You dont have javascript enabled! Please enable it!

পশ্চিম পাঞ্জাবে আওয়ামী লীগের শাখা চালু করতে চান শেখ মুজিব

২১ নভেম্বর ১৯৪৯ তারিখের গোয়েন্দা রিপোর্টে জানা যায়, শেখ মুজিবুর রহমান ৩০ নভেম্বর ১৯৪৯ তারিখে দিল্লি থেকে বিমানযোগে লাহোর আসেন। বিমান বন্দরের সি আই ডি অফিসারকে আগে থেকে সতর্ক করা হলেও ঐদিন গোয়েন্দা অফিসার তাকে সময়মত সনাক্ত করতে পারে নাই। ফলে লাহোরে আসার কারণ সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ সম্ভব হয়নি। শেখ মুজিব মামদুত ভিলায় যান। সেখানে সোহরাওয়ার্দী সাহেব আগে থেকেই অবস্থান করছিলেন। তবে থাকার জন্য মিয়া ইফতেখার উদ্দিনের বাসায় ব্যবস্থা করা হয়। ঠিকানা, ২১, আইকমান রোড, লাহোর। তার আসার কিছুক্ষণ পর সোহরাওয়ার্দী সাহেব পাকপত্তনের একটি জনসভায় যান। পরের দিন একই যায়গায় তাদের দেখা হয়। সেখানে মামদুত খানের পূর্ব পাঞ্জাবের প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন সময়ে নেয়া ২ লাখ টাকার মামলার ব্যাপারে আলোচনা করেন। টাকাটা খান সাহেব পূর্ব বাংলা থেকে নিয়েছিলেন। এছাড়া, পশ্চিম পাঞ্জাবে আওয়ামী লীগের শাখা চালু করার সম্ভবনা নিয়েও আলাপ করেন। তবে পরবর্তীতে সাংবাদিকরা শেখ মুজিবের এখানে আসার কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, এটি শুধুই ব্যক্তিগত সফর। এর কোন রাজনৈতিক গুরুত্ব নেই। তবে তিনি জানান, মুসলিম লীগ বর্তমানে জনসংশ্লিষ্টতা হারিয়েছে এবং সরকারি যন্ত্রে পরিণত হয়েছে। পশ্চিম পাঞ্জাবে আসন্ন নির্বাচনের আগে সেখানে আওয়ামী লীগের শাখা চালুর ব্যাপারে তিনি মত দেন। তিনি বলেন, এর ফলে সরকারের জবাবদিহিতা বাড়ানো যাবে এবং উন্নত দেশের মত এখানেও একটি সুস্থ বিরোধী রাজনৈতিক চর্চা সম্ভব হবে। সরকার কর্তৃক পূর্ব বাংলা ও উত্তর পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশে যে নিপীড়ন চালানো হচ্ছে তার প্রেক্ষিতেই এই পদক্ষেপ নেয়া জরুরি। শেখ মুজিব আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সাথে এই ব্যাপারে কথা বলতে তিনি করাচী যাবার ব্যাপারে চিন্তাভাবনা করছেন। পশ্চিম পাকিস্তান আসার পর কিছুদিন তিনি অসুস্থ ছিলেন। [1, pp. 303–305]
২১ নভেম্বর ১৯৪৯ তারিখে আই বি’র সহকারী পরিচালক ঢাকায় একটি গোয়েন্দা রিপোর্ট পাঠান, যাতে শেখ মুজিবের ও উত্তর পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশের গোলাম মোহাম্মদ লান্দখোরের (Lundkhore) সাথে রাওয়ালপিণ্ডিতে এক বৈঠকের ব্যাপারে উল্লেখ করা হয়। এটি ৭ নভেম্বর ১৯৪৯ তারিখে অনুষ্ঠিত হয়। পরে দুজনেই চম্বলপুরে পির মানকি শরিফের সাথে দেখা করতে যান। সেখানে ৯ নভেম্বর তারিখে রুদ্ধদ্বার বৈঠক হয়। এতে শেখ মুজিব আওয়ামী লীগের প্রায় ৫০ জন নেতাকর্মীকে সরকার কর্তৃক আটক করার বিষয়টি তোলেন। এই আটক সরকারি অর্ডিনেন্সের অবৈধ প্রয়োগ, উল্লেখ করে শেখ মুজিব বলেন, অতি স্বত্বর পশ্চিম পাঞ্জাব ও সিন্ধে আওয়ামী লীগের শাখা খুলতে হবে। সরকার পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের দমনের যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তার তীব্র সমালোচনা করেন। এটিকে তিনি সরকারের আত্মঘাতী কৌশল বলে উল্লেখ করেন। [1, pp. 305–310]

এরপর ১০ নভেম্বর তিনি আবার লাহোরে ফেরত আসেন। আগের থাকার স্থান ছেড়ে West End Hotel, McLeod Road, Lahore – এই ঠিকানায় থাকা শুরু করেন। এসময় তিনি পশ্চিম পাঞ্জাবের বেশ কিছু নেতার সাথে যোগাযোগ করেন। এদের মধ্যে মিয়া ইফতেখার উদ্দিন, গোলাম মোহাম্মদ লান্দখোর, পির মানকি শরিফ, খান ইফতেখার হোসেন খান মামদুত, খিলাফাতে পাকিস্তান গ্রুপের আব্দুস সাত্তার নিয়াজি, পশ্চিম পাকিস্তান আঞ্জুমানে মুহাজিরিন এর রাও মেহরোজ আখতার, জিন্নাহ গ্রুপের আখতার মীর, পশ্চিম পাঞ্জাব মুসলিম লীগের জেনারেল সেক্রেটারি চৌধুরী মুহাম্মদ ইকবাল ছিমা, পাকিস্তান টাইমসের এসিস্টেন্ট এডিটর নবাবজাদা মাঝহার আলি খান, সর্দার শওকত হায়াত খান, পাকিস্তান মুসলিম স্টুডেন্ট ফেডারেশনের জেনারেল সেক্রেটারি সর্দার মোহাম্মদ সাদিক, খাকান বাহার (অল পাকিস্তান মুসলিম স্টুডেন্ট ফেডারেশন এর ভাইস প্রেসিডেন্ট, পিতা – মাঝহার আলি আজহার, সাবেক আহরার নেতা, লাহোর ল কলেজের এল এল বি স্টুডেন্ট) প্রমুখ উল্লেখযোগ্য। এছাড়া বেশি কিছু ছাত্রনেতা West End Hotel এ শেখ মুজিবের সাথে দেখা করে।
৩ ডিসেম্বর ১৯৪৯ তারিখের তার ফিরে যাবার তারিখ নির্ধারিত থাকলেও তিনি সেটি পরিবর্তন করে ২৭ নভেম্বর করেন। কারণ পূর্ব বাংলা থেকে হামিদুল হক চৌধুরী ও রাগিব হোসেন আসার কথা আছে। তাদের সাথেই অবস্থান করবেন। এছাড়া জানা যায়, মামদুত খানের মামলার দিনে উপস্থিত থেকে দেখার ইচ্ছা আছে।
২০ নভেম্বর ১৯৪৯ তারিখে এম এ কাজমি (ল কলেজ স্টুডেন্ট, মুসলিম স্টুডেন্টস ফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট) শেখ মুজিবকে ডিনারে দাওয়াত করেন। সেখানে অন্যান্য ছাত্রনেতারা উপস্থিত ছিল। তাদের মধ্যে নূর আহমেদ, ফজল-উর রহমান যাকি, যাকা উল্লাহ শাহ এবং ওয়র্কিং কমিটির সদস্য সৈয়দ মোহাম্মদ জাফরের নাম উল্লেখযোগ্য। ডিনারে বক্তৃতা দেবার সময় শেখ মুজিব বলেন, পূর্ব পাকিস্তানের ছাত্ররা পশ্চিম পাকিস্তানের ছাত্রদের চেয়ে বেশি প্রগতিশীল। তারা সক্রিয় রাজনীতি করে এবং নির্বাচনে অংশ নেয়। দুইজন ছাত্রনেতা এম এল এ হিসেবেও আছে। তিনি পশ্চিম পাকিস্তানের ছাত্রদেরকেও একইভাবে এগিয়ে আসতে বলেন। কাযমি একটি প্রেস বিবৃতি দেন যা স্থানীয় কয়েকটি পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। [1, pp. 311–316]

নোটঃ
পীর মানকি শরিফ -আমিনুল হাসানাত (১৯২২-১৯৬০), পিতা পির আব্দুল রউফ। তিনি উত্তর পশ্চিম সীমান্ত এলাকার ধর্মীয় নেতা হিসেবে পরিচিত। ১৯৪৫ সালে তিনি মুসলিম লীগে যোগ দেন। [1, pp. 305–310]

Reference:
[1] S. Hasina, Secret Documents of Intelligence Branch on Father of the Nation Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman, Vol I 1948-1950. Hakkany Publisher’s, 2018.

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!