এন্টি পাবলিক সেফটি এক্ট, মুজাহিদ বাহিনীর কমিটি, এ কে ফজলুল হকের নতুন দল সম্পর্কে সোহরাওয়ার্দীর কাছে চিঠি
২৫ আগস্ট ১৯৫৩
জনাব সোহরাওয়ার্দী সাহেব
আপনার প্রতি আমার অশেষ শ্রদ্ধা জ্ঞ্যাপন করছি। অনেকদিন হয়েছে লাহোর যাইনা। আরো আগে লেখার ইছা থাকলেও সময় করতে পারিনি। আমরা ঢাকা আসার পরে মাওলানা সাহেব কিছুদিনের জন্য বাড়িতে গেছেন। আমরা ৭ আগষ্টকে জননিরাপত্তা আইন বিরোধী দিবস ঘোষণা করেছিলাম। ইচ্ছা ছিল বাড়িতে বাবা মা ও সন্তানের সাথে দেখা করতে যাবো। কিন্তু প্রোগ্রামের প্রস্তুতির জন্য পারিনি। সকল বিরোধী দল এবং ছাত্রদের সংগঠন আমাদের সমর্থন দিয়েছে। আলোচনায় সিদ্ধান্ত হয়েছে সকল রাজনৈতিক বন্দীদের মুক্তি দিতে হবে এবং জননিরাপত্তা আইন বাতিল করতে হবে। প্রদেশব্যাপী এই দিনটি পালিত হয়েছে। পল্টন ময়দানে প্রায় এক লক্ষ লোকের সমাবেশ হয়েছে। অনুষ্ঠানের দুইদিন আগে মৌলানা সাহেব এর একটি টেলিগ্রাফ পেয়েছি। তার স্ত্রীকে সাপে কামড়িয়েছে এবং তিনি অনুষ্ঠানে আসতে পারবেন না। আমরা তাঁর কাছে ওষুধ পত্র এবং অন্যান্য জিনিস দিয়ে একটি লোক পাঠিয়েছি। এরপর সংবিধান প্রিন্ট করা এবং মেনিফেস্টো তৈরির কাজে ব্যস্ত ছিলাম। সকলেই মেনিফেস্টো টা দেখার জন্যে উদগ্রীব। সাপ্তাহিক ইত্তেফাক প্রকাশের জন্য মানিক মিয়া এবং ইয়ার মোহাম্মদ খুবই প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। আমরা আশা করি আমরা সফল হব। সামাজিক কাজের জন্য আমরা একটি ‘মুজাহিদ বাহিনী’ তৈরি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ত্রিপুরার রফিক হোসেন এল এল বি এবং ফরিদপুরের জালাল উদ্দিন আহমেদ এমএ এল এল বি কে এই বাহিনীর সভাপতি এবং সহ-সভাপতি নিয়োগ দেয়া হয়েছে। মাওলানা সাহেব প্রাদেশিক আওয়ামী লীগ আওয়ামীলীগের ওয়ার্কিং কমিটিতে ২৬ জন সদস্যকে মনোনয়ন দিয়েছেন।
তারা হলেন –
১। একেএম জহিরুল হক বি এল (নীল মিয়া) – ত্রিপুরা
২। আব্দুর রহমান খান বি এল – ত্রিপুরা
৩। আবুল মনসুর বি এল ময়মনসিংহ
৪। হাশিমুদ্দিন এম এস সি বি এল ময়মনসিংহ
৫। হায়দার মল্লিক বি এল ময়মনসিংহ
৬। দিদার আহমেদ বি এল খুলনা
৭। শেখ আবদুল আজিজ এম এ খুলনা
৮। মশিউর রহমান বি এল যশোর
৯। এস ডব্লিউ লাকিতুল্লাহ বি এল বরিশাল
১০। এ মালেক খান বরিশাল
১১। এডভোকেট আব্দুস সালাম খান ফরিদপুর
১২। এম এ আজিজ বি এ চট্টগ্রাম
১৩। জহুর আহমেদ চৌধুরী চট্টগ্রাম
১৪। আবদুল জব্বার খদ্দর – নোয়াখালী
১৫। এম এ শুকুর – সিলেট
১৬। রহিমুদ্দিন আহমেদ বি এল – দিনাজপুর
১৭। দবিরুদ্দিন আহমেদ বি এল – রংপুর
১৮। খয়রাত হোসেন এম এল এ – রংপুর
১৯। ক্যাপ্টেন মনসুর আলী এম এ এল এল বি – পাবনা
২০। মৌলানা আবদুল রশিদ তর্কবাগিশ – পাবনা
২১। মজিবুর রহমান এম এল এল এল বি – রাজশাহী
২২। আকবর হোসেন বি এল – বগুড়া
২৩। কাফিলুদ্দিন আহমেদ, মুক্তার – কুষ্টিয়া
২৪। তফাজ্জেল হোসেন মানিক মিয়া বি এ – ঢাকা
২৫। আনোয়ারা খাতুন এম এ বি টি এল এল বি এম এল এ – ঢাকা
২৬। সৈয়দ আব্দুর রহিম, মুক্তার – ঢাকা।
গত কাউন্সিলে নির্বাচিত এক্স অফিসিও মেম্বারদের তালিকা হচ্ছে –
১। মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী – সভাপতি
২। আতাউর রহমান খান, এডভোকেট – ভাইস প্রেসিডেন্ট
৩। শেখ মুজিবুর রহমান বি এ – সাধারণ সম্পাদক
৪। কোরবান আলী, এম এ, এল এল বি – সাংগঠনিক সম্পাদক
৫। আব্দুর রহমান – প্রচার সম্পাদক
৬। ইয়ার মোহাম্মদ খান – কোধাধ্যক্ষ
এছাড়া বাকি যারা ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য না হলেও মিটিং এ অংশগ্রহণ করার অধিকার রাখেন তাদের তালিকা নীচে দেয়া হল।
১। মোঃ মাহামুদুল্লাহ, বি এল – অফিস সেক্রেটারি
২। হাশিমুদ্দিন এম এস সি, এল এল বি – রিজিওনাল অর্গানাইজার (ঢাকা, ময়মনসিংহ)
৩। ক্যাপ্টেন শামশুল হক, এম এ – রিজিওনাল অর্গানাইজার উত্তরাঞ্চল (পাবনা, বগুড়া, রাজশাহী)
৪। আবদুল হাই এম এ – রিজিওনাল অর্গানাইজার দক্ষিণ (ফরিদপুর, বরিশাল, কুষ্টিয়া, যশোর, খুলনা)
৫। এম এ বারী – রিজিওনাল অর্গানাইজার পূর্বাঞ্চল (সিলেট, চট্টগ্রাম, টিপ্পেরা, নোয়াখালী)
(Note: ইনি ৭০ এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র নির্বাচন করেছেন।)
আপনাকে একটি কথা বলতে ভুলে গেছি জনাব ফজলুল হক পাকিস্তান কৃষক শ্রমিক পার্টি নামে একটি দল করেছেন। কমিটিতে যারা রয়েছে তারা হল-
১। একে ফজলুল হক – সভাপতি ও আহবায়ক
২। ইউসুফ আলী চৌধুরী এম এল এ (মোহন মিয়া)
৩। শামসুদ্দিন আহমেদ এম এল এ (কুষ্টিয়া)
৪। আবদুল লতিফ বিশ্বাস (ঢাকা)
৫। গিয়াসুদ্দিন আহমেদ (জামালপুর)
নতুন দল খোলার ব্যাপারে জনমত তার অনুকূলে নয়। তারপরেও সত্যি কথা বলতে তার কিছুটা গ্রহণযোগ্যতা আছে এবং তিনি আমাদের পথে বাধা হতে পারেন। সকলে আশা করে যদি আপনি দ্রুত ঢাকা আসেন হক সাহেবকে বোঝান তাহলে হয়ত তার দল আমাদের পার্টির সাথে এক হতে পারে। তিনি অনেক চেষ্টা করছেন কিন্তু সবাই তাকে বলছে আপনার সাথে অথবা ভাসানীর সাথে মিশে যেতে।
আমাদের ওয়ার্কিং কমিটির প্রথম সভা হবে এই মাসের 24 তারিখ। ঐ মিটিংএ আপনার উপস্থিতি খুবই প্রয়োজন। মুসলিম লীগ ইতোমধ্যে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করে দিয়েছে। কাজেই আমাদের কাজ শুরু করতে কয়েকদিনের জন্য আপনার ঢাকায় আসার প্রয়োজন।
আপনার নিশ্চয়ই মনে আছে লাহোরের মিটিংএ আমি কিছু খরচ করেছিলাম। যে প্রতিনিধির কাছ থেকে আপনি ব্রিফিং পেয়েছেন প্রয়োজন মেটানোর জন্য আমি তাকে কিছু দিতে পারতাম কিন্তু আপনার অনুমতি না নিয়ে আমি তা করতে পারি না। তবে আমি যে পরিমাণটা বলেছিলাম সেটাই আমি তুলবো আপনি যেটা বলেছিলেন সেটা নয়। এখানে আমার ব্যক্তিগত ঠিকানাটি দিয়ে দিলাম।
– শেখ মুজিবুর রহমান স্বাক্ষর
৮/৩ রজনী বোস লেন
আর্মানিটোলা, ঢাকা। [1, pp. 349–354]
References:
[1] S. Hasina, Secret Documents of Intelligence Branch on Father of the Nation, Bangladesh Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman Declassified Documents Vol – III (1953). Hakkany Publisher’s, 2019.