You dont have javascript enabled! Please enable it!

সোহরাওয়ার্দী ও শেখ মুজিবের চট্টগ্রাম হয়ে সিলেট সফর। কুলাউড়ায় বাঁধা

২০ নভেম্বর ১৯৫২ তারিখের পাকিস্তানি গোয়েন্দা রিপোর্টে জানা যায়, ১৮ নভেম্বর ১৯৫২ তারিখে জনাব সোহরাওয়ার্দী, শেখ মুজিবুর রহমান এবং চট্টগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি আবদুল আজিজ কোর্ট বিল্ডিংএ আসেন। সেখানে সোহরাওয়ার্দী সাহেব উকিল নাসের মিয়া, উকিল মনমোহন বিশ্বাস এবং চট্টগ্রামের জমিদার আহমেদ মিয়া চৌধুরীর সাথে আলোচনা করেন। এরপর তিনি পাঠানটুলি সহ কিছু এলাকা ঘুরে দেখেন যেখানে সরকার উচ্ছেদের মাধ্যমে বেশ কিছু যায়গা দখলে নিয়েছে।
রাতের ট্রেনে জনাব সোহরাওয়ার্দী ও শেখ মুজিব সিলেটের উদ্দেশ্যে রওনা করেন। কুলাউড়া রেলওয়ে স্টেশনে পৌঁছালে কিছু লোক কালো পতাকা নিয়ে “সোহরাওয়ার্দী পিছু হট” স্লোগান দিতে থাকে। সেখানে এ এম এল এর সমর্থকেরাও ছিলো। দুই গ্রুপের মধ্যে কিছুটা উত্তেজনার সৃষ্টি হয়, পরে যা প্রশমিত হয়। জনাব সোহরাওয়ার্দী ও শেখ মুজিব রেলওয়ে প্রাঙ্গণে ভাষণ দেন। সোহরাওয়ার্দী সাহেব অন্যান্য ভাষণের মতোই এখানে বক্তব্য রাখেন, তবে তিনি বলেন যে পুলিশকে ভয় পাবার কিছু নেই, কারণ তাদের মধ্যে আওয়ামী মুসলিম লীগের সমর্থক আছে। শেখ মুজিবুর রহমান চট্টগ্রামের বক্তৃতায় যা বলেছিলেন এখানেও সেসব কথাই বললেন।
সিলেট রেলওয়ে স্টেশনে আবদুল বারী ওরফে ধলা বারী (এ এম এল ) ১৫০ জন কর্মীসমর্থক নিয়ে এ এম এল নেতাদের সম্বর্ধনা জানায়। তাদেরকে এরপর নয়াসড়ক এ এম এল অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়। কোর্ট প্রাঙ্গণে বিকেল ৪ টার সময় মিটিং আরম্ভ হয়। সেখানে প্রায় পাঁচ-ছয় হাজার লোক সমাগম হয়। মিটিং এর শুরুতে যুবলীগ, ছাত্রইউনিয়ন সহ বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে তারা মিয়া, মোদাচ্ছের আলী, দবিরুদ্দিন আহমেদ তাদের স্বাগত বক্তব্য দেন। শেখ মুজিবুর রহমান তামাকজাত দ্রব্য ও পাটের উপর সরকারের কর্ডন প্রথার সমালোচনা করেন। এছাড়া তিনি ভূমিহীনদের মাঝে জমি বণ্টনের আবেদন জানান।
সোহরাওয়ার্দী সাহেব পশ্চিম পাঞ্জাব, সিন্ধ এবং NWFP সরকারের সমালোচনা করেন। তিনি বলেন এখানে নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপি হয়েছে। এছাড়া কাশ্মীর পরিস্থিতির জন্য তিনি পাকিস্তান সরকারের ব্যার্থতাকে দায়ী করেন। পাট ও তুলার মূল্যহ্রাসের জন্যও তিনি সরকারকে দায়ী করেন। তিনি আরও বলেন, তার চলাফেরায় বাঁধা দেয়া না হলে তিনি জানুয়ারিতে বাংলাদেশে আসতেন।
মিটিং এ কিছু রেজোল্যুশন পাশ হয়। এর মধ্যে – নাজিমুদ্দিন ও নুরুল আমিন সরকারের প্রতি অনাস্থা, মাওলানা ভাসানী ও অন্যান্য রাজনৈতিক নেতাদের মুক্তির দাবী, লবণ আইন বাতিলকরন, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও নোয়াখালীর সমুদ্রতীরবর্তী অঞ্চলে সাধারণ মানুষ কর্তৃক লবণ উৎপাদনের অনুমতির দাবী, প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।
জনাব সোহরাওয়ার্দী ও শেখ মুজিবুর রহমান একই রাতে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেন। আর ওদিকে এডভোকেট আতাউর রহমান খান, তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া চট্টগ্রাম থেকে সরাসরি ঢাকা ফিরে যান। [1, pp. 447–448]

Reference:
[1] S. Hasina, Secret Documents of Intelligence Branch on Father of the Nation Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman, Vol II 1951-1952, vol. II. Hakkany Publisher’s, 2018.

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!