You dont have javascript enabled! Please enable it!
আবুল বাশার চৌধুরী
আবুল বাশার চৌধুরী সাংবাদিক মহলে ‘আবুল বাশার’ নামে পরিচিত ছিলেন। তাঁর জন্ম ১৯৪৬ সালে, টাঙ্গাইল শহরের আকুর টাকুর পাড়ায়। যদিও তাদের পৈতৃক নিবাস টাঙ্গাইল জেলার কালিহাতী উপজেলার বানকিনায়। তার বাবা আব্দুল গনি চৌধুরী ছিলেন পুলিশ কর্মকর্তা। তার মায়ের নাম শামছুন নাহার চৌধুরী। দুই ভাই ও পাঁচ বােনের মাঝে আবুল বাশার ছিলেন সবার বড়। আবুল বাশার টাঙ্গাইলের ঐতিহ্যবাহী বিন্দুবাসিনী স্কুল থেকে ১৯৬২ সালে ম্যাট্রিক পাস করে উচ্চতর পড়াশােনার জন্য করাচি যান। ১৯৬৮ সালে সাংবাদিকতার উপর উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে তিনি ঢাকা ফিরে আসেন এবং ১৯৬৮ সালে যােগ দেন ওই সময়ের ইংরেজি দৈনিক মর্নিং নিউজ পত্রিকায়। আবুল বাশার চৌধুরী ছিলেন হাসিখুশি প্রাণােচ্ছল তরুণ। পত্রিকা অফিস, প্রেসক্লাব কিংবা বিভিন্ন মহলে আবুল বাশারের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতাে। যে কোনাে অন্যায়ের বিরুদ্ধে সাথে সাথেই জোর গলায় প্রতিবাদ করে ওঠাই ছিল তার স্বভাব।  জানা যায়, আবুল বাশার ট্রেনিং না নিলেও মুক্তিযােদ্ধাদের বৈঠকে উপস্থিত থাকতেন, সহযােগিতা করতেন। তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু মুক্তিযােদ্ধা আজাদ ভারত থেকে ট্রেনিং নিয়ে ২৮ নং মগবাজারের বাসায় অবস্থান করছিলেন। সেখানে ‘ক্র্যাক প্লাটুন গেরিলা দলের কিছু সদস্যও থাকতেন। এই বাড়িটি অস্ত্র-গােলাবারুদ রাখা এবং গেরিলাদের আশ্রয়ের কাজে ব্যবহার করা হতাে।
ক্র্যাক প্লাটুনের সদস্যরা ঢাকায় হােটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল, মগবাজারে মুসলিম লীগ নেতা ও শান্তি কমিটির কর্মকর্তা এ. কিউ. এম. শফিকুল ইসলামের বাসাসহ বিভিন্ন জায়গায় গ্রেনেড হামলা চালায়। এতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী শঙ্কিত হয়ে ওঠে। তাদের গােয়েন্দা নজরদারিতে ঢাকার আরও কিছু বাড়ির সাথে মগবাজারের ২৮ নম্বর বাড়িটি সন্দেহের তালিকায় পড়ে যায়। ১৯৭১ সালের ২৯ আগস্ট গভীর রাতে খানসেনারা আচমকা হানা দেয় ওই বাড়িতে। হানাদার বাহিনী দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকে পড়ে। বাড়ি তল্লাশি চালিয়ে আজাদ, বাশার, বদি, গাজীসহ সবাইকে ধরে  নিয়ে যায়। এরপর বাশারের আর কোনাে খবর পাওয়া যায়নি। তবে ওইদিন আটক হওয়া গাজী মুক্তি পেয়েছিল। সংবাদপত্র মহল থেকে অনুরােধ করা হয়েছিল হানাদার বাহিনীর প্রধান রাও। ফরমান আলী ও মেজর মালিককে। কিন্তু তারা জানিয়ে দেয় যে সাংবাদিক বাশার। চৌধুরী সম্পর্কে কোনাে খবরই তারা জানে না। বাশারের বাবা পুলিশ অফিসার আব্দুল গনি চৌধুরী ও ছােট ভাই আব্দুস সালাম চৌধুরী বিভিন্ন মহলে ধরাধরি করে জানতে পেরেছিলেন, বাশার ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আটক রয়েছে। এই খবরের ভিত্তিতেই সবাই আশা করছিল আবুল বাশার চৌধুরী ফিরে আসবেন। কিন্তু তিনি আর ফিরে আসেননি। তার মৃত্যু কখন কোথায় হয়েছে, সে সম্পর্কেও কোনাে তথ্য। পাওয়া যায়নি।  মাত্র ২২ বছর বয়সে হানাদার বাহিনীর হাতে শহীদ হওয়া আবুল বাশার অবিবাহিত ছিলেন।

সূত্র : শহীদ বুদ্ধিজীবী কোষ-  আলী মো. আবু নাঈম , ফাহিমা কানিজ লাভা

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!