে মওলানা মােহাম্মদ আলী কলেজের পাঠাগারের নাম ‘শহীদ নিত্যানন্দ পাঠাগার করা হয়েছে।

সূত্র : শহীদ বুদ্ধিজীবী কোষ –  আলী মাে. আবু নাঈম, ফাহিমা কানিজ লাভা

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!