আলতাফ হােসেন
আলতাফ হােসেন ১৯২৩ সালের ১ মার্চ ভারতের মুর্শিদাবাদ জেলার কান্দিতে জন্ম নেন। আলতাফ ১৯৪৭ সালে বহরমপুর কলেজ থেকে ডিসটিংশনসহ বি, এসসি, পাস করেন। দেশভাগের পর তিনি ঢাকা প্রকৌশল কলেজে ভর্তি হন এবং ১৯৫১ সালে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে বি, এসসি, ডিগ্রি নেন। ওই বছরই তিনি পাকিস্তান সরকারের সেচ বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী হিসাবে যােগ দেন। ১৯৫৩ সালে। তাকে নিয়ােগ দেওয়া হয় কর্ণফুলি হাইড্রোইলেকট্রিক প্রজেক্টে। ১৯৫৯ সালে আলতাফ ওয়াপদা বিভাগের ডেপুটি ডিরেক্টর পদে উন্নীত হন। এরপর ১৯৬৯ সালে। উচ্চতর প্রশিক্ষণের জন্য তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া যান। ১৯৭০ সালে তিনি ওয়াপদা বিভাগের বন্যা নিয়ন্ত্রণ শাখার ডিরেক্টর পদে উন্নীত হন। শেষজীবনে তিনি ওয়াপদা পানি উন্নয়ন বিভাগের অধীনে সিলেট সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হিসাবে কর্মরত ছিলেন।
আলতাফ হােসেন বাগান করতে ভালােবাসতেন। বিশেষত তিনি ছিলেন একজন গােলাপ-প্রেমিক। এছড়া তিনি সেচ ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত বিষয়ের উপর। পড়াশােনা করতেন। ১৯৭১ সালের ৫ এপ্রিল আলতাফ হােসেন পাক হানাদার বাহিনীর হাতে নিহত হন। পাকসেনারা তাকে লক্ষ্য করে পর পর তিনটি গুলি ছোড়ে। তিনটি গুলিই তাঁর বুকে লাগে। তিনি তৎক্ষণাৎ মারা যান। শহীদ আলতাফ হােসেনের স্ত্রীর নাম নাজমা বেগম। তাদের সংসারে তিন ছেলে ও তিন মেয়ে ছিল।
আলতাফ হােসেন ইজারাদার
আলতাফ হােসেন ইজারাদার ছিলেন একজন মঞ্চ অভিনেতা। এছাড়া তিনি। সমাজসেবামূলক নানা কাজেও জড়িত ছিলেন। তাঁর বাড়ি বাগেরহাট জেলার পােড়িখালি গ্রামে, বাবার নাম হাবিবর রহমান ইজারাদার । তার জীবন ও মৃত্যু সম্পর্কে আর কোনাে তথ্য পাওয়া যায়নি।
আলমগীর
ক্যাপ্টেন আলমগীর নামেই তিনি পরিচিত ছিলেন। তার পুরাে নাম আৰু তারেক মােহাম্মদ আলমগীর। বাবার নাম মােহাম্মদ শাহজাহান। আলমগীরের জন্ম হয়েছিল। ঢাকার ২ নম্বর জিন্দাবাহার লেনের নিজেদের বাড়িতে। আলমগীর ঢাকার নটরডেম কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে ইন্টারমিডিয়েট পাস করে পাকিস্তান বিমানবাহিনীতে যােগ দেন। নিহত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সে (পি. আই, এ.) পাইলট হিসাবে কর্মরত ছিলেন। ‘পূর্ব পাকিস্তান পাইলট অ্যাসােসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা হিসাবে তাকে ধরা হয়। ১৯৬৯-‘৭১ সাল পর্যন্ত পূর্ব পাকিস্তান পাইলট অ্যাসােসিয়েশনের মুখপাত্র “বিহঙ্গবার্তাপত্রিকার সম্পাদক ছিলেন আলমগীর। ১৯৭১ সালে পি. আই. এ.’তে মার্চের অসহযােগ আন্দোলনের অন্যতম নেতা এবং পূর্ব পাকিস্তান পাইলট অ্যাসােসিয়েশন ও বিভিন্ন ট্রেড ইউনিয়নের অন্যতম সমন্বয়কারী ছিলেন আলমগীর। স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হলে আলমগীর তার সহকর্মীদের যুদ্ধে যেতে উদ্বুব্ধ করেন। নিজে যুদ্ধে যাওয়ার আগেই ২১ এপ্রিল তারিখে তৎকালীন পি. আই. এ. অফিস থেকে তাকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর থেকে তার আর কোনাে খোঁজ পাওয়া যায়নি। আলমগীর ১৯৬৭ সালে বিয়ে করেন। তার এক মেয়ে ও এক ছেলে ছিল।
আশরাফ-উল ইসলাম ভুইয়া
আশরাফ-উল ইসলাম ভুইয়ার জন্ম ১৯৩১ সালের ১৪ মার্চ, গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণবাগ গ্রামে। পাঁচ ভাই ও দুই বােনের মধ্যে আশরাফ ছিলেন দ্বিতীয়। তার পারিবারিক নাম ‘এ. বি. এম. আশরাফ-উল ইসলাম ভুইয়া। প্রখ্যাত সাংবাদিক ও সাহিত্যিক আবু জাফর শামসুদ্দীন ছিলেন তার চাচা। ছাত্র হিসাবে মেধাবী আশরাফ মামার বাড়িতে থেকে নরসিংদীর সাটীরপাড়া হাই স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন। এরপর তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যােগ দেন। কিন্তু সেনাবাহিনীর কড়াকড়ি তার ভালাে লাগেনি। তাই প্রশিক্ষণ শেষ না করেই তিনি ফিরে আসেন এবং জগন্নাথ কলেজ থেকে আই. এসসি. পাস করেন। এরপর তঙ্কালীন ভেটেরিনারি কলেজ (বর্তমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়) থেকে ভেটেরিনারি সায়েন্স ও অ্যানিমেল হাজবেন্ড্রি বিষয়ে স্নাতক পাস করেন আশরাফ। শিক্ষাজীবন শেষে তিনি নাটোরে (বর্তমান উত্তরা গণভবন) ভিলেজ এইড প্রােগ্রামে প্রশিক্ষক হিসাবে যােগ দেন। সেখান থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকারের বৃত্তি নিয়ে তিনি টেকসাস এ. অ্যান্ড এম, কলেজ থেকে মাস্টার্স ডিগ্রি পান। ১৯৬৪ সালে তিনি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে জেনারেল অ্যানিমেল সায়েন্স বিভাগে শিক্ষক হিসাবে যােগ দেন। ২৫ মার্চের পর আশরাফ পরিবারের সবাইকে নিয়ে গ্রামের বাড়ি চলে যান। এর কিছুদিন পর আশরাফ তার বড় ভাই এ. কে. এম. সাইফুল ইসলাম ভুইয়ার শহীদ হওয়ার খবর পান। এ খবর আশরাফকে বিচলিত করে তােলে। তারপর হঠাৎ একদিন তিনি কাউকে কিছু না বলে বাড়ি থেকে চলে আসেন। তাঁর মৃত্যু বা নিখোঁজ হওয়ার সঠিক তারিখ জানা যায়নি। অনুমান করা হয় যে তিনি ১৯৭১ সালের জুলাই বা আগস্ট মাসে নিখোঁজ হন এবং শহীদ হন। শহীদ আশরাফ-উল ইসলাম ভুইয়া বিবাহিত ছিলেন। তার এক ছেলে ও এক মেয়ে ছিল।
সূত্র : শহীদ বুদ্ধিজীবী কোষ- আলী মো. আবু নাঈম , ফাহিমা কানিজ লাভা