You dont have javascript enabled! Please enable it!

আবদুল জব্বার (বগুড়া)

আবদুল জব্বারের জন্ম ১৯২৬ সালে জয়পুরহাটের সদর উপজেলার চকবরকত ইউনিয়নের মল্লিকপুর গ্রামে। তার বাবার নাম মাে, সফের উদ্দীন মণ্ডল, মায়ের নাম জোবেদা খাতুন। তিন ভাইয়ের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার বড়। জব্বারের পড়াশােনা শুরু হয় গ্রামের পাঠশালাতে। পরে। তিনি বগুড়া জিলা স্কুলে ভর্তি হন ও সেখান থেকে ১৯৪৩ সালে ম্যাট্রিক পাস করেন। জব্বার রংপুর কারমাইকেল কলেজ থেকে আই, এসসি, ও ১৯৪৯ সালে রাজশাহী সরকারি কলেজ থেকে বি, এসসি. পাস করেন। পরে ১৯৫৩ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এল, এল, বি. পাস করেন। তিনি বগুড়া বারে যােগ দিয়ে আইন পেশার চর্চা শুরু করেন। আবদুল জব্বার মেধা ও যােগ্যতার গুণে অল্পদিনেই আইনজীবী হিসাবে। বগুড়াসহ উত্তরবঙ্গে খ্যাতি অর্জন করেন। একজন নির্ভরযােগ্য আইনজীবী হিসাবে তার বাসায় মক্কেলদের ভিড় লেগেই থাকত। মানবিক গুণের জন্যও তাঁর সুনাম। ছিল। কারও শুকনাে মুখ দেখলেই বলতেন, “খাওয়া হয়নি বুঝি?” বলেই পকেট থেকে টাকা বের করে দিতেন। কত মানুষ যে তার কাছে কতভাবে উপকৃত হয়েছে তার হিসাব নেই।

জুনিয়র আইনজীবীদের কাছে তিনি এখনাে জব্বার ভাই’। আবদুল জব্বার ছিলেন কাজপাগল মানুষ। অকারণে কাজ ফেলে রাখা তিনি কখনও পছন্দ করতেন না। সমাজসেবা ও খেলাধুলার প্রতিও ছিল তার যথেষ্ট আগ্রহ। বই কেনা ও পড়ার নেশাও ছিল তার মধ্যে প্রবল। আবদুল জব্বার সাংবাদিকতার সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে জব্বার গ্রামের বাড়ি মল্লিকপুর চলে যান। এপ্রিলের মাঝামাঝি পাকিস্তান সেনাবাহিনী বগুড়া ও জয়পুরহাটে তাদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে। কয়েক দিনের মধ্যেই পাকিস্তান সমর্থক বাঙালিদের নিয়ে গঠিত হয় শান্তি কমিটি। তাদের প্ররােচনায় ১৬ মে সকালে পাকিস্তান সেনাবাহিনী মল্লিকপুর গ্রামে হানা দেয়। পাকসেনাদের উপস্থিতি টের পেয়ে ওই গ্রামের লােকজন যে যেভাবে পারেন পালিয়ে যেতে থাকেন। আবদুল জব্বার তার মাকে সঙ্গে নিয়ে আত্মগােপনের উদ্দেশ্যে বাড়ির পেছন দিক দিয়ে বের হওয়া মাত্র সেনাদের সামনে পড়ে যান। সেনারা তাদের ঘিরে ফেলে। একজন সেনা উর্দুতে তার নাম-পরিচয় জানতে চায়। তিনি অকপটে তার নাম বলেন। আরও বলেন, আমি জজকোর্টে ওকালতি করি এবং আওয়ামী লীগের একজন কর্মী।

আবদুল জব্বার এ কথা বলামাত্র সেনারা তাকে আটক করে। কিছুক্ষণ পর মায়ের সামনেই শুরু হয় তার ওপর নির্যাতন। এ সময় তাঁর বৃদ্ধা মা সেনাদের কাছে অনেক আকুতি-মিনতি করেন। কিন্তু এতে সেনাদের মন গলেনি। পরে তাঁকে দড়ি দিয়ে জিপের সঙ্গে বেঁধে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যায়। এরপর তাঁর আর খােজ পাওয়া যায়নি। শহীদ আবদুল জব্বারের স্ত্রীর নাম মােকসেদা বেগম। স্বাধীনতার পর তিনি শিক্ষকতা করতেন। ২০১২ সালে মারা গেছেন। তাদের সংসারে দুই ছেলে ও এক মেয়ে ছিল। বড় ছেলে মাে. শাফিন জব্বার বি, সি, এস, স্বাস্থ্য ক্যাডারের কর্মকর্তা। ছােট ছেলে শাফিয়ী বিল্লাহ জব্বার সাংবাদিকতা পেশায় যুক্ত। মেয়ে তাহিরা সালােয়া জব্বার। স্বাধীনতার পর বগুড়া জেলা আদালতের সামনের সড়কের নাম ‘শহীদ আবদুল জব্বার সড়ক” করা হয়েছে। পরে তাঁর নামে একটি ক্লাব ও পাঠাগার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এ ছাড়া মল্লিকপুর গ্রামে তার নামে ক্লাব ও পাঠাগার এবং নওগাঁ জেলার ধামইরহাট উপজেলার মঙ্গলবাড়িতে পারিবারিক উদ্যোগে তাঁর নামে মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় রয়েছে।

সূত্র : শহীদ বুদ্ধিজীবী কোষ-  আলী মো. আবু নাঈম , ফাহিমা কানিজ লাভা

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!