এ. ওয়াই. মাহফুজ আলী
এ. ওয়াই, মাহফুজ আলীর জন্ম রংপুরে। তার ডাকনাম ছিল ‘জরজেজ মিঞা। সবার কাছে তিনি ছিলেন শ্রদ্ধেয় জরজেজ ভাই’। পেশাগত জীবনে মাহফুজ আলী ছিলেন আয়কর আইনজীবী। রাজনৈতিক জীবনে তিনি ছিলেন মওলানা ভাসানীর একনিষ্ঠ অনুসারী। মাহফুজ আলী ১৯৩৮ সাল থেকে রাজনৈতিক কর্মী হিসাবে সক্রিয় হয়ে ওঠেন। তিনি পাকিস্তান আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন। পরে তিনি তৎকালীন ছাত্র ফেডারেশনের রংপুর জেলার সেক্রেটারির দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে মাহফুজ আলী রংপুরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। পরবর্তীতে তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত হন। মওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি বা ন্যাপ গঠিত হলে মাহফুজ আলী তাতে যােগ দেন এবং জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত ভাসানীর অনুসারী হিসাবে কাজ করেন। মাহফুজ আলী ছিলেন। অসম্ভব দৃঢ় চরিত্রের মানুষ। তাঁর চারিত্রিক আকর্ষণের কারণে মানুষ সহজেই তাঁর প্রতি আকৃষ্ট হতাে। ১৯৭১ সালের মার্চের শুরুতে অসহযােগ আন্দোলনের সময় বিক্ষোভরত মানুষের মিছিলে রংপুরের অবাঙালি ও পাকিস্তানি সেনারা গুলি চালায় ও কারফিউ জারি করাসহ বিভিন্নভাবে হামলা করতে থাকে। এর বিরুদ্ধে মাহফুজ আলী বাঙালিদের এক বিরাট মিছিল নিয়ে রংপুর জেলা প্রশাসককে ঘেরাও করেন। জনতার চাপে পাকিস্তানি প্রশাসন ক্ষমা চাইতে বাধ্য হয়। তারা ঘােষণা করে যে এখন থেকে আর গুলি করা হবে না। যদিও পাকিস্তানিরা তাদের সে আশ্বাস দিয়েছিল সাময়িকভাবে পরিস্থিতি শান্ত করার জন্য।
২৩ মার্চ মওলানা ভাসানী ‘স্বাধীনতা দিবস পালনের ডাক দেন। ওই দিন মাহফুজ আলীর নেতৃত্বে স্বাধীন বাংলার পতাকা ওড়ানাে হয়। এদিন বিকালে পাবলিক লাইব্রেরি মাঠে হাজার হাজার মানুষের সমাবেশে মাহফুজ আলী তার ভাষণে বললেন, “দেশ স্বাধীন করব, নয়তাে মরব।” ১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ বেলা ১১টার দিকে মাহফুজ আলী জরজেজ ভাইকে তাঁর মুনসীপাড়ার বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে যায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। প্রথমে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় রংপুর ক্যান্টনমেন্টে। সেখানে তাঁর ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালানাে হয়। এরপর ৩ এপ্রিল মধ্যরাতে আরও ১১ জনের সাথে মাহফুজ আলীকে রংপুর শহরের শ্মশানঘাটে গুলি করে হত্যা করা হয়। পরদিন তাঁর পরিবারের সদস্যরা শহীদ এ. ওয়াই. মাহফুজ আলীর লাশ কেরামতিয়া মসজিদের কাছে সমাহিত করে।
সূত্র : শহীদ বুদ্ধিজীবী কোষ – আলী মাে. আবু নাঈম, ফাহিমা কানিজ লাভা