You dont have javascript enabled! Please enable it! জিতেন্দ্রলাল দত্ত - সংগ্রামের নোটবুক
জিতেন্দ্রলাল দত্ত
ঝালকাঠি জেলার নলছিটির বিরাট গ্রামে ১৯০৭ সালে আইনজীবী জিতেন্দ্রলাল দত্তের জন্ম। তার বাবার নাম প্রসন্নকুমার দত্ত। বিরাট গ্রামের দত্ত পরিবার ছিল একটি বর্ধিষ্ণু পরিবার। চার ভাইয়ের মধ্যে জিতেন্দ্রলাল ছিলেন তৃতীয়।  বি. এ. পাস করার পর জিতেন্দ্রলাল দত্ত কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। ইতিহাসে প্রথম পর্ব পাস করেছিলেন। কিন্তু পরে তিনি আইনশাস্ত্র পাস করে ১৯৪১ থেকে ১৯৪৩ সাল পর্যন্ত কলকাতা আলীপুর আদালতে আইন ব্যবসা করেন। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের কারণে তিনি কলকাতা ছেড়ে বরিশাল চলে আসেন ও ১৯৪৩ সালে বরিশাল বারে যােগ দেন। জিতেন্দ্রলাল নলছিটি থানার সিদ্ধকাঠি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি কয়েকটি খাল সংস্কার করেন এবং একাধিক হাট প্রতিষ্ঠা করেন। এছাড়া একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ও তিনি প্রতিষ্ঠা করেন। বহু সমাজসেবামূলক কাজের সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। তিনি একজন ভালাে ফুটবল খেলােয়াড় ছিলেন।  পেশাগত কারণে জিতেন্দ্রলাল দত্ত বরিশালে থাকতেন। বরিশালে পাকবাহিনী হত্যাযজ্ঞ শুরু করলে তিনি পরিবার নিয়ে নিজের গ্রামের বাড়ি চলে যান। আশেপাশের প্রায় দেড়শ মানুষ তাদের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিল। ১৯৭১ সালের মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে সেখানেও পাকিস্তানিদের সহযােগী রাজাকার বাহিনী হামলা চালায় এবং বাড়ির সমস্ত সম্পদ লুট করে নিয়ে যায়।
১৯৭১ সালের ১ জুন রাজাকাররা তাকে গ্রেফতার করে। তার সঙ্গে বড় ছেলে সাংবাদিক মিহির দত্ত এবং তৃতীয় ছেলে সুবীর দত্তকেও গ্রেফতার করা হয়। ১০ দিন বন্দি থাকার পর ১২ জুন তাকে মুক্তি দেওয়া হয়। জিতেন্দ্রলাল দত্ত জেল থেকে বেরিয়ে দেখেন এক রাজাকার তার বরিশালের বাসাটি দখল করে নিয়েছে। বহু কষ্টে  তিনি বাসা উদ্ধার করেন। তাঁর বড় ছেলে মিহির দত্তকে পাকিস্তানি সেনারা ১৯৭১ সালের ১ জুলাই গ্রেফতার করে প্রথমে যশাের ক্যান্টনমেন্ট ও পরে কেন্দ্রীয় কারাগারে আটক রাখে। ১৯৭১ সালের ৪ সেপ্টেম্বর মিহির মুক্তি পান। তার মেজো ছেলে সুবীর দত্ত শহীদ হন ৩ জুন। ১৯৭১ সালের ১৪ অক্টোবর ভােরবেলা। একদল রাজাকার জিতেন্দ্রলাল। দত্তের বাড়িতে হানা দেয়। তারা জিতেন্দ্রলাল এবং তার বড় ছেলে মিহির দত্তকে ধরে ৩ নং পুলের ওপর নিয়ে যায়। সেখানে জিতেন্দ্রলালকে পেছন থেকে গুলি করে খালের পানিতে ফেলে দেয়। মিহির দত্ত রাজাকারদের সাথে ধস্তাধস্তি শুরু করলে রাজাকারদের ছােড়া একটি গুলি তার পেটে লাগে রাজাকাররা তাকেও খালের পানিতে ফেলে দেয়। তিনি কোনােমতে খাল সাঁতরে পাশের জঙ্গলে। গিয়ে লুকান। শহীদ জিতেন্দ্রলাল দত্তর স্ত্রীর নাম শােভা রানী। তাঁদের সংসারে পাঁচ ছেলে ও তিন মেয়ে ছিল।

সূত্র : শহীদ বুদ্ধিজীবী কোষ –  আলী মাে. আবু নাঈম, ফাহিমা কানিজ লাভা