You dont have javascript enabled! Please enable it! 1948.08.12 | পাকিস্তানী গোয়েন্দা নথিতে বঙ্গবন্ধু | “পাকিস্তান দিবস” উপলক্ষে দৈনিক ইত্তেহাদে ১৩.০৮.১৯৪৮ তারিখে প্রকাশিত শেখ মুজিবুর রহমানের বিবৃতি - সংগ্রামের নোটবুক

“পাকিস্তান দিবস” উপলক্ষে দৈনিক ইত্তেহাদে ১৩.০৮.১৯৪৮ তারিখে প্রকাশিত শেখ মুজিবুর রহমানের বিবৃতি

পাকিস্থান প্রতিষ্ঠা দিবস
ছাত্র সমপ্রদায়ের কর্তব্য
বিশিষ্ঠ লীগ কর্মী শেখ মুজিবুর রহমানের বিবৃতি
(ঢাকা অফিস হইতে প্রাপ্ত)

ঢাকা, ১২ ই আগস্ট – অধুনা বিলুপ্ত বঙ্গীয় প্রাদেশিক লীগ কাউন্সিলের সদস্য ও পুর্ব পাকিস্থানের সাম্প্রতিক রাষ্ট্রভাষা আন্দোলোনের অন্যতম নেতা শেখ মুজিবর রহমান নিন্মোক্ত বিবৃতি দিয়েছেন :-

পূর্ব পাকিস্থান মুসলিম ছাত্রলীগ সংগঠন কমিটির আহ্বায়ক মওলবী নঈমুদ্দিন আহমদ আসন্ন ‘আজাদী দিবসে’ ছাত্র সমাজের কর্তব্য সম্পর্কে একটি বিবৃতি দিয়েছেন। ঐ দিবসে গণআজাদী ও দেওয়ানী আজাদী প্রতিষ্ঠার সঙ্কল্প গ্রহণ করার জন্যে তিনি ছাত্র সমাজকে আহবান জানাইয়াছেন। নঈমুদ্দীন সাহেবের এক সময়োপযোগী আহবানকে আমি সর্বান্তঃকরণে সমর্থন করি।

১৯৪৭ সালের ১৫ ই আগস্ট আমরা যে আজাদী লাভ করিয়াছি সেটা যে গণ আজাদী নয়, তা গত একটি বছরে সুস্পষ্টভাবে প্রমানিত হইয়াছে। জাতীয় মন্ত্রীসভা দীর্ঘ একটি বছরে জনগনের দুইশ বছরের পূঞ্জীভুত দুঃখ -দুর্দশা মোচনের কোন চেষ্টা তো করেনাই, বরঞ্চ সেই বোঝার উপর অসংখ্য শাকের আটি চাপাইয়াছে। ভুখা, বিবস্ত্র, জরাগ্রস্ত ও শত অভাবের ভারে ন্যুজ জনসাধারনের ভাত, কাপড়, ওষুধ পত্র ও অন্যান্য নিত্য ব্যাবহার্য দ্রব্যের কোন ব্যাবস্থা তারা করেন নাই ; বরঞ্চ পাট, তামাক শুপারি ইত্যাদির উপর নয়া ট্যাক্স বসাইয়াও বিক্রয় -কর বৃদ্ধি করিয়া জনগনের দৈনন্দিন জোবন দুর্বিসহ করিয়া তুলিয়াছেন । বিনা খেসারতে জমীদারি বিলোপের ওয়াদা খেলাপ করিয়া তাঁরা জমিদার ও মধ্যসত্ত্বভোগীদিগকে পঞ্চাশ ষাট কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ব্যবস্থা করিতেছেন। নুতন জরীপের নাম।করিয়া তাঁরা জমিদারী প্রথার সম্পূর্ণ বিলোপ আট বছর স্থগিত রাখার ষড়যন্ত্র করিতেছেন। শুধু তাই নয়, রাষ্ট্রের নিরপত্তার অছিলায় তাঁরা অনেক দেশভক্ত লীগ কর্মীকে বিনা বিচারে কিয়েদ খানায় আটকাইয়া রাখিতেছেন। রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে মুসলিম ছাত্র সমাজের উপর এবং আরও কতিপয় ক্ষেত্রে জনতার উপর লাঠি চার্জ, কাঁদুনে গ্যাস ব্যবহার ও গুলী চালনা করিয়া তাঁরা আজাদীকে কলঙ্কিত করিয়াছেন । আজ সেই মন্ত্রীসিভাই আজাদী উৎসবের সাময়িক সমারোহের দ্বারা নিজেদের অথর্ব্বতা ও প্রগতিশীলতা ঢাকিবার প্রয়াশ পাইতেছেন।

বস্তুতঃ গণ-জীবনে আজাদীর পরিবেশ সৃষ্টি না করিয়া আজাদী উৎসব করিতে যাওয়া এবং বন্যাক্লিষ্ট, দুর্বিক্ষ-পীড়িত মরোণম্মুখ জনগনকে সেই উৎসবের শরিক হইতে বলা নিষ্ঠুর পরিহাস ছাড়া আর কিছুই নয়। এই প্রহসনে আত্মপ্রতারিত “নেতারাই” সন্তুষ্ট থাকিতে পারেন, জনগণ -বিশেষ করিয়া সচেতন ছাত্র ও যুব সমাজ উহা দ্বারা বিভ্রান্ত হইবে না। তারা আজাদী অবশ্যই পালন করিবে, কিন্তু সেটা উৎসবের দিন হিসাবে নয়, উৎপিড়নের নিগঢ় ছিন্ম করার সঙ্কল্প নেয়ার দিবস হিসাবে পালন করিবে।

আমি আশা করি, মিঃ নঈমুদ্দীন আহমদের আহবানে সুধু মুসলীম ছাত্র সমাজ নয়, গক্টা ছাত্র ও যুব সমাজ একই বাক্যে সাড়া দিবেম এবং ১৫ ই আগষ্টকে “সঙ্কল্প দিবস” হিসাবে সফল করিয়া তুলিবেন। [1, pp. 44–45]

References:
[1] S. Hasina, Secret Documents of Intelligence Branch on Father of the Nation Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman, Vol I 1948-1950. Hakkany Publisher’s, 2018.