১৪ মে ১৯৭১ এ কে খন্দকার
গ্রুপ ক্যাপ্টেন এ কে খন্দকার কুমিল্লা কালির বাজার হয়ে ভারতের মতিনগর বিএসএফ ক্যাম্পে উপস্থিত হন।
এ কে খন্দকার , স্মৃতিচারন, স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিলপত্র, ১৫ খণ্ড
সীমান্ত অতিক্রমের পরবর্তী চেষ্টা চালাই ১০ই মে। এবার লক্ষ্য ছিলো কুমিল্লার পথে সীমান্ত অতিক্রম করা। নবীনগর পর্যন্ত গিয়ে পাক বাহিনীর সমাবেশ দেখে ফিরে আসি এবং নরসিংদীর কাছে এক জুট মিলের রেস্ট হাউজে আশ্রয় নেই। মিলের ম্যানেজার ছিলেন ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট রেজা এবং তিনিও আমাদের সাথে সীমান্ত অতিক্রমকারীদের একজন ছিলেন।
১২ই মে রাতে কুমিল্লার কালির বাজারে জনৈক কৃষকের বাড়ীতে রাত কাটানোর স্মৃতি আমার স্মরণে এখনো অম্লান। কৃষকটির বাড়িতে আমরা বেশ কয়েকটি পরিবার আশ্রয় নিয়েছিলাম। রাত ২/৩ টার দিকে হঠাৎ দরজায় করাঘাত। পাক সেনা হবে ভেবে কেউ কেউ দরজা খুলতে দ্বিধা করছিলেন। বললাম, পাক সেনারা এসে থাকলে দরজা না খুললেও তারা ভেঙ্গে ঢুকবে। যারা দ্বিধা করছিলেন তারাও একমত হলেন যে, দরজা খোলাই সংগত। দরজা খুলে দেখি বাইরে দাঁড়িয়ে গৃহস্বামী স্বয়ং। তিনি আমাদের জন্য কিছু খাবারের ব্যবস্থা করেছেন এবং বিনয় ও আন্তরিকতার সাথে আমাদের খাবারের দাওয়াত দিতে এসেছেন। দরিদ্র কৃষকের বাড়ী। এতো রাতে এতো গুলো লোকের জন্য এত ভাল ভাল খাবারের ব্যবস্থা দেখে আমরা সবাই বিস্মিত। একদিকে আমরা যেমন বিব্রতবোধ করছিলাম অন্যদিকে তেমনি এই গ্রাম্য কৃষকের আন্তরিকতায় অভিভূত হই। পরে জেনেছিলাম যে আমাদের আশ্রয়দানের অপরাধে আমরা চলে যাবার পর পাকসেনারা উক্ত কৃষকের বাড়ী জ্বালিয়ে দেয়। আমাদের আশ্রয়দাতা উক্ত কৃষক ও স্থানীয় অন্যান্য কতিপয় লোকের সহায়তায় পরদিন আমরা সীমান্ত অতিক্রম করে মতিনগর বিএসঅএফ ক্যাম্পে উপস্থিত হই।
নোটঃ ফ্লাইট লেফট্যান্যান্ট মারগুব পরে (বাংলাদেশ বিমান দুর্ঘটনায় মারা যান) ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট নুরুল কাদের এই যাত্রার শরীক ছিলেন।