আওয়ামী লীগ সম্পর্কে মােহভঙ্গ হােক
নির্মল চট্টোপাধ্যায়
পূর্ববাংলার লক্ষ লক্ষ ছিন্নমূল যখন নিরাশ্রয় অবস্থায় খােলা আকাশের নিচে মৃত্যুর সঙ্গে যুদ্ধ করে কোনােক্রমে প্রাণে বেঁচে আছে, তখন আমরা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দকে আরামে-আয়েশে বহাল তবিয়তে কলকাতার বিভিন্ন অট্টালিকাতে ফুর্তির আসর জমাতে দেখতে পাচ্ছি। তাদের সংকীর্ণমনা, স্বার্থপর দুর্বল নেতৃত্ব পূর্ববাংলার মুক্তিযযাদ্ধাদের পরিচালনা করতে ব্যর্থ এটা আজ সবাই উপলব্ধি করতে সক্ষম। তাদের দ্বারা আর যাই হােক না কেন, জাতীয় স্বাধীনতার নেতৃত্ব দেয়া কোনােক্রমেই সম্ভব নয়। অতি সতর্কতায় এর পূর্ববাংলার কমিউনিস্টদের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের সংবাদ চেপে রেখেছে। কিন্তু ক্রমে সত্য প্রকাশিত হচ্ছে আর সঙ্গে সঙ্গে প্রকাশ পাচ্ছে আওয়ামী লীগের আসল রূপ। নেতৃত্ব হারানাের ভয়ে ভীত হয়ে আজ তারা প্রতিক্রিয়াশীল ইন্দিরা সরকারের পুলিশ বাহিনীর নিকট পূর্ববাংলার বামপন্থীদের ধরিয়ে দিচ্ছে। শুধু তাই নয়, ইন্দিরার গুপ্তচর বৃত্তি করে তারা বিভিন্ন সি পি এম নেতাদের বিরুদ্ধেও গুপ্তচর বৃত্তির মিথ্যা অভিযোেগ আনছে। তাদের কার্যকলাপে স্পষ্টই ধরা পড়ে যে, আওয়ামী লীগ নেতৃবর্গ হচ্ছে চরম প্রতিক্রিয়াশীল, কট্টর কমিউনিস্ট বিরােধী এবং ইন্দিরা সরকারের দালাল ও স্নেহভাজন। এদের এ ধরনের কার্যকলাপ বিনাপ্রতিবাদে চলতে থাকলে অদূর ভবিষ্যতে এরা প্রতিক্রিয়াশীল ইন্দিরা সরকারের পেটোয়া একটি গুপ্তচর প্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে, যা শুধু পূর্ববাংলারই নয় পশ্চিমবাংলারও কমিউনিস্টদের সমূহ বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়াবে।
পূর্ববাংলার নির্যাতিত দুঃখী উদ্বাস্তুদের সঙ্গে আমাদের কোনাে বিরােধ বা তাদের বিরুদ্ধে আমাদের কোনাে বক্তব্য নেই। বরং তাদের এ দুর্দিনে আমরা যথাসম্ভব সাহায্য-সহায়তা করেছি এবং আরাে করবাে। কিন্তু সি পি এম-এর একজন সাধারণ কর্মী হিসেবে আমি আমার পার্টির নেতৃবর্গকে কোনাে মােহাবদ্ধ না থেকে বরং আওয়ামী লীগের নেতৃবর্গের কার্যাবলী পার্টির ভবিষ্যত চিন্তা করে সময় থাকতেই মােকাবেলা করার অনুরােধ জানাচ্ছি।
সূত্র: দর্পণ
১১.০৬.১৯৭১