আবুল ফজল জীয়াউর রহমান
১৯২৬ সালের ২ ফেব্রুয়ারি নারায়ণগঞ্জের নওগা গ্রামে আবুল ফজল জীয়াউর রহমানের জন্ম। তাঁর বাবার নাম মােসলেউদ্দিন ভূইয়া, মায়ের নাম মাসুমা চৌধুরী। দুই ভাই, এক বােনের মধ্যে জীয়াউর ছিলেন সবার বড়। জীয়াউর শৈশবেই বাবাকে হারান।- ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এম. বি. বি. এস. পাস করার পর ১৯৪৯ সালে তিনি পাকিস্তান আর্মি মেডিকেল কোরে যােগ দেন। শুরুতে তার নিয়ােগ ছিল রংপুর সেনানিবাসে। ১৯৬৩ সালে পাকিস্তান আর্মিতে লেফটেন্যান্ট কর্নেল পদে উন্নীত হন জীয়াউর রহমান। ১৯৬৮ সালে তিনি সিলেট মেডিকেল কলেজে অধ্যক্ষ ও সুপারিনটেন্ডেন্ট নিযুক্ত হন। অধ্যক্ষ থাকাকালে বর্তমান সিলেট মেডিকেল কলেজের নতুন কলেজ ভবন, হাসপাতাল, ছাত্রাবাস, শিক্ষকদের বাসস্থান ইত্যাদির কাজ শুরু হয় এবং অধিকাংশ নির্মাণ কাজ তিনি সমাপ্তির পথে আনেন। তিনি ১৯৬৯ সালে চট্টগ্রাম বিভাগের ডিন অব দি ফ্যাকাল্টি অব মেডিসিন নিযুক্ত হন।
জীয়াউর রহমান ১৯৭০ সালে ১২ নভেম্বরের ঝড় ও জলােচ্ছাসে মেডিকেল বিভাগের ত্রাণকাজে প্রধান কর্মকর্তা ছিলেন এবং এই কাজের জন্যে ১৯৭১ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত নােয়াখালীর মাইজদীকোর্টে অবস্থান করেন। ১৯৭১ সালের ১ মার্চ নােয়াখালী থেকে তিনি সপরিবারে সিলেটে ফিরে যান। পাকিস্তানি শাসকদের নির্দেশে ১৫ মার্চ থেকে তাঁকে নিজের ঘরে বন্দি করে রাখা হয়। এই সময় বাইরে যােগাযােগহীনতার অভাবে তার পরিবারের সবাইকে অনেকদিন অনাহারে কাটাতে হয়। ১৪ এপ্রিল সকাল ৯টায় তার সরকারি বাসভবনের সামনে একজন লেফটেন্যান্টের নেতৃত্বে এক ট্রাক পাকিস্তানি সেনা ও একটি জিপ আসে। তিনি তখন কেবল গােসল করে বেরিয়েছেন। কয়েকদিন অনাহারে থাকার পর সেদিনই সকালে খাবার জন্য টেবিলে বসতে যাচ্ছিলেন তিনি। এ সময় তার পরনে ছিল পাজামা-পাঞ্জাবি। ওই অবস্থায়ই তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। তার পর থেকে জীয়াউর রহমানের আর কোনাে খোঁজ পাওয়া যায়নি। শহীদ লে. কর্নেল আবুল ফজল জীয়াউর রহমানের স্ত্রী ফেরদৌসী চৌধুরী ঢাকার বেগম বদরুন্নেসা কলেজের সহযােগী অধ্যাপক ছিলেন। তাঁদের সংসারে দুই ছেলে ও এক মেয়ে ছিল।
সূত্র : শহীদ বুদ্ধিজীবী কোষ- আলী মো. আবু নাঈম , ফাহিমা কানিজ লাভা