You dont have javascript enabled! Please enable it!
এ. কে. এম. লুৎফুর রহমান
এ. কে. এম. লুৎফর রহমানের জন্ম ১৯৩৭ সালের ১১ অক্টোবর, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নিয়াজ পার্ক রােডের বাসায়। তাঁর বাবা খানবাহাদুর কাজী আবু জামান, মা মেহেরুননেছা। লুৎফর রহমান ১৯৫৩ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অন্নদা উচ্চবিদ্যালয় থেকে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিক এবং ১৯৫৫ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া কলেজ থেকে প্রথম বিভাগে আই, কম, পাস করেন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বি, কম, (অনার্স) এবং ১৯৬০ সালে হিসাববিজ্ঞানে এম, কম. পাস করেন। পড়াশােনা শেষ করার পর পরই ব্রাহ্মণবাড়িয়া কলেজে হিসাববিজ্ঞান বিষয়ের অধ্যাপক হিসাবে চাকরিতে যােগ দেন। নিহত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত একই কলেজে বাণিজ্য বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। এ. কে. এম. লুত্যর রহমানের সহকর্মী কবি আসাদ চৌধুরীর ‘আমার সহকর্মী রচনায় লিখেছেন :  অত্যন্ত হাসি-খুশি আমুদে মেজাজের মানুষটি ছিলেন সত্যি দিলখােলা, পরােপকারী। চাদার জন্য তার কাছে গিয়ে কেউ খালি হাতে ফিরে এসেছেন, এ রকম ঘটনা আমার জানা নেই। ভালাে-মন্দ খেতে ভালােবাসতেন, খাওয়াতে বােধ হয় আরও বেশি ভালােবাসতেন।
কথা বলতেন বেশ জোরে জোরে। হাসতেন আরও জোরে। গুছিয়ে ইংরেজি বলতে ভালােবাসতেন। আসর জমিয়ে রাখতেন। এমনি ব্যক্তিত্ব কিছুক্ষণের মধ্যে সহজেই বিশিষ্ট হয়ে পড়তেন। বিত্ত ছিল, চিত্ত ছিল, প্রতিপত্তি ছিল- মানুষটি ছিলেন নিতান্ত সাদাসিধে। তিনি আমার কাছে বিভিন্ন ধরনের বই চাইতেন। এসব তিনি ছাত্রদের দিয়ে দিতেন। মাঝেমধ্যে পরীক্ষার ফি দিতে পারছে না, সেসব ক্ষেত্রেও তাকে চাঁদা দিতে হতাে। এই দায়িত্ব-কর্তব্যবােধ বােধ হয় বিরল হয়ে আসছে। (স্মৃতি : ১৯৭১, প্রথম খণ্ড) জানা যায়, মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি আগরতলা চলে গিয়েছিলেন। কিন্তু সকলের অনুরােধ উপেক্ষা করে কিছুদিন পর তিনি আবার দেশে ফিরে আসেন। মুক্তিযােদ্ধারা, স্থানীয় প্রতিরােধকারীরা তার সঙ্গে নিয়মিত যােগাযােগ রাখতেন। তার কাছ থেকে উৎসাহ ও প্রয়ােজনীয় আশ্রয় পেতেন।
২৬ নভেম্বর পাকিস্তানি সেনারা তাকে তার বাসা থেকে ধরে নিয়ে যায়। এরপর জেলখানা থেকে ৬ ডিসেম্বর তাকে মিলিটারি ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়। ৮ ডিসেম্বর হত্যা করার উদ্দেশ্যে বন্দিদের গাড়িতে তুলে বধ্যভূমিতে নিয়ে যাওয়া হয়। গাড়িটি তার বাড়ির কাছে আসতেই তিনি চেচিয়ে বলেছিলেন, “আম্মাগাে, আমি দেশের জন্যে প্রাণ দিলাম। আমার জন্য দুঃখ করবেন না। তাঁর কথা শেষ না হতেই এক সৈন্য রাইফেল দিয়ে আঘাত করে। যখন গাড়ি থেকে নামছেন, তখন হাতের বাধন। খুলে গিয়েছিল। তাঁর সঙ্গী তাঁকে পালাতে বললেন এবং সেই সঙ্গী পালিয়ে যেতে পেরেছিলেন। কিন্তু তিনি সম্ভবত পালানাের কোনাে চেষ্টাই করেননি। ব্রাহ্মণবাড়িয়া মুক্ত হওয়ার পর পরিবারের সদস্যরা তার মরদেহ উদ্ধার করে পারিবারিক কবরস্থানে সমাহিত করে।  লুৎফর রহমান পরােপকারে ছিলেন অকুণ্ঠ। প্রকাশ্যে ও অপ্রকাশ্যে অসংখ্য মানুষকে তিনি সাহায্য করেছেন। বন্ধুবৎসল এবং আড্ডাবাজ হিসাবে পরিচিত ছিলেন। তিনি ক্রীড়া অনুরাগীও ছিলেন। কলেজের শিক্ষার্থীদেরও প্রিয় ছিলেন। স্বাধীনতার পর ব্রাহ্মণবাড়িয়া কলেজ তার নামে নামাঙ্কিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তা হয়নি। পরে বিজ্ঞান ভবন তার নামে নামকরণ করা হয়। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের নিয়াজ পার্কসংলগ্ন কাউতলী মহল্লার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা। পরবর্তীকালে বিদ্যালয়টি তার নামেই নামকরণ করা হয়।

সূত্র : শহীদ বুদ্ধিজীবী কোষ –  আলী মাে. আবু নাঈম, ফাহিমা কানিজ লাভা

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!