You dont have javascript enabled! Please enable it!
ওলিউর রহমান
ওলিউর রহমান ১৯৩২ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি সিলেট জেলার সদর থানার চুকেরবাজার ইউনিয়নের মইয়ারচর গ্রামে জন্ম নেন। তাঁর বাবা হযরত মাওলানা শাহ হাবিবুর রহমান খোরাসানী ছিলেন একজন পীর। ওলিউর বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন বাড়িতে লজিং থেকে পড়াশােনা করে ১৯৪৯ সালে আলিম পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশ নেন। একজন প্রাইভেট পরীক্ষার্থী হিসাবে তিনি ১৯৫০ সালে প্রথম বিভাগে দশম স্থান নিয়ে উচ্চ। মাধ্যমিক পাস করেন। ১৯৫১ সালে ফাজিল পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে তৃতীয় স্থান, ১৯৫৩ সালে দাওরায়ে হাদিস বিষয়ের (টাইটেল) পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে তৃতীয় স্থান দখল করেন ওলিউর রহমান। বড় পরিবারের দায়িত্ব ছিল তার বাবার ওপর। তাই ওলিউর ছাত্রজীবন শেষ করতে না করতেই চাকরি নেন। ১৯৫৩ সালে বরিশালের আহমদিয়া মাদ্রাসায় সুপারিনটেনডেন্ট পদে যােগ দেন তিনি। এর আগে তিনি টেকনাফেও একটি মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করেছেন। ১৯৫৪ সালে তিনি বরিশালের চাকরি ছেড়ে সিলেট চলে আসেন। ১৯৫৪ থেকে ১৯৫৯ সাল পর্যন্ত তিনি সিলেট আলিয়া মাদ্রাসায় অধ্যাপনা করেন। এরপর তিনি চলে যান ঢাকায়। ওলিউর ১৯৬০ সালে বেশ কিছুদিন বাংলা একাডেমির ইসলামী, উর্দু ও আরবি অর্থনীতির অনুবাদক ও গবেষক হিসাবে কাজ করেছেন। তাফসিরে ওলিউর রহমানের ছিল অগাধ জ্ঞান।
তিনি ছিলেন তখনকার সময়ে বাংলাদেশের একজন শ্রেষ্ঠ তাফসিরকারী। ওলিউর বরিশাল ও ঢাকার বিভিন্ন স্থানে, বিশেষ করে আজিমপুর ছাপড়া মসজিদে কোরআন তাফসির করতেন। দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা এসব মাহফিলে উপস্থিত থাকতেন। প্রিন্সিপাল আবুল কাশেমের মতাে প্রবীণ পণ্ডিত ব্যক্তিও তাঁর বক্তব্য শুনে প্রশংসায় পঞ্চমুখ হতেন।  ষাটের দশকের শেষ দিকে ওলিউর ঢাকায় জিঞ্জিরার কুঠুরিয়া গ্রামে গিয়ে ওঠেন। সেখানে তিনি আরােগ্য কুঠির’ নামে একটি হােমিও ক্লিনিক গড়ে তােলেন। এ সময় ওলিউর রহমান আলেম সমাজের বিপরীতে দাঁড়িয়ে প্রকাশ্যে আওয়ামী লীগের ছয় দফাকে সমর্থন জানান এবং আওয়ামী ওলামা পাটি’ গঠন করে রাজনীতিতে সক্রিয় হন। ১৯৬৯ সালে তিনি স্বাধিকার আন্দোলনে নেমে পড়েন। সেই থেকে আওয়ামী লীগের সাথে একই প্ল্যাটফর্মে আবার কখনও তাঁর নিজের সংগঠনের ব্যানারে দাড়িয়ে তিনি বক্তৃতা করে বাঙালির স্বাধিকারের দাবি তুলেছেন। ছয় দফা নিয়ে লেখা তাঁর পুস্তিকা ‘শরিয়তের দৃষ্টিতে ৬ দফা’ দেশব্যাপী সাড়া জাগায়। স্বতন্ত্র ধর্ম দফতর- একটি জাতীয় প্রয়ােজন’ শিরােনামে একটি বই লিখে তিনি সাড়া ফেলেছিলেন। ১৯৭১ সালের ১১ ডিসেম্বর ঢাকার লালবাগ এলাকা থেকে ওলিউর রহমানকে ধরে নিয়ে যায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। তিন দিন চার রাত তাঁকে আটকে রেখে নির্মম নির্যাতন চালানাে হয়। পরে ১৪ ডিসেম্বর তাঁর দুই চোখ উপড়ে ফেলে বেয়নেট চার্জ করে ওলিউর রহমানকে হত্যা করা হয়। শেষবারের মতাে তাঁর লাশটিকেও দেখতে পায়নি তার পরিবার। (সিলেটের ডাক, ১৪ ডিসেম্বর ১৯৯৭)।

সূত্র : শহীদ বুদ্ধিজীবী কোষ –  আলী মাে. আবু নাঈম, ফাহিমা কানিজ লাভা

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!