You dont have javascript enabled! Please enable it!

প্রসঙ্গক্রমে
বাঙলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে আফ্রো-এশীয় শ্রমিক সংহতি

জংলী পাক হানাদাররা বাঙলাদেশের বুকের ওপর ঝাপিয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে শেখ মুজিবর আফ্রিকা ও এশিয়ার স্বাধীনতা প্রিয় মানুষদের প্রতি এক আবেদন প্রচার করেছিলেন। সেই আবেদনে তিনি বলেছিলেন | যে ঐ দুই মহাদেশের জসাধারণও যেন বাঙলাদেশের মুক্তিসংগ্রামকে ঔপনিবেশিকতাবাদ থেকে আফ্রোএশীয় দেশগুলির স্বাধিকার অর্জনের লড়াইয়ের অংশ বলে মনে করেন। বলা বাহুল্য, মুজিবরের এই আবেদন বাঙলাদেশের গণযুদ্ধকে একটি আন্তর্জাতিক তাৎপর্য দান করেছে।
ভারতবর্ষের শ্রমিক আন্দোলনের অগ্রনায়ক সারা ভারত ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেস-এর তরফ থেকে বাঙলাদেশের জনগণর স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতি শ্রমিকশ্রেণির সংহতি প্রকাশের জন্য আফ্রিকা ও এশিয়ার দেশগুলির ট্রেড-ইউনিয়নগুলির একটি সম্মেলনের প্রস্তাব করেছে। প্রস্তাবটি উঠেছে তাসখন্দে এশিয়ার দেশগুলির ট্রেড ইউনিয়নের অধিবেশনে।
বাঙলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নতুন করে প্রমাণ করেছে যে জাতীয় মুক্তি আন্দোলন ও শ্রেণি সংগ্রাম কোনাে বিচ্ছিন্ন বিষয় নয়। সাড়ে সাত কোটি মানুষের এই ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামের পুরােভাগে এসে দাঁড়িয়েছেন পাটচাষী, চটকল মজদুর, চা-বাগিচার শ্রমিক ও সুতােকলের হাজার হাজার কর্মী। শ্রমজীবী মানুষের এই ঐতিহাসিক অভ্যুত্থানের সময় আফ্রো-এশীয় দেশগুলি সংগ্রামী শ্রমিকরা নীরব থাকতে পারেন না। ঔপনিবেশিকতাবাদ কি বস্তু, তা তারা সুদীর্ঘকাল মর্মে মর্মে উপলব্ধি করেছেন। যেখানেই মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয় সেখানেই বিশ্ব-বিপ্লবের অগ্রবাহিনী শ্রমিকেরা তাঁদের অকুণ্ঠ সমর্থন জানাতে এগিয়ে আসেন। তাসখন্দে সারা ভারত ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেসের আনীত প্রস্তাবটিকে এই দৃষ্টিভঙ্গী থেকে পূর্ণ সমর্থন ও অভিনন্দন জানানাে আমাদের সবারই কর্তব্য।

সূত্র: কালান্তর, ১১.৪.১৯৭১

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!