You dont have javascript enabled! Please enable it! কাজী ওবায়দুল হক - সংগ্রামের নোটবুক
কাজী ওবায়দুল হক
কাজী ওবায়দুল হকের জন্ম ১৯২৯ সালের ১ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম শহরে। যদিও তাঁর পৈতৃক নিবাস ছিল সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলার সরুলিয়া গ্রামে। তাঁর বাবা কাজী মাে. আবদুল্লাহ ছিলেন একজন শিক্ষাবিদ, মা মাহমুদা খাতুন গৃহিণী। তাঁরা। ছিলেন সাত ভাই ও পাঁচ বােন। কাজী ওবায়দুল হক ছিলেন ভাইবােনের মধ্যে চতুর্থ। তার পারিবারিক নাম কাজী মাে. ওবায়দুল হক সিদ্দিকী, ডাকনাম ছিল কাওসার। ওবায়দুল হকের জীবনের প্রথম ভাগ কেটেছে বাবার বিভিন্ন কর্মস্থলে। তিনি ১৯৪৪ সালে রংপুর জিলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন। এরপর ১৯৪৬ সালে রংপুর কারমাইকেল কলেজ থেকে প্রথম বিভাগে আই. এসসি, পাস করেন। ডাক্তারি বিদ্যা শেখার জন্য ওই বছরই তিনি ভর্তি হন কলকাতা মেডিকেল কলেজে। কিন্তু দাঙ্গা ও দেশভাগের কারণে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজে চলে আসেন এবং এখান থেকেই ১৯৫১ সালে এম, বি, বি, এস, পাস করেন। মেধাবী ছাত্র কাজী ওবায়দুল হক ডাক্তারি পড়ার সময় দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ বর্ষে মেধাবৃত্তি পেয়েছিলেন। শিক্ষাজীবন শেষে ১৯৫১ সালে তিনি প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগে যােগ দেন। এখানে ১৯৫৩ থেকে ১৯৫৫ সাল পর্যন্ত অ্যাসিস্ট্যান্ট সার্জনের দায়িত্ব পালন করেন। এ সময় বিদেশে উচ্চশিক্ষা নেওয়ার সুযােগ এলেও তিনি তা নেননি।
১৯৫২ সালের ২ নভেম্বর নাজম নেগার রশীদা বানুর সাথে তার বিয়ে হয়। তাদের সংসারে এক ছেলে ও এক মেয়ে জন্মায়। ডা, ওবায়দুল ১৯৫৫ সালে চাকরি ছেড়ে দিয়ে যশােরে গিয়ে প্রাইভেট প্র্যাকটিস শুরু করেন। জানা যায়, তার বাবার ইচ্ছাকে সম্মান দিয়ে গ্রামের মানুষকে চিকিৎসা সেবা দেওয়ার উদ্দেশ্যে তিনি সরকারি চাকরি ছেড়ে যশাের চলে যান। স্কুলজীবন থেকেই ওবায়দুল স্কাউটিংসহ বিভিন্ন খেলাধুলার চর্চা করতেন। বিশেষত লন টেনিস ছিল তাঁর প্রিয় খেলা। তিনি যশাের লায়ন্স ক্লাবের সভাপতি এবং যশাের রেডক্রসের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। যশাের। পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচির সাথে তিনি আমৃত্যু জড়িত ছিলেন। ষাট দশকে যশাের। শহরে যেসব সেবামূলক সংস্থা ছিল, তার প্রায় সবকটিতে ওবায়দুল হক জড়িত ছিলেন। চিকিৎসক হিসাবে তার সুনামের কারণে দূর গ্রাম থেকে বহু রােগী তার  কাছে আসত। এসব রােগীর অনেকেই টাকা-পয়সা জোগাড় করতে পারত না। ডাক্তার ওবায়দুল বিনা টাকার চিকিৎসা করার পাশাপাশি এসব রােগীকে ওষুধপত্র, এমনকি অর্থ দিয়েও সাহায্য করতেন। মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে তিনি পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আশ্রয় নিয়েছিলেন অধ্যক্ষ সুলতান উদ্দিন আহমদের বাসায়। ১৯৭১ সালের ৫ এপ্রিল, পাকিস্তানি সেনারা সুলতান উদ্দিনকে ধরার জন্য তার বাসায় হানা দেয়। পাকসেনারা সুলতান উদ্দিনকে ধরে ঘরের বাইরে নিয়ে এলে ডাক্তার ওবায়দুল হকও বেরিয়ে আসেন। পাকিস্তানি সেনারা ডা. ওবায়দুলকে প্রশ্ন করে, “জবান কি?” জবাবে তিনি বলেছিলেন, “আমি বাঙালি।” ডা. কাজী ওবায়দুল হক, অধ্যক্ষ সুলতান উদ্দিন আহমদসহ আরও কয়েকজনকে লাইনে দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়। তাদের লাশ পাওয়া যায়নি। শহীদ ডা. কাজী ওবায়দুল হকের স্ত্রীর নাম নাজম নেগার রশীদা বানু। তাঁদের সংসারে এক ছেলে ও এক মেয়ে ছিল। তাঁরা সবাই দেশের বাইরে থাকেন।

সূত্র : শহীদ বুদ্ধিজীবী কোষ –  আলী মাে. আবু নাঈম, ফাহিমা কানিজ লাভা