আমিনউদ্দিন
পাবনা জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য ও সম্পাদক মুহাম্মদ আমিনউদ্দিনের বাবার নাম হারুন-অর-রশীদ মােল্লা। আমিনউদ্দিনের জন্ম ১৯২১ সালে, নাটোর জেলার লালপুর থানার গৌরীপুর গ্রামে। তিনি ১৯৩৮ সালে জয়পুরহাট জেলার খঞ্জনপুর মিশন উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক, ১৯৪০ ও ১৯৪২ সালে রাজশাহী সরকারি কলেজ থেকে যথাক্রমে আই. এ. ও বি. এ. পাস করেন। বি. এ. পরীক্ষায় পাসের পর তিনি তৎকালীন অবিভক্ত বাংলায় কলকাতাতে বেঙ্গল সিভিল সাপ্লাই বিভাগে ইনসপেক্টর হিসাবে চাকরিতে যােগ দেন। আমিনউদ্দিন ১৯৫০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বি. এল. শেষ পর্ব পাস করেন। ইতােপূর্বে কলকাতায় চাকরি করার সময় তিনি বি. এল. প্রথম পর্ব শেষ করেছিলেন। বি. এল, শেষ করার পর তিনি চাকরিতে ইস্তফা দেন এবং আইন পেশায় হােসেন শহীদ সােহরাওয়ার্দীর সঙ্গে শিক্ষানবিশ হিসাবে কাজ করেন। ১৯৫২ সালে তিনি পাবনা জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য হন। আমিনউদ্দিন ১৯৫৩ সালে সরাসরি রাজনীতিতে অংশ নেন এবং আমৃত্যু আওয়ামী লীগের সদস্য হিসাবে বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৫৪-‘৫৫ সালে তিনি পাবনার জুবিলী হাই স্কুলের সম্পাদক হন। ১৯৭০ সালে তিনি পাবনা জেলা আইনজীবী সমিতির সম্পাদক নির্বাচিত হন এবং ওই সাল থেকেই পাবনা পৌরসভার ভাইস চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন।
আমিনউদ্দিন পাবনা আইন কলেজের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এবং আমৃত্যু ওই কলেজে অবৈতনিক প্রভাষকের দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীকালে তার নামে ওই কলেজটির নামকরণ করা হয়। তিনি পাবনা মহিলা কলেজ (বর্তমানে সরকারি)। ও তদানীন্তন ইসলামিয়া মহাবিদ্যালয়ের (বর্তমানে শহীদ বুলবুল সরকারি কলেজ) অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। ১৯৬১ সালে তিনি পাবনায় প্রথম নৈশ কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৬৭ সালে পাবনার ঐতিহাসিক ভুট্টা আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে আমিনউদ্দিন গ্রেফতার হন এবং নয় মাস নিরাপত্তা আইনে বন্দি ছিলেন। ১৯৭০ সালে পাবনার। ঈশ্বরদী আটঘরিয়া নির্বাচনী এলাকা থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসাবে আমিনউদ্দিন পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক আইনসভার সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭১ সালের মার্চ মাসে অসহযােগ আন্দোলনের সময় আমিনউদ্দিন পাবনা জেলা মুক্তি সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক ছিলেন। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ রাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী আমিনউদ্দিনকে ধরে নিয়ে। যায়। পাবনার শিল্প এলাকার একটি ছােট ঘরে আটকে রেখে তার ওপর অমানুষিক অত্যাচার চালানাে হয়। পাকবাহিনী ২৯ মার্চ আমিনউদ্দিনকে গুলি করে হত্যা করে। ৩০ মার্চ পাবনার আরিফপুর গােরস্তানে তাকে কবর দেওয়া হয়। ১৯৪৮ সালের ১৮ মার্চ আমিনউদ্দিন বিয়ে করেন। শহীদ হওয়ার সময় স্ত্রী, তিন ছেলে ও পাঁচ মেয়ে রেখে যান।
সূত্র : শহীদ বুদ্ধিজীবী কোষ- আলী মো. আবু নাঈম , ফাহিমা কানিজ লাভা