১১ মে ১৯৭১
মুন্সীগঞ্জে পাক সেনাদের বিপুল অভ্যর্থনা জ্ঞাপন
মুন্সীগঞ্জ, ১১ই মে (পিপিআই)। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর জোয়ানরা গত ৯ই মে মুন্সীগঞ্জে উপনিত হলে মুন্সীগঞ্জ মহকুমার জনসাধারন ও সরকারী করর্মচারীরা তাদের আন্তরিক অভ্যর্থনা জানান। পিপিআই বার্তা সংস্থার বিশেষ সংবাদাতা এ কথা লিখেছেন।
মেজর জাবেদের নেতৃত্বে পাকিস্তানী সেনাদও মুন্সীগঞ্জে সেনাদল উপনিত হলে সেখানকার বিভিন্ন শ্রেনীর লোক এই সেনাদলকে বিপুল অভ্যর্থনা জ্ঞাপন করেন।এর আগে জনসাধারন সকল দালান কোটা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং বাজার সমূহে পাকিস্তানের পতাকা উওোলন করেন।
পাকিস্তানি সেনা দল টাউনে উপনীত হলে সেখানে একটা আনন্দমূখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়।
এরপর সেনাবাহিনীর অফিসাররা জাতীয় পরিষদেও সাবেক সদস্য এবং মুন্সীগঞ্জ টাউন কমটির চেয়ারম্যান জনাব আবদুল হাকিম বিক্রমপুরীসহ স্থানীয় সরকারী কর্মচারী ও নেতৃত্বস্থানীয় ব্যক্তিদের সাথে এক বৈঠকে মিলিত হন। বৈঠকে জনাব বিক্রমপুরী সামরিক অফিসারদের মুন্সীগঞ্জ মহকুমার জনসাধারনের আন্তরিক ও পূর্ন সহয়োগিতার আশ্বাস দেন।
জনাব বিক্রমপুরী আরও বলেন ,লৌহজং,টঙ্গীবাড়ী, গজারিয়া, শ্রীনগর এবং সিরাজদিখান নিয়ে গঠিত এই মহকুমার জনসাধারন সব সময়ই আইনানুগ, শান্তিপ্রিয় এবং দেশপ্রেমিক।
সকর দোকান পাট, সরকারী ও বেসরকারী অফিসগুলো তাদের স্বাভাবিক কর্মতৎপরতা অব্যাহত রাখে।কোন ব্যক্তিই ভয় ও আতংকে টাউন ছেড়ে যায়নি।
সমরিক অফিসাররা বাজার পরিদর্শন করেন এবং দেখতে পান যে, নিত্য প্রয়োজনীয় পন্য দ্রব্যাদির মূল্যও স্বাভাবিক ও যুক্তিসঙ্গত পর্যায়ে রয়েছে। পন্য দ্রব্যের সরবরাহও সন্তোসজনক রয়েছে। মুন্সীগঞ্জের কৃষকরা আউস ফসল কাটছেন। কৃষকরা আবার অন্যান্য ধরনের ধানও রোপন করেছেন।
সেনাবহিনীর দলটি মুন্সীগঞ্জের অভ্যন্তরে টঙ্গীবাড়ী,সিরাজদি খান, রামপাল(ঐতিহাসিক স্থান) এবং অন্যান্য গুরুত্বপূন অংশ সফর করেন। এখানে উল্লেখ্য যে, সেনাবাহিনী পদ্মা নদী দিয়ে মাওয়া, ভাগ্যকুল এবং কুমারভোগ অতিক্রম করাকালে লৌহজঙ্গে জনসাধারন তাদের আন্তরিক অভ্যর্থনা জানান।
ইতিমধ্যে মুন্সীগঞ্জ কুমার ইউনিয়ন কাউন্সিলের সদস্য এবং শান্তিপূর্ন জনসাধারনদের তাদের নিজ নিজ এলাকায় শান্তি কমিটির সভা অনুষ্ঠান বেস্ত থাকতে দেখা গিয়েছে। তারা ভারতীয় দালালদের হাত থেকে তাদের নিজেদের ভ’মি রক্ষা করতে বদ্ধপরিকর।
এদিকে শান্তি কমিটির নেতা জনাব আবদুল হাকিম বিক্রমপুরী ইতিমধ্যেই ৬৮টি ইউনিয়ন কাউনিাসলের নেতৃস্থানীয় জনসাধারনকে সেনাবাহিনীর দল তাদের স্থানে উপনীত হলে সেনাবাহিনীকে তাদের সহযোগিতা দানের নির্দেশ দিয়েছেন। প্রত্যেকটি এলাকার জনসাধারনই স্থানীয় জনসাধারনের প্রতি সেনাদলের ব্যবহারে মুগ্ধ হয়েছেন। জনসাধারন ও সেনাদল সন্তষ্টির সাথে তাদের মত বিনিময় করেন।
মরহুম আব্দুল হাকিম বিক্রমপুরী ১৯৩৬ সাল থেকে ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ২৯ বৎসর অবিভক্ত বঙ্গীয় আইন পরিষদ, পূর্ব পাকিস্থান আইনসভা এবং পাকিস্থান জাতীয় পরিষদের সদস্য ছিলেন। গ্রামের কথা নামে মুন্সীগঞ্জ থেকে প্রকাশিত একটি পাক্ষিক পত্রিকা তিনি সম্পাদনা করতেন। ৭১ সালে আব্দুল হাকিম বিক্রমপুরীর সম্পাদনায় ‘বিক্রমপুর বার্তা’ নামে একটি পত্রিকা প্রকাশিত হত। ৭১ সালের মে মাসে পাক বাহিনীর যত হত্যা নির্যাতন করেছে তার প্রায় সব গুলির সাথেই বিক্রম পুরির সম্পৃক্ততা ছিল। পাক আর্মির মেজর জাভেদ রহিম ওই পত্রিকায় মুক্তিপাগল জনগন সুভাসের ছবি ছাপিয়ে ঘোষণা দিয়েছিলেন, ‘একে ধরিয়ে দিন। পুরস্কার ১০ হাজার টাকা।’ আব্দুল হাকিম বিক্রমপুরী মুন্সিগঞ্জ পৌরসভার প্রথম চেয়ারম্যান ছিলেন। পার্লামেন্টেরিয়ান প্রয়াত আব্দুল হাকিম বিক্রমপুরীর নাতি মো: আরিফুর রহমান আরিফ ১২নং ওয়ার্ড থেকে আরিফের ছোট ভাই মো: ফরহাদ হোসেন আবির মুন্সিগঞ্জ পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর।
বিক্রমপুরী ১৯৮৭ সালের ৪ জুলাই মৃত্যু বরন করেন।
আব্দুল হাকিম বিক্রমপুরী স্মৃতি সংসদের সাধারন সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা জয়নাল আবেদীন, (পরিচিতি ইমেজ আকারে দেয়া আছে)