খগেন্দ্রচন্দ্র মজুমদার
খগেন্দ্রচন্দ্র মজুমদারের জন্য ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার চণ্ডিপাশা ইউনিয়নের খামারগাঁও গ্রামে, ১৯২৬ সালে। তার বাবার নাম উপেন্দ্রচন্দ্র মজুমদার। তাদের। বাড়িটি মজুমদার বাড়ি নামে পরিচিত। তাঁরা ছিলেন তিন ভাই। খগেন্দ্রচন্দ্র মজুমদার আই. এ. পাস করে এল, এম. এফ. প্রশিক্ষণ নেন। এরপর তিনি পল্লী চিকিৎসক হিসাবে নিজের এলাকায় চিকিৎসা করা শুরু করেন। এক ভাই হীরেন্দ্রচন্দ্র মজুমদার ছিলেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক, অন্য ভাইয়ের নাম ভূপেন্দ্রচন্দ্র মজুমদার। মুক্তিযুদ্ধের সময় তারা মুক্তিযােদ্ধাদের সহযােগিতা। করেছেন। ওই অঞ্চলে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হামলা ও লুটতরাজ শুরু হলে পরিবারের সদস্যদের নিরাপদ স্থানে রেখে তিন ভাই বাড়িতেই অবস্থান করছিলেন। ১৯৭১ সালের ২৬ নভেম্বর একদল রাজাকার-আলবদর তাদের বাড়িতে হানা দেয়।
এবং তিন ভাইকে ধরে নিয়ে যায়। পরিবারের সদস্যদের ভাষ্যমতে, মজুমদার বাড়ির বছরচুক্তি কামলা (কাজের লােক) আব্দুর রব ও তারা মিয়া পাকিস্তানি হানাদারদের সঙ্গে গােপনে আতাত করে। তাদের বাড়ি ও সম্পত্তি দখলের চক্রান্ত করে। তারা পাশের এলাকা থেকে আরও রাজাকার, আলবদর নিয়ে এসে মজুমদার বাড়ি ঘিরে ফেলে। এরপর তিন ভাইকে ধরে পিঠমােড়া করে বেঁধে নিয়ে যায় পাশের বারইগ্রাম মাদ্রাসায় আলবদর বাহিনীর ক্যাম্পে। সেখান থেকে তাদের নিয়ে যাওয়া হয় পাকিস্তানি সেনাদের ক্যাম্পে। রাজাকার-আলবদরদের পক্ষ থেকে খবর পাঠানাে হয়, মােটা অঙ্কের টাকা পেলে তিন ভাইকে ছেড়ে দেওয়া হবে। পরিবারের সদস্যরা ছয় হাজার টাকা জোগাড় করে রাজাকার ক্যাম্পে পাঠালেও রাজাকাররা তিন ভাইকে ফেরত দেয়নি। তাদের আর কোনাে খোঁজ পরিবারের সদস্যরা পায়নি। জানা গেছে, নরসুন্দা নদীর ওপর কালীগঞ্জ রেলসেতুতে নিয়ে তিন ভাইকে হত্যা করা হয় এবং নদীতে লাশ ভাসিয়ে দেওয়া হয়।
স্বাধীনতার পর মজুমদার পরিবারের পক্ষে শহীদ খগেন্দ্রচন্দ্র মজুমদারের স্ত্রী বিদ্যুৎ প্রভা মজুমদার বাদী হয়ে ১৫ জন চিহ্নিত রাজাকারের বিরুদ্ধে আদালতে হত্যা ও লুটপাটের অভিযােগে মামলা করেন। মামলায় আব্দুর রব, তারা মিয়া, আব্দুর রশিদ, আব্দুল কাদিরসহ বেশ কয়েকজন রাজাকারের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়। সাজা ভােগের পর এদের অনেকেই মারা গেছে।
শহীদ তিন ভাইয়ের স্ত্রীরা তল্কালীন রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষ থেকে একটি সনদপত্র পেয়েছিলেন। তাতে লেখা ছিল, “আপনার স্বামীর আত্মত্যাগের ফলে এই দেশ স্বাধীন হয়েছে। আপনার এই ক্ষতি পূরণ হওয়ার নয়।” সেই চিঠির সঙ্গে নগদ দুই হাজার করে টাকাও পাঠানাে হয়েছিল। কিন্তু ওই তিনজনের নাম শহীদদের তালিকায় ওঠেনি। (কালের কণ্ঠ, ১০ মার্চ ২০১৬) কালীগঞ্জ রেলসেতুর পাশে পাকবাহিনীর ক্যাম্পে আশেপাশের এলাকার মানুষদের ধরে এনে নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করা হতাে এবং লাশ নদীতে ফেলে দেওয়া হতাে। রেলসেতুর ওপর অসংখ্য মানুষকে হত্যা করে তাদের লাশ নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছে। ওই বধ্যভূমিতে স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপনের জন্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানাে হলেও তা অনুমােদন না হওয়ায় বধ্যভূমিতে কোনাে স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপন করা যায়নি। (সমকাল, ৫ ডিসেম্বর ২০১৭)
সূত্র : শহীদ বুদ্ধিজীবী কোষ – আলী মাে. আবু নাঈম, ফাহিমা কানিজ লাভা