You dont have javascript enabled! Please enable it!
জালাল উদ্দিন আখন্দ
জালাল উদ্দিন আখন্দ লালমনিরহাটে রেলওয়ে কর্মকর্তা ছিলেন। ১৯৭১ সালের মার্চে তিনি সপরিবারে থাকতেন লালমনিরহাট রেলওয়ে কোয়ার্টারে। কোয়ার্টারের আশপাশে ছিল অবাঙালিদের বাস। বাঙালিদের ওপর পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও অবাঙালি রাজাকারদের নৃশংসতায় অনেকেই তাকে নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি কোথাও যেতে চাননি। জালাল উদ্দিনের বড় ছেলে ছিলেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ইলেকট্রিক ইঞ্জিনিয়ার। ওই সময়ে তিনি করাচিতে ছিলেন। তার বড় দুই মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছিল, তারা ছিল ঢাকায় শ্বশুরবাড়িতে। চার মেয়ে ও এক ছেলে জালাল উদ্দিনের সাথেই থাকত। তার মেজো ছেলে মনিরুল ইসলাম আখন্দ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস্য বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হওয়ায় তিনিও লালমনিরহাট চলে আসেন। ৫ এপ্রিল বিকালে জালাল উদ্দিন বাইরের ঘরে আসরের নামাজ পড়ছিলেন, তার এক ছেলে সেখানেই ছিল। তাঁর স্ত্রী, দুই ছেলে ও চার মেয়ে ছিলেন ভেতরের ঘরে। এমন সময় কোয়ার্টারের প্রধান ফটকে বাইরে থেকে ধাক্কার শব্দ শুনে জালাল উদ্দিন নিজেই এগিয়ে যান। তিনি গিয়ে দরজা খুলতেই অবাঙালিরা তাকে ধরে নিয়ে যায়। কয়েকজন অবাঙালি ঘরে ঢুকে মেজো ছেলে মনিরুলকে ধরে নিয়ে যায়। ছােট ছেলেকে ধরলেও পরে তার বয়স কম বলে ছেড়ে দেয়। জালাল উদ্দিনের ছেলেমেয়েদের প্রাইভেট শিক্ষক মােহাম্মদ আলী, তার স্ত্রী, মেয়ে, ভাইসহ তাঁদের কোয়ার্টারে আশ্রয় নিয়েছিলেন।
মােহাম্মদ আলী এবং তার ভাইকেও অবাঙালিরা ধরে নিয়ে যায়। যাওয়ার সময় তারা বাড়ির মূল ফটক বাইরে থেকে বন্ধ করে দিয়ে যায়, যে কারণে বাড়ির কেউ বের হতে পারেনি। বাইরে বের করার পর জালাল উদ্দিন, তার ছেলে, মােহাম্মদ আলী ও তার ভাইকে এক সারিতে দাড় করিয়ে ব্রাশফায়ার করে পাকিস্তানি সেনারা। মােহাম্মদ আলী গুলি করার আগেই মাটিতে পড়ে যান। ওই রাতে তিনি লুকিয়ে বাড়িতে আসেন। তাঁর কাছ থেকেই জালাল উদ্দিনের পরিবারের সদস্যরা জানতে পারেন যে গুলিতে জালাল উদ্দিনের মাথার খুলি উড়ে গেছে। মােহাম্মদ আলীর ভাইয়ের হাত গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে গিয়েছিল। বাঁচার তাগিদে অনেক কষ্টে তিনি হামাগুড়ি দিয়ে কোয়ার্টারে ফিরে এসেছিলেন। পরে হামাগুড়ি দিয়ে তিনি হাসপাতালের দিকে এগােতে থাকলে অবাঙালিরা সেটা দেখে ফেলে। অবাঙালিরা তাঁকে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে জখম করে এরপর জোরে ধাক্কা দিয়ে গর্তে ফেলে দেয়। সেখানেই তিনি শহীদ হন। জালাল উদ্দিন শহীদ হওয়ার পর অবাঙালি আর রাজাকারদের ভয়ে তিন মাস চার মেয়েকে নিয়ে বন্দি জীবন কাটান তার স্ত্রী। এরপর বহু কষ্টে ঢাকায় আসতে সক্ষম হন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর শহীদ জালাল উদ্দিন আখন্দের স্ত্রী ছেলেমেয়েদের নিয়ে গ্রামে চলে যান। কিন্তু জালাল উদ্দিনের ভাইয়েরা তাকে পারিবারিক জমির মালিকানা বুঝিয়ে দেয়নি। কোনাে ধরনের সরকারি সহযােগিতাও তারা পাননি, বহু কষ্টে তিনি ছেলেমেয়েদের বড় করেছেন।

সূত্র : শহীদ বুদ্ধিজীবী কোষ –  আলী মাে. আবু নাঈম, ফাহিমা কানিজ লাভা

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!