খন্দকার আবু তালেব
সাংবাদিক ও আইনজীবী খন্দকার আবু তালেব জন্মেছিলেন ১৯২১ সালের ২৩ মার্চ, সাতক্ষীরা সদর থানার সাতানি গ্রামে। তার বাবার নাম খােন্দকার আবদুর রউফ, মায়ের নাম রােকেয়া খাতুন। বাবা-মায়ের ১১ সন্তানের মধ্যে সবচেয়ে বড় ছিলেন
খন্দকার আবু তালেব। পরিবারের বড় সন্তান হওয়ায় তার দায়িত্বও ছিল বেশি। বাবার আয়-রােজগার ভালাে ছিল না। সংসার চালাতে তিনি হিমশিম খাচ্ছিলেন। তাই তিনি চাইতেন, বড় সন্তান সংসারের দায়িত্ব কিছুটা পালন। করুক, আয়-রােজগার করুক। তবে মা চাইতেন, তালেব লেখাপড়া করুক। মায়ের উত্সাহেই তিনি লেখাপড়ার প্রতি আগ্রহী হয়েছেন। তিনি অনেক কষ্ট করেই লেখাপড়া করেছেন। লেখাপড়ার জন্যে গ্রামে অন্যের বাড়িতে জায়গির থাকতে হয়েছে। জায়গিরবাড়ির নানা কাজে সাহায্য করতে হয়েছে। ১৯৪৪ সালে তিনি সাতক্ষীরা পি, এন, হাই স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন। এরপর খন্দকার আবু তালেব পাড়ি জমান কলকাতায়, ভর্তি হন রিপন কলেজে (বর্তমান সুরেন্দ্রনাথ কলেজ)। একই সঙ্গে ক্যাম্বেল হাসপাতালে কেরানির চাকরি নেন। দিনে চাকরি, আর রাতে কলেজে ক্লাস করতেন তালেব। ১৯৪৬ সালে আই, এ. পাস করেন তিনি। দেশভাগের পর তিনি চলে আসেন ঢাকায়। এখানেও লেখাপড়ার পাশাপাশি তাকে চাকরি করতে হয়েছে। ১৯৪৮ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বি. কম. পাস করে পেশা হিসাবে বেছে নেন সাংবাদিকতা। পরে ১৯৫৬ সালে তিনি এল, এল, বি, ডিগ্রিও নিয়েছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অ্যাডভােকেট হিসাবে সনদও নিয়েছিলেন।
খন্দকার আবু তালেবের সাংবাদিক জীবন শুরু হয় “দৈনিক আজাদ’ পত্রিকায়, সহ-সম্পাদক হিসাবে। পরে যোগ দেন দৈনিক সংবাদ পত্রিকায়, প্রায় পাচ বছর সহসম্পাদক হিসাবে সেখানে তিনি কাজ করেন। এরপর যােগ দেন দৈনিক ইত্তেফাকে’ প্রধান প্রতিবেদক হিসাবে। ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত তিনি দৈনিক ইত্তেফাকের প্রধান প্রতিবেদকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৬ সালে আইয়ুব সরকার ইত্তেফাক পত্রিকা বন্ধ করে দিলে তিনি ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসাবে আবদুল গাফফার চৌধুরী সম্পাদিত সান্ধ্যকালীন পত্রিকা “দৈনিক আওয়াজ পত্রিকা প্রকাশ করেন। এ পত্রিকায় তিনি কাগজের মানুষ’ শীর্ষক ধারাবাহিক নিবন্ধ প্রকাশের মাধ্যমে সাংবাদিকতা পেশার বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন আওয়াজ পত্রিকাতেই সর্বপ্রথম ছয় দফা’র মূল ইংরেজি ভাষ্যের বাংলা অনুবাদ প্রকাশিত হয় এবং সেটার অনুবাদ করেছিলেন আবু তালেব।
দৈনিক আওয়াজ বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর ১৯৬৯ সালে আবার ‘দৈনিক ইত্তেফাকে ফিরে যেতে আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন আবু তালেব। কিন্তু ইত্তেফাক কর্তৃপক্ষ তাকে। আর পুনর্বহাল করেনি। ১৯৬৯ সালে তিনি বি, এন, আর, বিজ্ঞাপনী সংস্থায় আইনজীবী। হিসাবে যােগ দেন। একই সঙ্গে ‘দৈনিক পয়গাম’ পত্রিকায় ফিচার সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। আর কাগজের মানুষ’ শীর্ষক কলামটি তিনি আবার লেখা শুরু করেন। “দৈনিক পয়গামে’। একই সঙ্গে বিভিন্ন সংবাদপত্রের আদালত প্রতিবেদক হিসাবেও কাজ করেন। এছাড়া আবু তালেব বিভিন্ন সময়ে দৈনিক ইনসাফ’, ‘পাকিস্তান অবজারভার’, ‘মর্নিং নিউজ’ এবং দৈনিক ইত্তেহাদেও কাজ করেন। প্রতিবেদন লেখার পাশাপাশি খন্দকার আবু তালেব দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায় ‘লুব্ধক’ ছদ্মনামে নিয়মিত কলাম লিখতেন। তিনি ‘খােশনবিশ ছদ্মনামে ‘দে গরুর গা ধুইয়ে’ শিরােনামেও কলাম লিখতেন। ১৯৬৪ সালে পাকিস্তানে ফাতেমা জিন্নাহ বনাম আইয়ুব খানের ভােটযুদ্ধের সময় বাউণ্ডুলে’ ছদ্মনামে ‘ভােটরঙ্গ’ শিরােনামে কলাম লিখে তিনি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন। আবু তালেব মুদ্রণ মাধ্যমেই বেশিরভাগ সময় কাজ করলেও রেডিও পাকিস্তান ঢাকা কেন্দ্রে অনুষ্ঠান করেও সুখ্যাতি অর্জন করেন। ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময় তিনি ইসরাফিল” শিরােনামে একটি অনুষ্ঠান গ্রন্থনা ও উপস্থাপনা। করতেন। পরে সাময়িকী’ ও ‘প্রত্যয়’ শিরােনামে দুটি অনুষ্ঠান গ্রন্থনা ও উপস্থাপনা করতেন। ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত এই অনুষ্ঠান দুটি একটানা প্রচারিত হয়। সব কটি অনুষ্ঠানই ছিল ব্যাপক জনপ্রিয়।
আপসহীন সাংবাদিক নেতা ছিলেন খন্দকার আবু তালেব। বাংলাদেশের সাংবাদিক ইউনিয়নের জন্ম ও বিকাশের জন্য যাদের অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে আছে, তাদের মধ্যে একজন তিনি। ১৯৬১-‘৬২ সালে তিনি পূর্ব পাকিস্তান সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। সাংবাদিকদের ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলনে সমর্পিত এই নিষ্ঠাবান ও সাহসী মানুষটি সংগ্রাম করে গেছেন সাংবাদিকদের স্বার্থসংরক্ষণের জন্যে। সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে সরকার কিংবা মালিকপক্ষের অন্যায়ের প্রতিবাদ করার জন্য সবসময় প্রস্তুত থাকতেন তিনি। শুধু সাংবাদিক ইউনিয়নের নেতা হিসাবে নয়, আইনজীবী হিসাবেও অনেকবার সাংবাদিকদের পক্ষে আদালতে দাঁড়িয়েছেন তিনি। সংবাদকে রসগ্রহী করে পরিবেশন করার অসাধারণ ক্ষমতা ছিল আবু। তালেবের। বাস্তব জীবনেও তিনি ছিলেন হাসিখুশি আমুদে মানুষ। তার স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে সাংবাদিক আবেদ খান লিখেছেন : যেটি হয়ত সাধারণ চোখে খবর পদবাচ্য নয়, তিনি উহার বুক চিরিয়াও খবর টানিয়া আনিতে পারিতেন। ব্যঙ্গাত্মক ভাষায় রসালাে করিয়া এমনভাবে উহা পরিবেশন করিতেন, যাহা পাঠকচিত্তকে আন্দোলিত করিত। তাহার কথাবার্তায়, রঙ্গ-রসিকতায়, মজলিশি আড্ডায় খন্দকার আবু তালেব ছিলেন তদানীন্তন সাংবাদিকতা পেশার ক্ষুদ্র পরিধির মধ্যে অনন্য এবং অতুলনীয়। তিনি নিজেকে। কৌতুকাভিনেতা তুলসী চক্রবর্তীর সামগ্রিক অবয়বের সঙ্গে মিলাইয়া বলিতেন, তুলসী চক্রবর্তী মাথায় উঁচু, আর আমি দাঁতে উঁচু। … তবে কখনও তাহাকে কেহ বিষপ্ন দেখিয়া কারণ জিজ্ঞাসা করিলে তিনি বলিতেন, ‘ওরে, দাঁত উঁচু লােকের হাসি-কান্না বােঝা যায় না।’ আমাদের সাংবাদিকতা পেশার ইতিহাসে বিভিন্ন যুগে ত্রয়ী’র সমাহার। ঘটিয়াছে। একটি এয়ী ক্ষুদ্রাকার হইলেও পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে পেশার অঙ্গনকে আলােকমালায় উদ্ভাসিত করিয়া রাখিয়াছেন। এই ত্রয়ী ছিলেন। সিরাজুদ্দীন হােসেন, খন্দকার আবু তালেব এবং তােহা খান। (প্রথম দুইজনই। স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদ)। একসময় এই তিনজনই ছিলেন আমাদের সংবাদপত্র জগতের অত্যন্ত মূল্যবান সম্পদ। সিরাজুদ্দীন হােসেনের মেধাবী পরিচালনা ও নিউজ এডিটরশিপ, খন্দকার আবু তালেবের রিপােটিং এবং তােহা খানের অনুবাদ। ও সাব এডিটিং সংবাদপত্র জগতে ঈর্ষণীয় বস্তু ছিল।
সাংবাদিক, সাহিত্যিক, নাট্যকার, ডাক্তার জহুরুল ইসলামের ভাষায় : খন্দকার আবু তালেব ছিলেন রবীন্দ্র সাহিত্যের চলমান অভিধান। রবীন্দ্রনাথের কোন রচনা কোন গ্রন্থের কোন খণ্ডের কত পৃষ্ঠায় আছে, তা ছিল খন্দকার আবু তালেবের কণ্ঠস্থ । রবীন্দ্র বিষয়ে কেউ কিছু জিজ্ঞেস করতে দেরি করলেও তালেব সাহেবের কাছ থেকে জবাব পেতে বিলম্ব হতাে না। রাজনীতির সাথে সক্রিয়ভাবে যুক্ত না থাকলেও স্বাধিকার আন্দোলনের সাথে সম্পূর্ণ একাত্ম ছিলেন আবু তালেব। শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে তার আন্তরিক ঘনিষ্ঠতা ছিল। ১৯৭০ সালে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারের অনুবাদও করেছিলেন তিনি। ১৯৭১ সালের অসহযােগ আন্দোলনের সাথে নানাভাবে যুক্ত ছিলেন। খন্দকার আবু তালেবের বাড়ি ছিল মিরপুরে। মিরপুর ১০ নম্বর সেকশনের বিব্লকের ২ নম্বর রােডে অবস্থিত ১৩ নম্বর বাড়িটি তার। আর সেখানে বেশিরভাগ বাসিন্দাই ছিল অবাঙালি। ১৯৭১ সালের মার্চে অসহযােগ আন্দোলন শুরুর আগে থেকেই মিরপুর এলাকার অবাঙালিরা স্থানীয় বাঙালিদের নানা হুমকি দিয়ে আসছিল। ১০ নম্বর সেকশনের এ ব্লকের ৪ নম্বর রােডের ১ নম্বর বাড়িতে ছিল মাদারে মিল্লাত উর্দু মিডিয়াম স্কুল। পাকিস্তান সরকার ২৩ মার্চকে ‘পাকিস্তান দিবস’ ঘােষণা করে।
বিপরীতে ওইদিনকে বাঙালিরা ঘােষণা করে শােক দিবস। এরই অংশ হিসাবে বাঙালিদের পক্ষ থেকে গােপনে মাদারে মিল্লাত উর্দু মিডিয়াম স্কুলে কালাে পতাকার সাথে অর্ধনমিত করে বাংলাদেশের নতুন পতাকা তােলা হয়। এতে মিরপুরের অবাঙালিরা আরও ক্ষেপে ওঠে। পরিস্থিতি খারাপ হতে থাকলে আতঙ্কে বাঙালিরা দলে দলে মিরপুর ছাড়তে থাকে। তার স্ত্রী রাবেয়া সে সময় সন্তানসম্ভবা। ২৪ মার্চ খন্দকার আবু তালেব পরিবারের সকলকে পাঠিয়ে দেন চামেলীবাগে তার বােনের বাসায়। নিজে রয়ে যান মিরপুরে। উদ্দেশ্য পরিস্থিতি সরেজমিনে দেখা। কিন্তু রাতে পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটে। বিভিন্ন স্থানে বােমা ফাটাতে থাকে অবাঙালিরা। ভাঙচুর আর লুটপাট করতে থাকে। ২৫ মার্চ সকালে আবু তালেব বােনের বাসা চামেলীবাগে চলে আসেন। মিরপুরের অবস্থা সকলকে জানান তিনি। অন্যদিকে মিরপুর থেকে আসার পর থেকেই আবু তালেবের স্ত্রী রাবেয়া খাতুন কিছুটা অস্বাভাবিক আচরণ করছিলেন। অবাঙালিদের নিষ্ঠুরতা এবং ঘটনার আকস্মিকতায় তিনি অপ্রকৃতিস্থ হয়ে পড়েন।
২৫ মার্চ বিকেলে আবু তালেব যান বন্ধু ও সহকর্মী সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হােসেনের বাসায়। ফেরেন রাত ১০টার পর। বাসায় ফিরে আসার এক-দেড় ঘন্টার মধ্যেই পাকিস্তান সেনাবাহিনী আক্রমণ করে রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে। আবু তালেবের বােনের বাসাটি ছিল পুলিশ লাইন্সের একেবারে পাশেই। মাঝখানে শুধু কাঁটাতারের বেড়া। তাই সবই ঘটছিল চোখের সামনে। সারারাত চলে আক্রমণপাল্টা আক্রমণ। সকালের দিকে গােলাগুলির শব্দ কিছুটা কমে আসে। বাসার লােকজন উকি দিয়ে দেখে বাড়ির চারিদিকে পুলিশের ফেলে যাওয়া অস্ত্র-গােলাবারুদ বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে আছে। ভীত হয়ে পড়েন বাড়ির লােকজন। পাকসেনারা এসব দেখলে বাড়িতে আক্রমণ করে বসতে পারে, তাই বাড়ির সকলে মিলে সব অস্ত্র কাঁটাতারের বেড়ার বাইরে ফেলে আসে। কিন্তু তাতেও স্বস্তি পাচ্ছিলেন না কেউ। তাই দেয়াল টপকে সকলে পাশের বাড়িতে আশ্রয় নেন। ২৬ মার্চ সারাদিন-সারারাত পাশের বাড়ির একটি ঘরে গাদাগাদি করে কাটিয়ে দিতে হয় সকলকে। পরদিন কারফিউ শিথিল হলে সবাই বােনের বাসায় ফিরে আসেন। ২৮ মার্চ ভাের ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত কারফিউ শিথিল করা হয়। সকালবেলা সুযােগ পেয়েই আবু তালেব ছুটে যান ইত্তেফাক অফিসের পরিস্থিতি দেখার জন্য। ২৫ মার্চ রাতেই পাকিস্তানি বাহিনী ইত্তেফাক ভবন কামান দেগে ধ্বংস করে দিয়েছিল। তিনি সেখানে কয়েকটি পােড়া লাশ দেখতে পান। কিন্তু কাউকে চেনার উপায় ছিল না। বেদনাহত মন নিয়ে তিনি ফিরে আসেন। পরিস্থিতি বিপজ্জনক জেনেও মিরপুরে যাওয়ার জন্য অস্থির হয়ে ওঠেন আবু তালেব।
আপনজন-বন্ধুদের নিষেধ তিনি শােনেননি। বন্ধুদের তাে সবসময়ই বলতেন, “আমার কিছু হবে না। ওরা আমাকে চেনেই। আমি তাে ওদের কোনাে ক্ষতি করিনি।” কিন্তু মিরপুর থেকে আর ফিরে আসতে পারেননি খন্দকার আবু তালেব। ঘাতকের ছুরির আঘাতে তার ক্ষতবিক্ষত মৃতদেহ পড়ে ছিল তাঁরই মিরপুরের বাড়ির সামনে সে সময়ের স্মৃতি তুলে ধরে শহীদ খন্দকার আবু তালেবের মেয়ে সখিনা খন্দকার লিখেছেন : ১৯৭১ সালে আমাদের বাড়ি ছিল মিরপুরে। মার্চে আমরা মিরপুরের বাড়ি ছেড়ে চলে গেলাম আরামবাগে। সেদিন ২৯ মার্চ, আব্বা যাচ্ছিলেন অফিসের দিকে। পথে ইত্তেফাক-এর অবাঙালি চিফ অ্যাকাউন্ট্যান্ট আবদুল হালিমের সঙ্গে দেখা হয় আব্বার। হালিম গাড়িতে করে আব্বাকে নিয়ে যান মিরপুরে। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে মিরপুর থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন অবাঙালি জহির খান। আব্বা তাকে সমর্থন করেছিলেন। এ কারণে স্থানীয় জামায়াতপন্থি বাঙালি ও অবাঙালিদের আক্রোশ ছিল আব্বার ওপর। আবদুল হালিম আব্বাকে মিরপুরে। এনে কাদের মােল্লার হাতে তুলে দিয়েছিল। তারপরের ইতিহাস আর বলতে চাই।
আমার আব্বার খণ্ড-বিখণ্ড লাশ আমি আর দেখিনি। দেখতে চাইওনি। শুধু বুঝেছি, আমাদের এতিম করে দেওয়া হলাে। কেন ওরা আব্বাকে হত্যা করেছিল একাত্তরের মার্চে? আব্বার সাংবাদিকতা, আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পৃক্ততা ওদের জ্বলুনি বাড়িয়ে দিয়েছিল। আবু তালেব শহীদ হওয়ার পর ভয়াবহ এক অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েন অপ্রকৃতিস্থ রাবেয়া খাতুন এবং তাদের তিনটি শিশু সন্তান। একাত্তরে পুড়িয়ে দেওয়ার পর শহীদ খন্দকার আবু তালেবের বাড়িটি অবাঙালিদের দখলে চলে যায়। স্বাধীনতা-উত্তরকালে তাঁর পরিবার অনেক কষ্টে উদ্ধার করে মিরপুরের বাড়িটি। বাড়ি ফিরে পাওয়ার পরও দীর্ঘ সময় কঠিন বাস্তবতার মুখােমুখি হতে হয়েছে তার পরিবারকে। তার স্মৃতি স্মরণীয় করে রাখার জন্যে ১৯৭৫ সালে ঢাকার মিরপুর ১০ নম্বর সেকশনে গড়ে তােলা হয় শহীদ আবু তালেব উচ্চ বিদ্যালয়। ২০১২ সালের ২৮ মে শহীদ সাংবাদিক খন্দকার আবু তালেব হত্যাকাণ্ডের বিচার শুরু হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে। হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত হন জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মােল্লা। আদালত তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয় এবং তা কার্যকর করা হয়েছে।
সূত্র : শহীদ বুদ্ধিজীবী কোষ – আলী মাে. আবু নাঈম, ফাহিমা কানিজ লাভা