You dont have javascript enabled! Please enable it! কবির উদ্দিন আহমেদ - সংগ্রামের নোটবুক
কবির উদ্দিন আহমেদ
কবির উদ্দিন আহমেদ ১৯১৮ সালে সিরাজগঞ্জ জেলায় জন্ম নেন। তার পারিবারিক নাম মুন্সি কবির উদ্দিন আহমেদ। তাঁর বাবার নাম মুন্সি রইস উদ্দিন আহমেদ, মায়ের নাম সৈয়দা সৈয়দন নেসা। কবির উদ্দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। শিক্ষাজীবন শেষ করে কবির উদ্দিন পাকিস্তান পুলিশ সার্ভিসে যােগ দেন। পেশাগত জীবনে সাহসিকতাপূর্ণ কাজের জন্য ১৯৬৭ সালে তিনি পুলিশ গােল্ড মেডেল (পি. পি, এম,) পেয়েছিলেন। ১৯৭১ সালে যখন নিহত হন, তখন তিনি ছিলেন কুমিল্লার সুপারিনটেন্ডেন্ট অব পুলিশ (এস. পি.)। তাঁকে কুমিল্লা ময়নামতি সেনানিবাসে হত্যা করা হয়। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাত ১২টায় মেজর ইফতেখার হায়দার শাহের নেতৃত্বে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী কুমিল্লা পুলিশ লাইন্সে আক্রমণ করে। গুলি করতে করতে পাকিস্তানি সেনারা পুলিশ লাইন্সে ঢুকে পড়ে। নতুন যােগ দেওয়া শতাধিক সদস্য পুলিশ লাইন্সের দোতলায় অবস্থান করছিল। অতর্কিত আক্রমণে তাঁদের অনেকেই নিহত হন। প্রাথমিক আঘাত সামলে পুলিশ সুপার কবির উদ্দিন আহমেদ সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করেন। তার নেতৃত্বে পুলিশ সদস্যরা সারারাত প্রাণপণ লড়াই করেন। সাধারণ অস্ত্র দিয়েই তারা বীরত্বের সাথে যুদ্ধ চালিয়ে গেছেন। কিন্তু আধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে শেষ পর্যন্ত মােকাবেলা করা সম্ভব হয়নি।
ভােরের দিকে পাকিস্তানি সেনারা পুলিশ লাইন্স নিজেদের দখলে নিয়ে নেয়। এ যুদ্ধে ৩১ জন। পুলিশ সদস্য ও কর্মকর্তা শহীদ হন। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বেশ কিছু সদস্য। হতাহত হয়। এরপর ২৬ মার্চ সকাল ৭টায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী কবির উদ্দিন আহমদকে বাসা থেকে গ্রেফতার করে ময়নামতি সেনানিবাসে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে সেখানেই তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। কবির উদ্দিন আহমেদের স্ত্রী মাকছুদা কবির তাঁর স্মৃতিচারণে লিখেছেন : একাত্তরের সেই উত্তাল দিনে দেশের সমস্ত মানুষ যখন স্বাধীনতার জন্য আন্দোলন করছে তখন তিনি সবসময় ভাবতেন কি করে হানাদার পাকিস্তানিদের বিতাড়ন করে এদেশকে মুক্ত করা যায়। ১৯৭১ সালের ২৩ মার্চ তারিখে তিনি গােপনসূত্রে খবর পেলেন যে সেই রাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট থেকে এসে পুলিশ লাইন আক্রমণ করবে। তখন তিনি প্রতিজ্ঞা করলেন, জীবন গেলেও পুলিশ লাইনের অস্ত্রশস্ত্র গােলাবারুদ পাকিস্তানিদের নিয়ে যেতে দেবেন না। তখন তিনি পুলিশ লাইনে যেয়ে নিজে অস্ত্র নিয়ে পুলিশ বাহিনীসহ যুদ্ধাবস্থায় থেকে রাত কাটালেন। কিন্তু সেই রাতে আর ওরা এল না। পরদিন ২৪ মার্চ থেকে তিনি সার্কিট হাউজে কন্ট্রোল রুম স্থাপন করে ডি. সি. সাহেবের সাথে বিভিন্ন বিষয়ে খােজ-খবর ও পরামর্শ করতেন এবং পুলিশ লাইনে পুলিশ বাহিনীকে যুদ্ধের জন্য পূর্ণ সতর্ক অবস্থায় থাকার নির্দেশ দেন। এরপর এল সেই ভয়াল বিভীষিকাময় কালরাত। ২৫ মার্চ রাত ১২টায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী অতর্কিতে পুলিশ লাইন আক্রমণ করে। পুলিশ বাহিনীও বীরত্বের সঙ্গে যুদ্ধ চালিয়ে যায় পুলিশের সাধারণ অস্ত্র দিয়ে।

কিন্তু আধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে মােকাবেলা করা সম্ভব হয়নি। ভােরের দিকে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী পুলিশ লাইন দখল করে নেয় এবং অসংখ্য পুলিশ হত্যা করে। এরপর ২৬ মার্চ সকাল ৭টায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী বাসা থেকে আমার স্বামীকে ধরে ডি, সি, সাহেবের সাথে কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টে নিয়ে যায় এবং সেখানেই তাঁদেরকে হত্যা করে। এরপর আর তার লাশ পাওয়া যায়নি। (বানান সংশােধিত) মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদানের জন্যে ২০১৪ সালে তাকে দেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার স্বাধীনতা পুরস্কার দেওয়া হয়।

সূত্র : শহীদ বুদ্ধিজীবী কোষ –  আলী মাে. আবু নাঈম, ফাহিমা কানিজ লাভা