You dont have javascript enabled! Please enable it!

বাংলার বাণী
ঢাকা: ৯ই জুন, শুক্রবার, ২৫ জ্যৈষ্ঠ, ১৩৮০

স্বরাষ্ট্র বিভাগকে কঠোর হস্তে এগিয়ে আসতে হবে

পাট পোড়ার কথা উঠেছে, উঠেছে টাকা চুরির। সংসদে কোনো কথা উঠলে তার গুরুত্ব বেড়ে যায়, হইচই হয় বেশী করে। যে দুটো ঘটনার কথা উল্লেখ করা হয়েছে তা পুরান। কাগজে বিশেষ করে প্রথমটি নিয়ে অনেক লেখা-জোখা হয়েছে, কিন্তু ঐটুকুই। পাট পুড়েছে অথবা পুড়ছে, আওয়ামী লীগ কর্মীরা মরেছে এবং মরছে এসব কথা বলেই সরকারের দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না। সরকারের হাতে একটা বিভাগ রয়েছে, সেটা হল আইন শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা তথা আইন প্রয়োগকারী বিভাগ। যা ঘটেছে তা স্বীকার করার মধ্যে যে সাহসিকতার রয়েছে তা অভিনন্দনযোগ্য কিন্তু সেই অবাঞ্ছিত ঘটনাগুলো ঘটায় থেকে বিরত রাখা তা আরও অধিক অভিনন্দন পেতে পারে। কিন্তু অন্যান্যদের অভিযোগগুলোর কথা ছেড়ে দিলেও সরকারি বিভিন্ন কর্তা ব্যক্তিরা যে অনবরত নানা অঘটন ঘটার কথা স্বীকার করে চলেছেন তাতে করে দ্বিতীয় দফার অভিনন্দন তারা দাবি করতে পারেন না।
এই রাজধানী ঢাকার কথাই ধরা যাক। ব্যাংক ডাকাতি হচ্ছে। সারাদেশে হত্যা করা হচ্ছে ‘দেশপ্রেমিক’ নাগরিক বিশেষ করে আওয়ামী লীগ কর্মীদের। টাকা ছিনতাই করে দুষ্কৃতিকারীরা পালাচ্ছে প্রকাশ্য দিবালোকে। যারা ধরা পড়েছে তাদের অনেকে কোন অদৃশ্য হাতের ইশারায় রাত না পেরুতেই ছাড়া পাচ্ছে। এসবই ঘটছে এবং সরকারের সঙ্গে জড়িত অত্যন্ত পদস্থ ব্যক্তিরা জনসভায়, সংসদে দাঁড়িয়ে তা বিবৃত করছেন। কিন্তু তাদের বিবৃতি বক্তৃতা এবং দের বৎসর অধিককাল ধরে তাদের সহজ স্বীকৃতি গুলো কি মানুষের মনে নিরাপত্তা সম্পর্কে আস্থা ফিরিয়ে আনতে পেরেছে?
পাঁচ কোটি টাকা মূল্যের যে পাট পুড়েছে তা কি শুধুই আকস্মিক দুর্ঘটনা? এর পিছনে কোন সংবদ্ধ দল কাজ করেছে? বঙ্গবন্ধুর নিজের সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। রাষ্ট্রবিরোধী শক্তি এ সকল কাজে লিপ্ত রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। কিন্তু কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে এ ব্যাপারে, তদন্ত করা হয়েছে কতদূর? ব্যাংক ডাকাতি, ছিনতাই তো হরহামেশাই হচ্ছে, এর প্রতিবিধান কতটুকু করা হয়েছে তা তো জানা যায়নি। সংসদ সদস্যকে হত্যা করা হচ্ছে, হত্যা করা হচ্ছে দেশপ্রেমিক হাজার হাজার মানুষকে। হত্যা হচ্ছে এ কথা না বলে হত্যা বন্ধ হচ্ছে কবে তা সরকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিরা বলবেন কি? দেশের মানুষ আজ নানা দুঃখ-দুর্দশায় কালাতিপাত করেছেন। সত্যি বলছি কর্তাব্যক্তিদের শুধু সহজ-সরল স্মৃতিগুলো মানুষের মনে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে যদি না সঙ্গে সঙ্গে তার প্রতিবিধানের ব্যবস্থা নেওয়া হয়। দুষ্কৃতিকারীদের পিটিয়ে হত্যা করার প্রবনতা আমরা উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছি। যেকোন সুস্থ চিন্তা ধারার লোক একে নিন্দা না করে পারে না। কিন্তু আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর চরম উদাসীনতা যে দিনের পর দিন মানুষকে পিটিয়ে হত্যা করার খবরে উল্লাসিত করে তুলছে তাকে কতটুকু গুরুত্বের সঙ্গে সরকার গ্রহণ করেছেন! অত চিন্তা ধারার মানুষগুলোর নিন্দা বাক্য যদি একদিন সাধারন মানুষের উল্লাস এর মধ্যে হারিয়ে যায়! আমরা সরকারের স্বরাষ্ট্র বিভাগকে কঠোর হস্তে এগিয়ে আসবার আহ্বান জানাই। মানুষের মনে প্রথম নিরাপত্তার অভাব জাগিয়ে তুলতে হবে। দুষ্কৃতিকারী এবং সংঘবদ্ধ রাষ্ট্রবিরোধী শক্তিগুলোকে উচ্ছেদ না করা গেলে যে নৈরাজ্য সৃষ্টি হবে তা থেকে জাতি এবং রাষ্ট্রকে রক্ষা করা মুশকিল হবে।

বাণিজ্যমন্ত্রীর প্রস্তাব প্রসঙ্গ

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের বাণিজ্যমন্ত্রী জনাব এ, এইচ, এম কামরুজ্জামান বর্তমানে নয়াদিল্লিতে রয়েছেন। ভারতের সঙ্গে বর্তমান বাণিজ্য ও ভবিষ্যৎ বাণিজ্য সম্পর্কে নিরূপণের জন্য তিনি ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রী শ্রীদেবী প্রসাদ চট্টোপাধ্যায় এর সঙ্গে কয়েক ঘণ্টা ব্যাপী আলোচনা চালিয়েছেন। তাছাড়া ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শ্রী সরদার শরণ সিং এর সঙ্গেও বৈঠকে মিলিত হয়েছেন। ভারত থেকে বিভিন্ন দ্রব্য ক্রয় এর ব্যাপারে তিনি কতগুলো মৌলিক নীতি নিয়ে আলোচনা করেছেন। গতকালের একটি সংবাদে জানা গেছে যে, বাণিজ্য মন্ত্রী জনাব কামরুজ্জামান অনতিবিলম্বে ভারত থেকে যথেষ্ট পরিমাণ কম দামে ভালো কাপড় আমদানি করার এক প্রস্তাব দিয়েছেন। ভারতীয় অর্থমন্ত্রী শ্রী চৌহান আমাদের মন্ত্রীর এ প্রস্তাব বিবেচনা করছেন। দেশের বাণিজ্য সংক্রান্ত বিষয়াদি ছাড়াও অন্যান্য পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় নিয়ে জনাব কামরুজ্জামান ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। আমরা আশা করছি উক্ত সাক্ষাতকার ফলপ্রসূ হয়েছে। সংবাদে আরো জানা গেছে যে, ভারতীয় বাণিজ্যমন্ত্রী শ্রী দেবি প্রসাদ চট্টোপাধ্যায় বাংলাদেশকে প্রয়োজনীয় কাপড় সরবরাহের আশ্বাস প্রদান করেছেন। জনাব কামরুজ্জামান কাপড় আমদানি করণ সংক্রান্ত বিষয়াদি ছাড়াও বীমা প্রশাসন ব্যাংক ও আন্তঃবাণিজ্য বিষয়ক প্রশিক্ষণের জন্য ভারতে বাংলাদেশ থেকে প্রতিনিধি প্রেরণের কথা আলোচনা করেছেন। এ ব্যাপারেও ভারতীয় অর্থমন্ত্রী সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন। বস্তুতপক্ষে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বহিঃবাণিজ্য বিষয়ক সম্পর্ক কি হবে তা নিয়ে চূড়ান্ত পর্যায়ের আলোচনা হয়েছে এবার উভয় দেশের নেতৃবৃন্দের মধ্যে। দেশের কয়েকটি অত্যন্ত আবশ্যকীয় দ্রব্যের অভাব পূরণের জন্য সরকার সবিশেষ সচেষ্ট হয়েছেন। কাপড়ের অভাব তার মধ্যে অন্যতম। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্প্রীতি ও, জি, এল ব্যবস্থার মাধ্যমে কমদামি মোটা কাপড় আমদানি করে দেশের নিদারুণ সংকট পূরণের যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাও একটি লক্ষ্যণীয় বিষয়। আমাদের দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থা নিঃসন্দেহে সংকটাপন্ন। বৈদেশিক মুদ্রার অভাব নিদারুণ। রফতানি বাণিজ্য ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছে। এমতাবস্থায় বিদেশ থেকে খাস্ত, কাপড় ও অন্যান্য কয়েকটি নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস আমদানী করতে সরকারকে গলদঘর্ম হতে হচ্ছে। তবু যে করেই হোক দেশের সাধারণ মানুষের এই মৌলিক অভাব মেটাতেই হবে। আর সে কারণেই সরকারকে মোটা কাপড় ও কম দামের জিনিসপত্র ভারত থেকে আমদানি করার স্বপক্ষে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। বৈদেশিক মুদ্রার অভাব ও রফতানি বাণিজ্য অসমতা হেতু সরকারকে অত্যন্ত বিবেক-বিবেচনা মাধ্যমে এগোতে হবে। আমাদের এই অভাবকে সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করে অনেক সম্রাজ্যবাদী শক্তি সাহায্যের হাত বাড়াবে। সেগুলো গ্রহণ করার বিষয়ে অবশ্যই একবার বিবেচনা করতে হবে আমাদের। কোন অসৎ উদ্দেশ্যে কাছে আমরা বিকিয়ে যেতে পারি না। সেইহেতু বন্ধু ভারতের সহযোগিতায় আমরা আমাদের ব্যবসা বাণিজ্যের ক্ষেত্রে যে সকল প্রতিবন্ধকতা রয়েছে তা কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হবো বলে মনে করি। বাণিজ্যমন্ত্রীর ইস সফর দু,দেশের বন্ধুত্বে আর এক ধাপ অগ্রগতি সাধিত করবে বলেও আমরা বিশ্বাস পোষণ করি।

কালেক্টেড অ্যান্ড ইউনিকোডেড বাই- সংগ্রামের নোটবুক

পত্রিকার মূল কপি পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!