You dont have javascript enabled! Please enable it!
খন্দকার আবুল কাশেম
খন্দকার আবুল কাশেমের জন্ম ১৯৪৪ সালের ৩ জানুয়ারি, পাবনা জেলার সাঁথিয়া উপজেলার চোমরাপুর গ্রামে। তাঁর বাবার নাম খন্দকার নবাব আলী, মায়ের নাম সাহেরা খাতুন। দুই ভাই ও দুই বােনের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার ছােট। দেখতে কালাে বলে ছােটবেলায় সবাই তাকে আদর করে ‘কালু বলে ডাকত। আবুল কাশেমের বয়স যখন মাত্র নয় মাস, তখন তার বাবা নবাব আলী মারা যান। তিনি স্কুল শিক্ষক ছিলেন। গ্রামের স্কুল থেকে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করার পর তাকে ভর্তি করা হয় কুড়িগ্রামের রাজারহাট হাই স্কুলে। প্রতিবেশী আবদুল বাতেন ছিলেন ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক। তার বাসায় থেকেই আবুল কাশেম পড়াশােনা করতেন। ১৯৬০ সালে তিনি দ্বিতীয় বিভাগে ম্যাট্রিক পাস করেন। এরপর পাবনা এডওয়ার্ড কলেজ থেকে ১৯৬২ সালে দ্বিতীয় বিভাগে আই. এ. এবং ১৯৬৪ সালে দ্বিতীয় বিভাগে বি, এ. পাস করেন। শিক্ষকতা করার আকাক্ষা থেকে ১৯৬৬ সালে ঢাকা। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে দ্বিতীয় বিভাগে বি. পি, এড. পাস করেন আবুল কাশেম। আবুল কাশেম ১৯৬৬ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি কাশিনাথপুর এ. এল, হাই স্কুলে শিক্ষক হিসাবে যােগ দেন। ওই বছর তিনি ঢাকায় ড. মু. শহীদুল্লাহর অধীনে বাংলা ভাষার ওপর দেড় মাসের একটি সংক্ষিপ্ত কোর্স করেন। ১৯৬৯ সাথে কাশেম রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে এম. এ. ডিগ্রি নেন। ১৯৭০ সালে তিনি পাবনা এডওয়ার্ড কলেজে যােগ দেন। এখানে তিনি কলেজ হােস্টেলেই থাকতেন। ভাষা সৈনিক আব্দুল মতিনের ঘটকালীতে ১৯৭০ সালের ২২ মে মৌলুদা বেগমের সাথে তার বিয়ে হয়। মৌলুদা বেগম ছিলেন প্রখ্যাত বামপন্থি নেতা আলাউদ্দিনের ভাতিজি। বিয়ের কিছুদিন পর কাশেম সাভার পাকিস্তান ক্যাডেট কোরের প্রশিক্ষণ নেন।
২৫ মার্চের কালরাতের পর কলেজ বন্ধ হয়ে গেলে আবুল কাশেম গ্রামে চলে যান। কিন্তু সেখানে তিনি নিশ্ৰুপ বসে থাকতে পারেননি। গােপনে মুক্তিযােদ্ধাদের সাহায্য-সহযােগিতা করতে শুরু করেন। এপ্রিল মাসে সরকারি চাকরিজীবীদের চাকরিতে যােগ দেওয়ার নির্দেশ আসায় পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তার কথা ভেবে তিনি ২০ জুলাই চাকরিতে যােগ দিতে যান। দুই বন্ধুসহ আবুল কাশেম থাকতেন পাবনা শহরের শালগাড়িয়ার এক বাসায়। ওই সময় তার স্ত্রী ছিলেন সন্তানসম্ভবা। ২৮ আগস্ট তিনি স্ত্রীকে চিকিৎসার জন্য পাবনা নিয়ে আসেন। স্ত্রীসহ থাকার জন্য আলাদা বাসাও ঠিক করেন। তার স্ত্রী তখন থাকতেন তার বাবা-মার সাথে। ১৯৭১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর সকালে স্ত্রীর সাথে দেখা করে তিনি গ্রামের বাড়ি যান মাকে দেখার জন্য। এরপর তার আর কোনাে খোঁজ পাওয়া যায়নি শােনা যায়, আবুল কাশেমকে আটক করে নগরবাড়ি পাকসেনাদের ক্যাম্পে নিয়ে হত্যা করা হয়। শহীদ খন্দকার আবুল কাশেমের মৃত্যুর মাসখানেক পর তার স্ত্রী একটি ছেলে সন্তানের জন্ম দেন। বাবার ইচ্ছা অনুসারে তার নাম রাখা হয় ‘কনক’।
সূত্র : শহীদ বুদ্ধিজীবী কোষ –  আলী মাে. আবু নাঈম, ফাহিমা কানিজ লাভা
error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!