You dont have javascript enabled! Please enable it!

রাজশাহীর সভায় পাঞ্জাব, চট্টগ্রাম, ঢাকা ও করাচীতে পুলিশ কর্তৃক গুলিবর্ষনের প্রতিবাদ

২৮ জানুয়ারি ১৯৫৩ তারিখের পাকিস্তানী গোয়েন্দা রিপোর্টে জানা যায়, ২৭ জানুয়ারি ১৯৫৩ তারিখে বেলা সাড়ে বারোটায় হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও শেখ মুজিবুর রহমান নাটোর থেকে রাজশাহী পৌঁছেন। তাদের সাথে ছিলেন নোয়াখালীর মোহাম্মদ ইসমাইল, বগুড়ার মোজাম্মেল হক, পাবনার সাইদুদ্দিন, এবং রংপুর কলেজের কয়েকজন। তাঁরা ডাক-বাংলোতে অবস্থান করেন। সকাল থেকে লিফলেট বিলি করা হয়। তাতে লেখা ছিলো হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী রাজশাহীর ভুবন মোহন পার্কে মিটিং করবেন। রাজশাহীর নেতা মজিবর রহমান এম এ এল এল বি এসবের ব্যবস্থা করেছেন।
বিকাল সাড়ে তিনটা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত ভুবন মোহন পার্কে বিশাল জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। কয়েক হাজার লোকের সমাবেশ ঘটে। রাজশাহী যুবলীগের ভাইস প্রেসিডেন্ট আবদুল জব্বারের প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে জনাব সাইদুদ্দিন মিটিং এর সভাপতির আসন গ্রহণ করেন।
মিটিং এ পূর্ব বাংলা আওয়ামী মুসলিম লীগের সেক্রেটারি শেখ মুজিবুর রহমান, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী বক্তব্য পেশ করেন এবং মোহাম্মদ ইসমাইল সঙ্গীত পরিবেশন করেন। বক্তারা বলেন মুসলিম লীগের অনেকে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির কাজ করে যাচ্ছে। উদাহরণ হিসেবে পূর্ব বাংলার খাজা গ্রুপ এবং পশ্চিম পাকিস্তানের কয়েকজনের নাম উল্লেখ করেন। তারা বলেন, অদক্ষ মন্ত্রীদের দিয়ে অনৈতিক কাজ করিয়ে নেয়া হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর সমালোচনা করে বলা হয় দেশে খাদ্য সমস্যা চলছে, শিক্ষা, বাণিজ্য, শিল্প প্রতিটি খেটরে মন্ত্রীরা অদক্ষতার পরিচয় দিচ্ছে। বক্তারা সবাইকে আওয়ামী লীগে যোগদান করার আহবান জানান এবং তাদের দলের মেনিফেস্টো অনুযায়ী কাজ করার প্রতিশ্রুতি দেন। পাঞ্জাব, চট্টগ্রাম, ঢাকা ও করাচীতে পুলিশ কর্তৃক জনগণ ও ছাত্রদের উপর গুলি চালানোর তীব্র প্রতিবাদ করেন।
মিটিং এর শেষ দিকে শেখ মুজিবুর রহমান প্রস্তাবিত রেজোল্যুশন পাশ হয়। এতে ছিল, ১। অতি সত্বর মাওলানা ভাসানী সহ সকল নেতাকর্মীদের মুক্তি দিতে হবে। ২। Public Safety Ordinance বন্ধ করতে হবে। ৩। পাসোপোর্ট ও ভিসা পদ্ধতি বাতিল করতে হবে। ৪। বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করতে হবে। ৫। কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক সরকারের উপর অনাস্থা এনে অতি সত্বর নির্বাচনের দাবী। ৬। করাচীতে ছাত্রদের উপর গুলিবর্ষনের বিচার করতে হবে। ৭। অতি সত্বর বিনামূল্যে প্রাথমিক শিক্ষা চালু করতে হবে।

সভা শেষে যারা কোন রাজনৈতিক দলের সদস্য নন, এরকম অনেকেই আওয়ামী লীগে যোগদানে আগ্রহ দেখান। নতুন সৃষ্ট “গণতন্ত্রী দল” এর অবস্থা বিপন্ন হওয়ায় তাদের অনেক সদস্যও আওয়ামী লীগে যোগদানের আগ্রহ দেখায়। সভায় আশাতীত লোকসমাগম ছিলো। [1, pp. 56–57]

References:
[1] S. Hasina, Secret Documents of Intelligence Branch on Father of the Nation, Bangladesh Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman Declassified Documents Vol – III (1953). Hakkany Publisher’s, 2019.

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!