You dont have javascript enabled! Please enable it! পাক ভারত যুদ্ধ ১৯৬৫ঃ পূর্ব পাকিস্তান সেক্টর  - সংগ্রামের নোটবুক

পাক ভারত যুদ্ধ ১৯৬৫ঃ পূর্ব পাকিস্তান সেক্টর
অনেক সামরিক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা তাদের বই বা প্রকাশনায় লিখে গেছেন পাক ভারত যুদ্ধে পূর্বাংশে কোন যুদ্ধই হয় নাই। যুদ্ধের কোন সংজ্ঞায় তারা এখানে যা হয়েছিল তা বাদ দিতে চাইছেন। পশ্চিম সেক্টরে আগে থেকেই পাকিস্তান একতরফা যুদ্ধ শুরু করলেও ভারত তাতে ৬ সেপ্টেম্বর অংশ নেয় ফলে যুদ্ধ শুরুর তারিখ ৬ তারিখ বলা হয়ে থাকে। পূর্বাংশে ভারতের রন কৌশল ছিল ভিন্ন। তাদের টার্গেট ছিল সকল সরবরাহ পথ বিনষ্ট করা। এই জন্য তাদের পদাতিক বাহিনী ব্যাবহারের প্রয়োজন ছিল না। অপারেশন জিব্রালটার এর মাধ্যমে পাকিস্তান প্রথমে পশ্চিম ফ্রন্টে বিদ্রোহীদের পাঠাইয়াছিল। ভারতের সে রকম চিন্তাধারাও ছিল। ৭ সেপ্টেম্বর পশ্চিম বঙ্গের মেদিনীপুর জেলার খরগপুরে অবস্থিত কালাইকুনডা এয়ারবেজ থেকে ২টি ক্যানবেরা উড়ে যায় চট্টগ্রাম বিমান বন্দর আক্রমনের উদ্দেশে। সেখানে ১টি থেকে রানওয়ের মাঝে বোমা ফেলা হয় কিন্তু সেটি বিস্ফোরিত হয় নাই। পরে ক্যানবেরা ২ টি কালাইকুনডা ফিরে আসে। এই খবর জানাজানি হলে তার কিছুক্ষন পরে ঢাকা বেজ থেকে ৪টি সেবর জেট কালাইকুনডা বেজ আক্রমন করে ক্যানবেরা ২টি ধ্বংস করে দেয়। পাকিস্তানের দাবী তারা ১০টি ক্যানবেরা ২টি হান্টার ধংশ করে ৫টি ক্যানবেরার ক্ষতি করে। এর পরে আবার ৬ টি সেবর জেট ( পাইলট ছিলেন Flight Lieutenants Haleem, Baseer, Tariq Habib Khan ,Flying Officer Afzal Khan, Squadron Leader Shabbir Hussain Syed) আক্রমন করতে আসলে উড্ডীয়মান ভারতীয় ২টি হান্টার তাদের ধাওয়া করে এইবার পাকিস্তান ১টি সেবর জেট হারায় নিহত হয় ফ্লা লে আফজাল খান(ভারতিয় দাবী) ।

লিডিং হান্টারের পাইলট ছিলেন এংলো ইন্ডিয়ান ফ্লা লে অ্যালফ্রেড কুক। অপর হান্টারের পাইলট ছিলেন ফ্লা অফিসার মামগাইন। মামগাইন একটি সেবরকে আঘাত করেন কিন্তু সেটি কোন মতে ঢাকা বেজ এ পৌঁছে। সেই সেবরের পাইলট ছিলেন ফ্লা লে তারিক হাবিব খান। এই ঘটনার পর এই সেক্টরে পাকিস্তান আরও দুইবার ১০ ও ১৪ তারিখে bagdobra তে হামলা করে। ভারত থেকে বলা হয় পূর্বে আর আক্রমন নয়। পূর্বে ভারত পাকিস্তানের বিমান সক্ষমতা চ্ছিল ১১ঃ১। পাকিস্তানী প্রকাশনা সুত্রে জানা যায় ৬-৭ তারিখ রাতে ঢাকা, চট্টগ্রাম, লালমনিরহাট, ঠাকুরগাঁ এবং কুর্মিটোলা এয়ারপোর্টে ছোট খাটো বিমান হামলা করে ভারত। কুর্মিটোলা এয়ারপোর্ট সংলগ্ন বিমান বাহিনী আবাসিক এলাকায় বিমান থেকে রকেট হামলা করলে একজন সার্জেন্ট এআর চৌধুরী ও একজন শিশু নিহত হয়। কুর্মিটোলা এয়ার পোর্টে হামলার সময় ২টি সেবর তাদের ধাওয়া করলে একটি সেবর আর ফিরে আসে নাই। তার পাইলট ছিলেন ফ্লা লে এটিএম আজিজ। পরে ঢাকার ৪০ কি মি উত্তরে বিমানের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া যায়। ১০ তারিখ পিএএফ এর ৪টি সেবর জেট ঠাকুরগাঁয়ের পশ্চিমে bagdobra বেজ ১৪ তারিখ বেরাকপুর, আগরতলা আক্রমন করে। এই আক্রমনে পাক বাহিনী ৫টি পরিবহন বিমান, ১টি হেলিকপ্টার, ১টি ক্যানবেরা, ২টি জেট বিমান ধংশ করে। পাকিস্তানী ফ্লা লে তারেক হাবিব ও squadron leadar সাব্বির হসাইন সাইদ সিতারা ই জুরাত পদক লাভ করেন। ভারতীয় পাইলট ফ্লা লে আলফ্রেড কুক ভিরচক্র পদকে ভূষিত হন।
বিমান যুদ্ধ সম্পর্কে মমতাজ ইকবাল নামে নারায়ণগঞ্জের লয়েড ব্যাংক কর্মকর্তা স্মৃতি চারন করে বলেন এই সময়ে কত কষ্ট করতে হয়েছে দেশে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছিল, তেল মবিল কেরোসিন বন্ধ, রাত্রে ব্লাক আউট। ব্যাংক থেকে হিন্দু বেবসায়ি দের টাকা উত্তোলন, বিদেশী ও পশ্চিম পাকিস্তানীদের অন্যত্র আশ্রয় নেয়া ছিল স্বাভাবিক কাজের অংশ। তার ভাই মেজর কামাল মমতাজ ছিলেন তখন ঠাকুরগাঁয়ে, সেখানে এসএসএফ কম্যান্ডো এর একটি কোম্পানি মোতায়েন ছিল তার কম্যান্ডে। হিন্দু বেবসায়ি তোলারামের পাঁট কেনা নিয়া তদন্তে তার যেতে হয়েছিল রংপুর। সেখানে তার সাথে দেখা হয়েছিল খালেদ মোশারফের। তখন তিনি ক্যাপ্টেন ৪ বেঙ্গলে বদলি হয়ে এখন রংপুরে। রংপুর রেল স্টেশনে বিমান হামলায় ক্ষতিগ্রস্থ হলেও রেল চলাচল উপযোগী ছিল ফলে তিনি ঢাকা ফিরতে পেরেছিলেন। তবে ট্রেন চলত খুব ধীর গতিতে। খালেদ সম্পর্কে তিনি লিখেছেন মিজোরা ভারত থেকে বিতারিত হয়ে এদেশে আসার পর জিওসি ইয়াহিয়া খান তাদের মধুপুর জঙ্গলে প্রশিক্ষনের বেবস্থা করেছিলেন। সেই প্রশিক্ষক দলের একজন ছিলেন খালেদ। তার ভাই সম্পর্কে তিনি বলেন ঠাকুরগাঁয়ের উত্তরে তাদের যাওয়া বা ভারতিয় বাহিনীর উপর হামলা করা তাদের বারন ছিল। তিনি বলেন যুদ্ধের আগে ভারত থেকে ট্রেন আসতো গোয়ালন্দে তারপর এদেশের ষ্টীমার করে চাদপুর আবার সেখান থেকে ভারতীয় ট্রেনে আসাম যাওয়া যেত পাসপোর্ট ছাড়াই। নারায়ণগঞ্জে ফিরে এসে অফিস করতেই দেখেন বিকট শব্দ। সকল দোকান পাট অফিস আদালত বন্দ। সারা শহর জন শুন্য। পরে জানা গেল রিকশার চাকা পাংচার হয়েছিলো।
ঢাকায় ভারতীয় ডেপুটি হাই কমিশনার এম.কে রায় দেশে গিয়েছিলেন তার দেশের করনীয় সম্পর্কে। এদিকে তার স্ত্রীর ডেলিভারি আসন্ন। তার বাসা পুলিস ঘেরাও করে রেখেছে। সেখানে ৩০০ ভারতিয় নাগরিক আশ্রয় নিয়াছে। পাকিস্তানিরা তাকে তার আমেরিকান ডাক্তার দেখাতে দেয় না, পাকিস্তানি ডাক্তারের চিকিতসা নিতে বলে। তিনি ব্রিটিশ নাগরিকদের রেস্কিউ প্লেনে সিঙ্গাপুর রওয়ানা হওয়ার প্রাক্কালে কারো রেডিও থেকে সংবাদ পান যুদ্ধ বিরতি হয়ে গেছে। তিনি আর সিঙ্গাপুর গেলেন না। এর মধ্যে দুই দেশের মধ্যে বিমান চলাচল শুরু হয়ে গেলে ডেপুটি হাই কমিশনার ফিরে আসেন এবং তার পরদিন তার শিশু ভূমিষ্ঠ হয়। পশ্চিম পাকিস্তানের প্রখ্যাত সাংস্কৃতিক বেক্তিত্ত চাগাতাই খান এসেছিলেন ঢাকায় উঠেছিলেন হোটেল শাহবাগের ৩০৪-৩০৫ নং কক্ষে কাজ ছিল দুই প্রদেশের নাগরিকদের আর কাছাকাছি আনার জন্য একটি সাংস্কৃতিক মেইল বন্ধন তৈরি করা। সুফিয়া কামাল এদের সাথে বিভিন্ন অনুষ্ঠান করে হোটেলে ফিরেই দেখেন অধিকাংশ বোর্ডারদের হোটেল থেকে বের করে দেয়া হচ্ছে। একটু পরেই দেখেন আকাশে ডগ ফাইট কি আর করা ৩য় দেশ হয়ে পশ্চিম পাকিস্তানে ফেরা। কোন মতে একটি বিমানে চেপে কলম্বো হয়ে করাচী। সিলেট, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সীমান্তে কিছু যায়গা নিয়া দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘদিন বিরোধ চলছিল। বেশ কয়েকবার হামলা পালটা হয়েছে সেই যায়গাসহ অনেক যায়গায়। ৫৮ সালে বড় ধরনের এক সংঘর্ষ হয়। ভারতীয় সীমান্ত পুলিশের (তখন বিএসএফ হয় নাই) অবাধ চলাফেরা। প্রদেশে মাত্র দুইটি ব্রিগেড কোথায় কি করবে জিওসি ফজলে মুকিম বলে দিয়েছেন আগ বাড়াইয়া কিছু না করতে।