You dont have javascript enabled! Please enable it! কামিনীকুমার ঘােষ - সংগ্রামের নোটবুক
কামিনীকুমার ঘােষ
রায় সাহেব কামিনীকুমার ঘােষ নামে পরিচিত কামিনীকুমার ব্রিটিশবিরােধী আন্দোলনের একজন সক্রিয় নেতা ছিলেন। তিনি একজন সমাজসেবক, শিক্ষাবিদ। চট্টগ্রামের শিক্ষা বিস্তারে তার অবদান চিরস্মরণীয়। চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার কাঞ্চনা গ্রামে ১৮৮৮ সালের ১ জানুয়ারি কামিনীকুমার ঘােষের জন্ম। ১৯০৬ সালে তিনি এন্ট্রান্স পরীক্ষায় বৃত্তিসহ প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। তিনি ১৯০৮ সালে উচ্চ মাধ্যমিক এবং ১৯১০ সালে গণিতে অনার্স পাস করেন। ১৯১২ সালে কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে বৃত্তি পেয়ে আইন বিষয়ে উত্তীর্ণ হন। ১৯১৩ সালে কলকাতা থেকে ফিরে তিনি তার চাচা বঙ্গচন্দ্র ঘােষের সাথে আইন পেশায় যােগ দেন। তাঁর বিয়ে হয়েছিল বাঁশখালী উপজেলার পালেগ্রাম চৌধুরীবাড়ীর মেয়ে শৈলবালার সাথে । তাদের সংসারে ১১ জন ছেলেমেয়ে ছিল। ১৯২১ সালে মহাত্মা গান্ধীর অসহযােগ আন্দোলনের ডাকে সাড়া দিয়ে তিনি আইন পেশা ছেড়ে দেন এবং আন্দোলনে সর্বাত্মকভাবে জড়িয়ে যান। অনেকেই মনে করেন, তিনি ছিলেন চট্টগ্রামের দক্ষিণাঞ্চলের আন্দোলনের অন্যতম নেতা।
সে সময় সাতকানিয়াতে ছিল হাতেগােনা কয়েকটি প্রাথমিক বিদ্যালয়। চট্টগ্রামের শিক্ষা ব্যবস্থার এই শূন্যতা অনুভব করতে পেরে তিনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তােলার উদ্যোগ নেন। তিনি এস, বি. ঘােষ ইনস্টিটিউট (উচ্চ বিদ্যালয়) এবং একটি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেন। ‘সাতকানিয়া-বাঁশখালী এডুকেশন সােসাইটি গঠন করে তিনি গ্রামে গ্রামে প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপনের উদ্যোগ নেন। ১৯২৯ সালে সঙ্গীদের সহযােগিতায় তিনি স্থাপন করেছিলেন ‘আমিলাইষ-কাঞ্চনা বঙ্গচন্দ্র ঘােষ’ নামে একটি ইংরেজি উচ্চ বিদ্যালয়। পরে এটি চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসাবে স্বীকৃতি পায়। ১৯৪৮ সালে প্রতিষ্ঠিত ‘সাতকানিয়া কলেজের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ ছিলেন কামিনীকুমার, যা এখন চট্টগ্রামের একটি স্বনামধন্য সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ‘কাঞ্চনা বয়েজ হাই স্কুল’ ও ‘কাঞ্চনা জুনিয়র গার্লস স্কুল প্রতিষ্ঠায় তার ভূমিকা সমাজসেবার আরেকটি নিদর্শন।
সমাজসেবা ও শিক্ষা প্রসারণমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য ব্রিটিশ সরকার। কামিনীকুমারকে ‘রায় সাহেব’ খেতাবে ভূষিত করে। তিনি ২৮ বছর চট্টগ্রামের জেলা পরিষদের সদস্য এবং সাত বছর সভাপতি ছিলেন। ১৬ বছর তিনি চট্টগ্রাম জেলা স্কুল বাের্ডের সদস্য, বেঞ্চ কোর্টের সভাপতি, কাঞ্চনার নির্বাচিত প্রেসিডেন্টসহ বিভিন্ন গুরুদায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়া দীর্ঘদিন ডিস্ট্রিক্ট সােলজার্স, সেলার্স এন্ড এয়ারমেন্স বাের্ড, এক্সাইজ লাইসেন্সিং বাের্ড ও জেল ভিজিটর ছিলেন। ১৯৭১ সালের ২৪ এপ্রিল দুপুরে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী দোহাজারী ক্যাম্প থেকে কাঞ্চনায় আক্রমণ চালায়। হানাদার বাহিনী কামিনীকুমারের বাড়িতে আক্রমণ করলে বাড়ির লােকজন বৃদ্ধ কামিনীকুমারকে বাড়ির শৌচাগারে লুকিয়ে রাখে। পরবর্তীতে কামিনীকুমার শৌচাগার থেকে বেরিয়ে বাড়িতে যাওয়ার পথে এক রাজাকার তাঁকে চিনতে পেরে ধরিয়ে দেয় এবং হানাদার বাহিনী গুলি করে তাঁকে হত্যা করে।

সূত্র : শহীদ বুদ্ধিজীবী কোষ –  আলী মাে. আবু নাঈম, ফাহিমা কানিজ লাভা