You dont have javascript enabled! Please enable it!

বাংলার বাণী

৪ঠা মার্চ, ১৯৭৩, রবিবার, ২০শে ফাল্গুন, ১৩৭৯ বঙ্গাব্দ

নির্বাচনের আর দু’দিন

সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করার সকল ব্যবস্থা গৃহীত হয়েছে বলে প্রধান নির্বাচনী কমিশনার বিচারপতি মোহাম্মদ ইদ্রিস গতকাল প্রকাশিত একটি সাক্ষাৎকারে ঘোষণা করেছেন। অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্যে নির্বাচন কমিশন আনুষাঙ্গিক সকল ব্যবস্থা সম্পন্ন করে আসন্ন সাতই মার্চ দেশে শান্তি ও শৃঙ্খলা বজায় থাকবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন। ইতিমধ্যে দেশের প্রত্যেকটি নির্বাচন কেন্দ্রের জন্যে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, ডকুমেন্ট, সরকারী সীল, ব্যালট পেপার, ব্যালটবাক্স পাঠানো হয়েছে এবং প্রিজাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার, পোলিং অফিসার নিয়োগ ও তাদের প্রাথমিক ট্রেনিংদান কাজ সম্পন্ন হয়ে গেছে বলে তিনি জানিয়েছেন। যে সকল নির্বাচন কেন্দ্রে বৈদ্যুতিক আলোর ব্যবস্থা নেই সে সকল স্থানে প্রয়োজনীয় হ্যারিকেন বা লন্ঠনের ব্যবস্থাও করা হয়েছে। যাতে করে নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয় তার জন্যে কোন প্রকার অবহেলা করা হবেনা বরং সকল প্রকার কার্যকরী ব্যবস্থা গৃহীত হবে বলে নির্বাচন কমিশনার তাঁর দৃঢ়তা প্রকাশ করেন। আর দু’দিন পরে দেশে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের আশ্বাস ইতিপূর্বে সরকার দিয়েছেন। বঙ্গবন্ধুও তাঁর বিভিন্ন বক্তৃতায় জোরের সঙ্গে সে কথা ঘোষণা করেছেন। সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে নির্বাচন কমিশনের উপর। তাঁদের মহান কর্তব্য দেশের এই প্রথম সাধারণ নির্বাচনকে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করে দেওয়া। ঢাকার একটি দৈনিকে প্রকাশিত সাক্ষাৎকারে প্রধান নির্বাচনী কমিশনার অবাধ ও নিরপেক্ষ নীতিতে নির্বাচন অনুষ্ঠানের যে প্রত্যয় প্রকাশ করেছেন তার গুরুত্ব রয়েছে। দেশের শান্তিপ্রিয় মানুষ নির্বাচনের গুরুত্ব অনুধাবন করছে—সঙ্গে সঙ্গে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক এটাও তারা আশা করে। কেননা দেশের মানুষ বর্তমান নানা সঙ্কটাপন্ন অবস্থার মধ্যে থেকেও নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে চলেছে। এমতাবস্থায় যদি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের আশ্বাস তারা না পায় তাহলে শান্তিপ্রিয় মানুষের কাছে নির্বাচন যে একটা ভীতির কারণ হিসেবে প্রতিপন্ন হবে না এমন বলা যায় না। এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সংবাদে প্রকাশ, ভোটদান কেন্দ্রে পুলিশ, রক্ষীবাহিনী ও বি.ডি.আর. বাহিনী নিয়োগ করা হয়েছে। তারা সম্পূর্ণ নিরপেক্ষতা বজায় রেখে নির্বাচন কেন্দ্রের প্রহরার দায়িত্ব পালন করবেন। এছাড়া রয়েছে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবক দল—যারা তাদের নৈতিক দায়িত্ব মনে করে নির্বাচনের দিন শান্তি ও ‍শৃঙ্খলা রক্ষা করার জন্যে প্রচেষ্টা চালাবেন।

আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থেকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন। স্বভাবতঃই বিরোধী দলগুলো নির্বাচনের নিরপেক্ষতার সম্পর্কে বক্তব্য রাখবে। সে কারণে আওয়ামী লীগ সরকারকে অধিক দায়িত্ব পালন করতে হবে নির্বাচনের অবাধ ও নিরপেক্ষতা নীতি বজায় রাখার জন্যে। আর এ ব্যাপারে তারা যে অত্যন্ত সজাগ তাও আমরা লক্ষ্য করেছি তাদের আচরণের মধ্য দিয়ে। কিন্তু বিরোধী দলগুলো এ ব্যাপারে বেশ নৈরাশ্যজনক আচরণ প্রদর্শন করছেন। তারা মুখে যত নীতির প্রচার করছেন কাজে ততটা নয়। এর প্রমাণ প্রতিদিন আওয়ামী লীগ ও তার সমর্থক বিভিন্ন দলের কর্মী ও নেতার মৃত্যু সংবাদ। আমরা আশা করি, ক্ষমতাসীন ও বিরোধী সকল দলই তাদের আচার-আচরণ ও স্বেচ্ছা মনোবৃত্তি বাস্তবায়িত করার জন্যে সর্বশক্তি সহ এগিয়ে আসবেন।

উদোর পিণ্ডি বুদোর ঘাড়ে

যুদ্ধ আর ভালোবাসার ক্ষেত্রে কোন ন্যায় নীতি নাকি নেই। অন্ততঃ আন্তর্জাতিক রাজনীতির জগতে একথাই প্রতীয়মান হচ্ছে। প্যালেষ্টাইনী গেরিলাদের মিউনিক অলিম্পিকে ইসরাইলী খেলোয়াড় হত্যা, ব্যাংককে ইসরাইলী দূতাবাসে হামলা, লিবীয় এয়ার লাইনের একটি বিমানকে ইসরাইল কতৃক গুলী করে ভূপাতিত করা ইত্যাদি কার্যকলাপ ও নৃশংস হত্যাকাণ্ড সেই রীতিনীতিরই পরিচায়ক। মোদ্দা কথা হলো উদোর পিণ্ডি বুদোর ঘাড়ে চাপিয়ে নিজেদের উদ্দেশ্য হাসিল করা একটা রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। সম্প্রতি ব্ল্যাক ডিসেম্বর দলের সদস্য বলে চিহ্নিত কয়েকজন পাকিস্তানী তরুণ লণ্ডনস্থ ভারতীয় দূতাবাসে  হামলা চালিয়েছিলো একই উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য। 

এহেন ন্যায়-নীতি বিবজিত সর্বশেষ যে ঘটনাটির জন্ম হয়েছে তাহলে খার্তুমে ফেলিস্তিন ‘ব্ল্যাক সেপ্টেম্বর গেরিলা দলের ছয়জন সদস্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সউদী আরবের রাষ্ট্রদূতসহ পাঁচজন শীর্ষ স্থানীয় কুটনীতিককে মুক্তিপণ হিসেবে কজা করে রেখেছে। এদের দাবী ইউরোপ, আমেরিকা ও মধ্যপ্রাচ্যে আটক গেরিলাদের মুক্তি দিতে হবে। গেরিলারা আপোস রফার জন্য দু’বার সময়সীমা বেধে দেয়। শেষ পর্যন্ত তারা ইসরাইলী কারাগারে আট ও মহিলাদের মুক্তিদান ও পশ্চিম জামনীতে আটক গেরিলাদের মুক্তিদানের শর্ত ছেড়ে দেয়। 

সর্বশেষ সংবাদে জানা গেছে, আটক মার্কিন রাষ্ট্রদূত মিঃ ক্লিব নোয়েল, মার্কিন চাজ দ্য এ্যাফেয়ার্স মিঃ কাটিস মূরকে গেরিলারা হত্যা করেছে। এবং বেলজিয়ামের চাজ দ্য এ্যাফেয়ার্স মিঃ গ্যু ইদ গুলীতে আহত হয়েছেন। 

আটক রাষ্ট্রদূত ও অন্যান্যরা কেন মৃত্যুবরণ করলেন, তাদের যে কি অপরাধ তা বোধ হয় তারাও জানতে পারেন নি। যেমন জানতে পারেননি লিবিয়া এয়ার লাইনসের একশ’ ছয় জন যাত্রী, মিউনিক অলিম্পিকের নিরীহ নিরপরাধ খেলোয়াড়রা। আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে এই যে উদোর পিণ্ডি বুদোর ঘাড়ে চাপাবার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে তা কোন অবস্থাতেই মঙ্গলঞ্জনক হতে পারে না।

কালেক্টেড অ্যান্ড ইউনিকোডেড বাই- সংগ্রামের নোটবুক 

পত্রিকার মূল কপি পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!