You dont have javascript enabled! Please enable it!

বাংলার বাণী
ঢাকা: ৫ই জুন, সোমবার ২১ শে জৈষ্ঠ ১৩৮০

গোটা রাজনৈতিক অঙ্গনকে কলুষমুক্ত করতে হবে

আসলে কাজটা করবার সময় হয়ে গেছে। আওয়ামী লীগ থেকে যত তাড়াতাড়ি উশৃংখল পারমিটবাজদের তাড়ানো যাবে দেশের এবং দলের জন্য ততই মঙ্গল। আওয়ামীলীগ আর শুধুমাত্র একটা রাজনৈতিক দলই নয় বাংলাদেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সামাজিক ভিত্তিভূমি রচনায় একটা প্লাটফর্ম। আওয়ামী লীগ এখন ক্ষমতায়। এদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছে তারাই। স্বাধীনতার উত্তরকালে সমাজতন্ত্র বিনির্মাণের মহান লক্ষ্যের কথা তারা ঘোষণা করেছে। এবং বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় নীতি ও ব্যবস্থাদি গ্রহণ করা হয়েছে।
যুদ্ধোত্তরকালে মানুষের নানামুখী সমস্যার টানাপোড়নে আওয়ামী লীগের সকল শক্তিকে নিয়োজিত করতে হয়েছিল পূর্ণবাসন, দেশের পুনর্গঠন এবং সাহায্য সমগ্র জনগণের ধারে পৌছিয়ে সম্ভাব্য মৃত্যুর হাত থেকে তাদের বাঁচানোর কাজে। এ কাজে ভুল ত্রুটি হয়তো কোথাও কখনো হয়েছে কিন্তু সার্বিকভাবে আওয়ামীলীগের বিরুদ্ধে ব্যর্থতার অভিযোগ কেউ আনতে পারেনি। আওয়ামী লীগের ভিত্তি এখন গ্রামপর্যায়ে বিস্তৃত বেশি। কর্মীর সংখ্যা বেশি। এর মধ্যে ভালো সঙ্গে সঙ্গে মন্দ লোক ও যে কিছু এসে জোটেনি একথা হলফ করে বলা যায় না। স্বাধীনতার অব্যবহিত পরেই আওয়ামী লীগের ভেতর থেকে স্বার্থান্বেষী লোকদের বহিষ্কার করার একটা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। সে কর্মসূচি অনুযায়ী এমনকি বহু গণপরিষদ সদস্য পার্টির প্রাথমিক সদস্য পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়। সেই থেকে পার্টির ভেতরে শুদ্ধি অভিযান এর অবসান ঘটেনি। গত দেড় বছরে বহু সদস্যকে তাদের সদস্য পদ হারাতে হয়েছে আবার অনেক নতুন সদস্য এসেছেন।
আমাদের দেশে একশ্রেণীর স্বার্থান্বেষী লোকের ক্ষমতাসীন দলে ভিড়ে গিয়ে স্বার্থ হাসিলের প্রবণতা এত বেশি যে অতি বড় সতর্ক চোখও অনেক সময় বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে। গত দেড় বৎসর এমন অনেক লোক আওয়ামীলীগের ছত্রছায়ায় এসে জুটেছে যারা একসময় আওয়ামীলীগের বিরোধিতায় সবচাইতে উচ্চকণ্ঠ ছিল। আজ তারা দলে ঢুকে নানা অনাচার এবং দুর্নীতির মাধ্যমে জনসাধারণের কাছে এই সংগ্রামী সংগঠন কে হেয় প্রতিপন্ন করার কাজে মেতে উঠেছে। এদের কেউ কেউ নিজেদের অভ্যাস ও চরিত্র বসতি এগুলো করছে আবার কেউ কেউ এসেছে আওয়ামী লীগের শত্রুদের এজেন্ট হয়।
মোহাম্মদপুর কর্মী সভায় বক্তৃতা দিতে গিয়ে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক উশৃংখল লোকদের দল থেকে বহিষ্কার করা হবে বলে ঘোষণা করেছেন। এব্যাপারে শুধু আওয়ামী লীগই নয় বরং সকল রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান এগিয়ে আসতে হবে। একের বহিস্কৃত সদস্য যদি অন্যের প্লাটফর্মে গিয়ে রাতারাতি হিরো বনে যেতে পারে তবে এদেশের রাজনীতি থেকে কোনদিনই গণবিরোধী স্বার্থান্বেষী লোকের উৎখাত করা যাবেনা। দায়িত্বশীল রাজনৈতিক সংগঠন সমূহ কি সে বিচক্ষণতা নিয়ে এগিয়ে আসবেন?

নিরালোকে নরক এ নগরি

বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা শহর এখন নিরালোকে নরকে পরিণত হয়েছে। ঘরে আলো নেই, বাইরে আলো নেই সমগ্র, নগরীতে এখন নিরন্ধ অন্ধকারের সাম্রাজ্য। ছিনতাইকারীদের পৌষ মাস, নগরীর পথচারীদের সর্বনাশ। শুধু ঢাকা নগরী নয় ঢাকার বাইরেও আজকাল আলো-আঁধারির খেলাটা দিব্বি জমাটি হয়ে উঠেছে। নগরীতে যেকোনো সময় যেকোনো মুহূর্তে বিনা নোটিশে বিদ্যুৎ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে মফস্বল শহরগুলোর অবস্থা তথৈবচ। বিদ্যুৎ বিভ্রাট শিল্প উৎপাদনের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে চলেছে। নাগরিক জীবনে ডেকে এনেছে অনাহত আমাবস্যা। নগর জীবনের যে একটা জৌলুস রয়েছে, তাও বিদ্যুৎ বিভ্রাটের জন্য উবে গেছে। ঢাকা নগরকে রাতের বেলা এখন আর নগর বলে প্রতীয়মান হয় না। বিদ্যুৎ হীনতায় রাজধানী ঢাকা নগরী এখন নগরবাসীদের কাছে এক নারকীয় যন্ত্রণার শহর হিসেবেই চিহ্নিত হতে যাচ্ছে। একটি স্বাধীন দেশের রাজধানী হিসেবে এহেন অবস্থা নিশ্চয়ই সুখের কথা নয়। নগরবাসীরা আধুনা আলোর অভাবে সন্ধ্যায় অন্ধকার ঘনিয়ে উঠতে না উঠতে বাধ্য হয়ে সুখ নিদ্রায় নাক ডাকাতে শুরু করেছেন। সন্ধ্যার পর পথচলার একটা অন্তহীন সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে। উপরোস্ত মফস্বল শহর গুলোর অবর্ণনীয় দুর্দশা তো লেগেই রয়েছে। রাস্তায় আলো নেই, ঘরের বাতি গুলো অচল হয়ে অন্ধকারের বন্দনা করছে। কিন্তু বিদ্যুতের এই বিভ্রাটের কি কোনো প্রতিকার ব্যবস্থা হবে না? ঢাকা পৌরসভা এবং ঢাকা বিদ্যুৎ সরবরাহ বিভাগের যৌথ উদ্যোগে বর্তমানে নগরীর বাতি জ্বালানোর দায়িত্ব অর্পিত। নগরীর রাস্তায় বাতি কেন জ্বলে না এ প্রশ্নের জবাবে পৌরসভা বলেন, আমাদের দায়িত্ব রাস্তায় বাতি লাগানো ফিউজ, বাল্ব বদলানো, বাতি না জ্বলার কারণ বিদ্যুৎ বিভাগের এখতিয়ার ভুক্ত। ওই দিকে বিদ্যুৎ সরবরাহ বিভাগের বক্তব্য হচ্ছে আমরা শুধু মেইন সুইচ অপারেট করছি, ল্যাম্পপোস্ট লাগাচ্ছি। পৌরসভা বাল্ব লাগাচ্ছে না বলেই বাতি জ্বলছে না।
পৌরসভা এবং বিদ্যুৎ বিভাগের বক্তব্যে সুস্পষ্টভাবে বোঝা যাচ্ছে যে, একে অপরের ঘাড়ে দোষারোপ করে খালাস পেতে চাচ্ছে। নগরীতে বাতি জ্বলছে না, তা নগরবাসীদের তলিয়ে দেখার বিষয় নয়। দাবি হচ্ছে রাস্তার আলো চাই। ঘরে অন্ধকারে অতলে তলিয়ে যেতে চাই না কিন্তু এই আলো আর কতদিন আলেয়া হয়ে থাকবে, নগরবাসীদের পক্ষ থেকে সেটাই আমাদের জিজ্ঞাসা। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা গেল গত শনিবার মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকায় সারা দিনে প্রায় বিশ বার বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ ছিল। এবং এতে জাতীয় সংবাদপত্রগুলো প্রকাশের ব্যাপারে দারুণ সংকটের সম্মুখীন হতে হয়েছে। ঢাকা নগরীর বিভিন্ন এলাকায় প্রতিদিনই এরকম বিদ্যুৎ বিভ্রাট ঘটছে। বিদ্যুৎ এখন সোনার চেয়েও মহার্ঘ বস্তু। বিদ্যুৎ এখন সোনার হরিণে পরিণত হয়েছে। এ বিদ্যুৎ সংকট নিরসনের জন্য সরকারকে অবিলম্বে ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার। কলকারখানা অচল হলে উৎপাদন বিস্থত হবে। নগরীতে বিদ্যুৎ সরবরাহ না থাকলে নাগরিক জীবন চরম বিপর্যয়ের মুখে পতিত হবে। তাছাড়া নগরীর জৌলুস খর্ব হবে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

বন শিল্প উন্নয়ন

আমাদের জাতীয় সম্পদের মধ্যে বনসম্পদ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। বন সম্পদে বাংলাদেশ এককালে সমৃদ্ধ ছিল তবে কোন দেশের শিল্প প্রতিষ্ঠান নির্মাণের কাজ বৃদ্ধি পেলে বনজ সম্পদের উপর স্বাভাবিকভাবেই চাপ পড়ে। সে ক্ষেত্রে বনজ সম্পদের উন্নয়ন ও ব্যবহার সম্পর্কে সুষ্ঠু পরিকল্পনা ও কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করা প্রয়োজন হয়ে থাকে। পাশ্চাত্যের শিল্পায়িত দেশগুলোতেও বন সম্পদের দিকে দৃষ্টি রাখা হয়েছে। সেখানে অবশ্য আবহাওয়া বিশুদ্ধকরণ নিয়ন্ত্রণের পরিকল্পনাতেই মূলতঃ বনজ সম্পদের গুরুত্ব দেওয়া হয়। তবে আমাদের দেশকে মূলতঃ শিল্পায়িত করে তোলার স্বার্থেই এবং সম্পদের উপর অধিক গুরুত্ব দিতে হবে।
প্রসঙ্গক্রমে বলা যায় যে আমাদের বনসম্পদ জাতীয় প্রয়োজন ও চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। তাই চলতি বছরের জাতীয় চাহিদা পূরণ করা দূরে থাক জাতীয় পুনর্গঠনের কাজ পর্যন্ত প্রয়োজনীয় কাঠের অভাবে ব্যাহত হয়েছে। তাই রেলওয়ে স্লিপার, বৈদ্যুতিক এবং টেলিফোনের থাম এর অভাবে একান্ত ভাবে ঠেকে যাওয়া কাজগুলোও করা সম্ভব হয়নি। কারণ হানাদার আমলে রেলওয়ে স্লিপার এর যে পরিমান ক্ষতি হয়েছে শুধু সেই ক্ষতি পূরণ করতেই প্রায় চার কোটি টাকার কাঠ বিদেশ থেকে আমদানি করতে হতো। চায়ের (অস্পষ্ট) , বৈদ্যুতিক ও টেলিফোনের থাম তৈরীর জন্য আমদানি করতে হতো প্রায় আড়াই কোটি টাকা মুল্যের কাঠ। এক্ষেত্রে আশার কথা এই যে প্রথম পাঁচশালা পরিকল্পনাতেই জাতীয় সরকার বনশিল্প উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ এর দিকে এক সুপরিকল্পনা রেখেছেন এ প্রসঙ্গে বলা যায়, শিল্প উন্নয়নের চেষ্টার সঙ্গে সঙ্গে তা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। কারণ একমাত্র জ্বালানি হিসেবে দেশের বন সম্পদের বহু পরিমাণ কাঠ শহরে ও গ্রামে প্রতিদিন পুড়িয়ে ফেলা হচ্ছে। এই অবস্থার প্রেক্ষিতে জ্বালানীর বিকল্প ব্যবস্থার আয়োজন করতে হবে এবং জ্বালানি হিসেবে কাঠের ব্যবহার কমানোর জন্য বাস্তবমুখী কর্মসূচি অতিসত্বর নিতে হবে।
অপরদিকে অরণ্য সম্পদ উন্নয়নের প্রথম সোপান হিসেবে বৃক্ষরোপণ সপ্তাহকে ব্যবহারিক মূল্যায়নের ভিত্তিতে আরও তাৎপর্যপূর্ণ করে তুলতে হবে। স্বাধীনতার পরে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বহস্তে বৃক্ষরোপণ করে উক্ত সপ্তাহে কে গুরুত্ব দিয়েছিলেন। বৃক্ষরোপণ সপ্তাহ পালন এর প্রধান উদ্দেশ্যই হলো ক্ষয়িষ্ণু বন সম্পদের ঘাটতি পূরণ। অতএব এর গুরুত্বকে অস্বীকার করার উপায় নেই।
বাংলাদেশে বর্তমানে বিভিন্ন প্রকল্পে প্রচুর কাঠ প্রয়োজন। এ অবস্থায় সুন্দরবনের সুন্দরী গাছের ব্যাপক মোড়কের খবর পাওয়া গেছে। সেগুলো সংরক্ষণেরও ব্যবস্থা করতে হবে। কারণ শুধু কোটি কোটি টাকা ব্যয় এর মাধ্যমে বনশিল্প উন্নয়ন সম্ভব নয়। বনজ সম্পদ বৃদ্ধি করতে হলে একযোগে এই শিল্প উন্নয়ন, নিয়ন্ত্রণ ও সংরক্ষণের সুবন্দোবস্ত করতে হবে তবেই কালে এই বন-বনানী আমাদের অমূল্য জাতীয় সম্পদ রূপে পরিগণিত হতে পারে।

কালেক্টেড অ্যান্ড ইউনিকোডেড বাই- সংগ্রামের নোটবুক

পত্রিকার মূল কপি পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!